Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

পুলে মৃত্যুতে ভুল কাদের, চাপান-উতোর

কলেজ স্কোয়ার কলকাতা পুরসভার ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে। স্থানীয় কাউন্সিলর, তৃণমূলের স্বপ্না দাস। এই দুর্ঘটনার জন্য সংশ্লিষ্ট ক্লাবকেই দায়ী করতে চান তিনি।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৭ ০৬:১০
Share: Save:

প্রবীণ সাঁতারু কাজল দত্তের মৃত্যুকে ঘিরে শনিবার দিনভর চলেছে নানা চাপানউতোর। তাঁর পরিবারের সদস্যদের একাংশ এ বিষয়ে স্থানীয় শৈলেন্দ্র মেমোরিয়াল ক্লাবকে দায়ী করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, ক্লাব যথাযথ নিয়ম মানলে এই পরিণতি হত না। অন্য দিকে, ক্লাবের তরফে এ ব্যাপারে পুরসভাকে দায়ী করা হয়েছে। ক্লাবকর্তাদের দাবি, তাঁদের অনুরোধ না মেনে পুরসভা পুলে জল ছাড়ার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

এ দিন কলেজ স্কোয়ারে গিয়ে জানা গেল, সেখানে একাধিক ক্লাব নিজেদের মতো করে পুল তৈরি করে নিতেই অভ্যস্ত। এমনই একটি শৈলেন্দ্র মেমোরিয়াল ক্লাব। তাদের পুলে নেমেই মৃত্যু হয়েছে কাজলবাবুর। ওই ক্লাব মাস কয়েক আগেই
বাড়তি কাঠামো বানিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। সুইমিং পুলটি কলকাতা পুরসভার। একাধিক ক্লাব সেখানে সাঁতার শেখায়। তাই কোন ক্লাব জলের তলায় কোথায় নতুন কাঠামো তৈরি করছে, তা পুর প্রশাসনের
নজরে থাকা উচিত ছিল বলে মনে করছেন অনেকেই। এ ক্ষেত্রে তা হয়েছে কি?

কলেজ স্কোয়ার কলকাতা পুরসভার ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে। স্থানীয় কাউন্সিলর, তৃণমূলের স্বপ্না দাস। এই দুর্ঘটনার জন্য সংশ্লিষ্ট ক্লাবকেই দায়ী করতে চান তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘যে ক্লাব কংক্রিটের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে, তারা বর্তমানে
সাঁতারের প্রশিক্ষণ দেয় না। ক্লাবের কর্তারা জানিয়েছিলেন, জল ভরে যাওয়ার আগেই তাঁরা কাঠের তক্তা, পাটাতন সরিয়ে নেবেন। সেই পাটাতন যে সরানো হয়নি, তা আমাকে জানানো হয়নি।’’

কিন্তু পুরসভার নথি থেকে জানা গিয়েছে, গত ২৭ ডিসেম্বর কাঠামো তৈরির অনুমতি চেয়ে ক্লাবের পক্ষ থেকে মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারকে লেখা চিঠিতে স্থানীয় কাউন্সিলর স্বপ্না দাস সুপারিশ করেছেন, ‘ক্লাবটি ভাল। ওদের বিষয়টা বিবেচনা করা হোক।’ ক্লাবের এক কর্তার কথায়, ‘‘যা করা হয়েছে, সবই কাউন্সিলরের নির্দেশ মোতাবেক।’’ পুরসভা সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট ক্লাবটি নতুন কাঠামো গড়ার জন্য ২০০২ সালে এক বার আবেদন করেছিল। তা অনুমোদন করা হয়। ফের ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে আরও একটি কাঠামো করার আবেদন জানানো হয় পুরসভার কাছে। মেয়র পারিষদ (পার্ক ও উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘আবেদন করলেও অনুমতি দেওয়া হয়নি। তা সত্ত্বেও ওরা কংক্রিটের কাঠামো তৈরি করে ফেলল কী ভাবে?’’

কিন্তু সেটা দেখার কথা তো পুরসভার? তাদের নজর এড়িয়ে শহরের এমন ব্যস্ত এলাকায় কী ভাবে এটা হতে পারল? এ বিষয়ে দেবাশিসবাবুর বক্তব্য, ‘‘শহরে ৭০০-রও বেশি পার্ক রয়েছে। সবগুলির ওপরে কি সমান নজর রাখা
সম্ভব? কে, কোথায় গোপনে কী করছে তা সঙ্গে সঙ্গে টের পাওয়া কঠিন।
তা ছাড়া এখানে জলের নীচে কাজ হয়েছে। যা নজরে পড়া সহজ নয়।’’ তবে ওই পুলের পাশেই কাউন্সিলরের অফিস থাকা সত্ত্বেও কেন ওই বেআইনি কাজ হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পুর মহলেই।

ক্লাবের একাধিক সদস্যের কথায়, কাউন্সিলরের নির্দেশেই কাঠামো তৈরি করা হয়। শুধু তা-ই নয়, গত ১১ মার্চ ওই পুলে জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়। ১০ মার্চ ক্লাবের পক্ষ থেকে জল সরবরাহ দফতরের ডিজি, পার্ক ও উদ্যান দফতরের ডিজি এবং স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছেও চিঠি দিয়ে জানানো হয়, অন্তত আরও ১০ দিন পরে পুলে জল ভরা হোক। কিন্তু তা হয়নি। ওই ক্লাবের এক কর্তার দাবি, তক্তা, পাটাতন খোলার আগেই সুইমিং পুলে জল ঢালা শুরু হয়। তার পরিণতি যে এতটা মর্মান্তিক হতে পারে, তা তাঁরা ভাবেননি।

এ দিন কলেজ স্কোয়ারে সমস্ত ক্লাবের সাঁতার প্রশিক্ষণ বন্ধ ছিল। দিনভর বিভিন্ন ক্লাবের সাঁতারুরা এসে কাজলবাবুর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে গিয়েছেন। সোমবার সেখানে একটি সাঁতার প্রতিযোগিতা রয়েছে। সেটি আদৌ হবে কি না তা স্থির করতে আজ, রবিবার বৈঠকে বসবেন বিভিন্ন ক্লাবের কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE