Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

যাদবপুরের ছাত্রাবাসে উদ্ধার পড়ুয়ার দেহ

শনিবার বিকেলেও ছেলেটিকে হেডফোন কানে দিয়ে হস্টেলে ঘুরতে দেখেছিলেন বন্ধুরা। রবিবার বেলা ১১টা নাগাদ ওই পড়ুয়ারই ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ছাত্রাবাসের বি ব্লকের তিনতলায় একটি ঘর থেকে।

সৌমিত্র দে

সৌমিত্র দে

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:২৩
Share: Save:

শনিবার বিকেলেও ছেলেটিকে হেডফোন কানে দিয়ে হস্টেলে ঘুরতে দেখেছিলেন বন্ধুরা। রবিবার বেলা ১১টা নাগাদ ওই পড়ুয়ারই ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ছাত্রাবাসের বি ব্লকের তিনতলায় একটি ঘর থেকে। তখনও তাঁর কানে গোঁজা সেই হেডফোন। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম সৌমিত্র দে (২২)। বাড়ি বাঁকুড়ার জয়পুরে। সৌমিত্র যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের স্নাতকোত্তরে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ।

সৌমিত্র আত্মঘাতী হয়েছেন নাকি তাঁকে হত্যা করা হয়েছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত নয় পুলিশ। ঘটনাস্থলে সুইসাইড নোটও মেলেনি। মৃত পড়ুয়ার অভিভাবকদের দাবি, সৌমিত্রকে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে। যাদবপুর থানায় অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করেছে পুলিশ।

বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ সূত্রে খবর, ২০১৪-এ সৌমিত্র যাদবপুরে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন। শুক্রবার তাঁর ‘ইন্ডিয়ান মেটাফিলোজফি’-র পরীক্ষা ছিল। সৌমিত্র বন্ধুদের বলেছিলেন, পরীক্ষা ভাল হয়েছে। পুলিশের জেরায় ওই ছাত্রের বন্ধুরা জানান, শনিবার বিকেলের পর থেকে হঠাৎই নিজেকে ঘরবন্দি করে ফেলেন সৌমিত্র। রাতে খেতে যাওয়ার সময়ে বন্ধুরা ডাকলেও সাড়া দেননি। রবিবার সকালে তাঁর সাড়া না পেয়ে বন্ধুরা ঘরের দরজা ভেঙে দেখেন, সিলিংয়ের সঙ্গে গামছায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলছে সৌমিত্রের দেহ। ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। দেহ উদ্ধার করে বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস, রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ। হস্টেল কর্তৃপক্ষ ও হস্টেলের অন্য ছাত্রদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। পরে উপাচার্য বলেন, ‘‘খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ওঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।’’ হস্টেল সুপার তপন জানা বলেন, ‘‘সৌমিত্রের রুমমেটের পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ায় বাড়ি গিয়েছে। রাতে অনেক ছাত্রই খেতে নামে না। তাই সন্দেহ হয়নি।’’ তাঁর দাবি, এ দিন সকালে তাঁর উপস্থিতিতেই ওই ছাত্রের ঘরের দরজা ভাঙা হয়েছিল।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ সব তথ্য মানতে নারাজ সৌমিত্রর বাবা লক্ষ্মণ দে ও দাদা শ্রীমন্ত দে। শ্রীমন্ত বলেন, ‘‘শনিবারও ভাই মা-বাবার সঙ্গে ভাল ভাবেই কথা বলেছে। ওর মানসিক অবসাদও ছিল না। তা হলে হঠাৎ করে সুইসাইড করতে যাবে কেন? ওকে পরিকল্পনা করেই খুন করা হয়েছে।’’

এ দিন বাঁকুড়ার জয়পুরে নিজের বাড়িতে কাঁদতে কাঁদতে সৌমিত্রের মা চন্দনাদেবী বলেন, ‘‘ছেলে শনিবার রাতেও ফোন করেছিল। বলেছিল, পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরবে। সমস্যার কথা তো বলেনি। এ কী করে হল!’’ বাঁকুড়ায় সৌমিত্রের পড়শিরা জানান, এই ছাত্রের বাবা লক্ষ্মণবাবু পেশায় কৃষক। সৌমিত্র বরাবরই পড়াশোনায় ভাল। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ভাল ফল করেছিলেন। বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরে স্নাতকে দর্শন নিয়ে পড়াশোনা করেন।

সৌমিত্রের এক সময়কার সহপাঠী স্বর্ণেন্দু কুণ্ডু বলেন, ‘‘স্কুলে বরাবরই সৌমিত্র ফার্স্ট হয়ে এসেছে। মিশুকে ছিল। কলকাতায় গেলে ওর সঙ্গে মাঝেমধ্যেই দেখা হত।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ক’দিন আগেও ওর সঙ্গে দেখা হয়। অনেক কথাই হয়েছিল। কোনও সমস্যার কথা বলেনি। কী যে হল!’’ গ্রামবাসীদের আক্ষেপ, যে ছেলে এক দিন গ্রামে মাথা উঁচু করে ফিরবে বলে তাঁরা আশা করেছিলেন, এখন সেই ছেলের দেহ আসার অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Student’s dead body Jadavpur’s hostel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE