জান্নাতুন ফিরদৌসি
অস্ত্রোপচার করে জান্নাতুন ফিরদৌসিকে স্বাভাবিক জীবনে আর ফেরানো যাবে না। ফিজিওথেরাপি করে যতটা সুস্থ করে তোলা যায়, তারই চেষ্টা করা হবে। এসএসকেএম হাসপাতালের তরফে এ কথা জানানোর পরেই মঙ্গলবার সাধারণ মহিলা ওয়ার্ড থেকে ফিজিওথেরাপি বিভাগের কেবিনে স্থানান্তরিত করা হয়েছে জান্নাতুনকে।
আলিপুরদুয়ার জেলার মাদারিহাট ব্লকের মধ্য রাঙালিবাজনা গ্রামের বাসিন্দা জান্নাতুন। ২০১৫-র জুলাই। তখন নবম শ্রেণির জান্নাতুনদের মাদ্রাসায় সরকারের তরফে পড়ুয়াদের শারীরিক পরীক্ষা চলছিল। সেখানে হৃৎপিণ্ডের সমস্যা ধরা পড়ার পরে জান্নাতুনকে নিয়ে যাওয়া হয় শিলিগুড়ির চ্যাং হাসপাতালে। হাসপাতালের তরফে বলা হয়, হৃৎপিণ্ডের অস্ত্রোপচার করতে হবে। বিপিএল তালিকাভূক্ত পরিবারের ১৬ বছরের কমবয়সী কারও হৃৎপিণ্ডে অস্ত্রোপচারের জন্য রাজ্য সরকারের ‘শিশুসাথী’ প্রকল্প রয়েছে। জান্নাতুনের বাবা, বিপিএল তালিকাভূক্ত আমজাদ আলিও সেই প্রকল্পে সাহায্য পান।
কিন্তু ওই বছরের ২৭ জুলাই অস্ত্রোপচারের পরেই কোমায় চলে যায় জান্নাতুন। আমজাদ জানান, প্রথম দু’মাস জ্ঞানই ফেরেনি তাঁর মেয়ের। জানা যায়, জান্নাতুনের মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোমরের নীচ থেকে অসাড় হয়ে যাওয়ার কারণে এবং অসংলগ্ন কথা বলতে থাকায়, বাড়ি নিয়ে গেলেও রাখা যায়নি জান্নাতুনকে। পরের দিনই ফিরিয়ে আনা হয় হাসপাতালে। অভিযোগ, তার পর থেকে কার্যত ও ভাবেই হাসপাতালে ছিল সে।
জান্নাতুনকে সুস্থ করে তুলতে এবং সঠিক চিকিৎসা পাওয়ার জন্য আমজাদ আলির হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন দার্জিলিং জেলা লিগাল এইড ফোরামের সম্পাদক অমিত সরকার। দীর্ঘ আড়াই বছর চলে সেই লড়াই। এখন জান্নাতুনের বয়স প্রায় ১৮। অবশেষে আদালতের নির্দেশে, মহিলা ও শিশু কমিশনের চাপে জান্নাতুনকে দেখতে শিলিগুড়ি যান এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসক দল। তাঁরা জানান, হৃৎপিণ্ডের অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে জান্নাতুনের মস্তিষ্কে ক্ষতি হয়েছে। কলকাতায় এনে আরও পরীক্ষা করে প্রয়োজনে মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচার করতে হবে। সেই মতো গত ৫ জানুয়ারি এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে। সঙ্গে ছিল তার বাবা আমজাদ।
এসএসকেএম হাসপাতাল সূত্রের খবর, জান্নাতুনের চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি হয়েছিল। সমস্ত পরীক্ষার পরে মেডিক্যাল বোর্ড জানিয়েছে, তার মস্তিষ্কে যে ক্ষতি হয়েছে, তা অস্ত্রোপচারে ঠিক হবে না। ভরসা ওষুধ এবং ফিজিওথেরাপি। এ দিকে আমজাদের অভিযোগ, ‘‘এখানের ওয়ার্ডে জান্নাতুনের দেখভাল ঠিক মতো হচ্ছিল না। চিকিৎসা যা হচ্ছে, তাতে সন্তুষ্ট নই।’’ এসএসকেএমের সুপারকে সোমবার লিখিত ভাবে এই অভিযোগও জানিয়েছেন আমজাদ।
সমস্যা হচ্ছিল মহিলা ওয়ার্ডে আমজাদের ঢোকা নিয়েও। তিনি বলেন, ‘‘স্ত্রী বাকি দুই সন্তানকে নিয়ে গ্রামে রয়েছে।’’ হাসপাতাল সূত্রের খবর, জান্নাতুন মহিলা ওয়ার্ডে থাকায়, সেখানে ঢুকে মেয়ের দেখভাল করা সম্ভব হচ্ছিল না আমজাদের। তাই পুলিশকে বলে, রোগীর পরিজনেদের থাকার জায়গায় তাঁর মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে, মঙ্গলবার জান্নাতুনকে কেবিনে সরিয়ে দেওয়ার পরে মেয়ের সঙ্গে থাকতে পারবেন তিনি।
লিগাল এইড-এর সম্পাদক অমিত সরকার মঙ্গলবার বলেন, ‘‘শিশুদের ভুল চিকিৎসা নিয়ে হাইকোর্টে মামলা চলছে। এসএসকেএম হাসপাতালের এই পর্যবেক্ষণ লিখিত ভাবে পেলে হাইকোর্টে তা জমা দেব। যে চিকিৎসক এবং হাসপাতালের গাফিলতিতে জান্নাতুনের এই অবস্থা, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy