Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

‘ভাঙা ঘরে চাঁদের আলো’ ছাত্র সংসদ কক্ষ

বৃষ্টি হলে ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে ক্লাসরুমের ভিতরে। মেঘলা দিনে টিমটিম করে আলো জ্বলে। বেহাল অবস্থা কম্পিউটার রুমেরও। ক্যাম্পাসের মধ্যেই পরিত্যক্ত ঘরে জমে থাকে আবর্জনা। শৌচালয়ের দুর্গন্ধেও টেকা দায়।

ছাত্র সংসদের সেই ঝাঁ চকচকে ঘর। (ডান দিকে) বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের বেহাল দশা। — নিজস্ব চিত্র

ছাত্র সংসদের সেই ঝাঁ চকচকে ঘর। (ডান দিকে) বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের বেহাল দশা। — নিজস্ব চিত্র

সুপ্রিয় তরফদার ও মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৬ ০০:২৭
Share: Save:

বৃষ্টি হলে ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে ক্লাসরুমের ভিতরে। মেঘলা দিনে টিমটিম করে আলো জ্বলে। বেহাল অবস্থা কম্পিউটার রুমেরও। ক্যাম্পাসের মধ্যেই পরিত্যক্ত ঘরে জমে থাকে আবর্জনা। শৌচালয়ের দুর্গন্ধেও টেকা দায়। অধিকাংশ সময়েই জল জমে থাকে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ও কাঁটাকল ক্যাম্পাসের আনাচ-কানাচে ঘুরলে এমন আরও নানা অব্যবস্থার ছবিই উঠে আসে। এই অবস্থায় ঝাঁ চকচকে আসবাব ও অন্দরসজ্জায় সেজে উঠেছে ছাত্র সংসদের ঘর এবং অ্যান্টি চেম্বার। পাশাপাশি, তিন-তিনটি এসি মেশিন, নতুন সোফায় সেজেছে রেজিস্ট্রারের ঘরও। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, সেই ঘরটি সাজিয়ে রাখা জরুরি। কারণ রেজিস্ট্রারের ঘরে বহু বিদেশি প্রতিনিধি আসেন। কিন্তু অন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ অসুবিধার দিকে নজর না দিয়ে কেন ছাত্র সংসদের ঘর সাজানোর এত তৎপরতা, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে। কর্তৃপক্ষের তরফে তার অবশ্য কোনও সদুত্তর মেলেনি।

পড়ুয়াদের প্রয়োজনীয় ন্যূনতম পরিকাঠামোর উন্নয়নে কোনও নজর না দিয়ে, এ ভাবে অর্থ ব্যয় হওয়ায় ক্ষুব্ধ ছাত্র-শিক্ষক-কর্মীদের অনেকেই। শিক্ষক-ছাত্রদের অনেকেরই বক্তব্য, ক্লাসঘর-বারান্দা বা অন্যান্য জায়গার যা পরিবেশ, বিদেশি প্রতিনিধিরা এলে সে দিকেও তো চোখ যেতে পারে তাঁদের। পড়ুয়াদের অভিযোগ, দারভাঙা ভবনের শৌচালয়ে বেশির ভাগ সময়েই জল জমে থাকে। নোংরা আবর্জনায় পা ফেলাই দায়। এক ছাত্রী বলেন, ‘‘ছাত্রীদের শৌচাগার নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। ফলে ওই শৌচাগার ব্যবহার করলে সংক্রমণের ভয় থাকে।’’ অনেক ছাত্রীই পয়সা খরচ করে বাইরের সুলভ শৌচালয় ব্যবহার করেন। লাইব্রেরি সায়েন্সের এক পড়ুয়ার অভিযোগ, ক্যান্টিনে ভালো মানের খাবারও বিশেষ মেলে না। তা সত্ত্বেও ক্যান্টিনের মান উন্নয়ন করা হচ্ছে না। উল্টে ক্যান্টিনের একাংশও ছাত্র সংসদের ঘরের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে! শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের একাংশ বলছেন, সহকারী রেজিস্ট্রারের ঘর এতটাই ঘুপচি যে এক সঙ্গে দু’জন ভিতরে ঢুকতে পারেন না। সিন্ডিকেট ঘরেও আলো কম। বাইরে বারান্দায় ডাঁই হয়ে পড়ে থাকে বিকল এসি মেশিন, ভাঙাচোরা আসবাব। ঘুপচি ক্যাশ কাউন্টারের সামনেও পরিবেশ নোংরা হয়ে থাকে। আশুতোষ ভবনের চারতলায় বাণিজ্য বিভাগের ক্লাসরুমের বেহাল দশা। আলোও পর্যাপ্ত নেই। শিক্ষকদের আলাদা ক্যান্টিন নেই। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সামনে সেই সব দৃশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মান বাড়াচ্ছে কি, প্রশ্ন ছাত্র-শিক্ষকদের।

‘‘রেজিস্ট্রারের ঘর সাজানো-গোছানো হোক অসুবিধা নেই। কিন্তু বাকি পরিষেবাগুলিও তো দিতে হবে,’’ বলছেন এক অধ্যাপক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন কুটা-র সাধারণ সম্পাদক দিব্যেন্দু পালের দাবি, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনার জায়গা। তাই এর সার্বিক উন্নয়ন করা হোক।’’

এ প্রসঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘উপাচার্য সুগত মারজিত দায়িত্ব নিয়েই ‘ক্লিন ক্যাম্পাস কমিটি’ নামের একটি কমিটি গঠন করেছেন। তাঁরা বিভিন্ন ক্যাম্পাস সার্ভে করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছেন। আশা করছি দ্রুত সমস্যা মিটবে।’’ তাঁর ঘর সাজানোর বিষয়ে রেজিস্ট্রারের মন্তব্য, ‘‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

calcutta university special story
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE