প্রতীকী ছবি।
তিন জনের মৃত্যুর পরেও স্বাস্থ্য দফতর চুপ। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালেই গা ছাড়া ভাব। এরই সুযোগে রাজ্যে সোয়াইন ফ্লু-র চিকিৎসা নিয়ে শুরু হয়েছে ঘোরতর অব্যবস্থা। একাধিক বেসরকারি হাসপাতালে সোয়াইন ফ্লু রোগীকে অন্য রোগীদের সঙ্গেই রাখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যা থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ষোলো আনা।
সোমবার রাতেই বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে এমন একটি ঘটনাকে ঘিরে গোলমাল বেধেছিল। সেখানে মেল জেনারেল ওয়ার্ডে অন্য রোগীদের সঙ্গে ভর্তি ছিলেন সোয়াইন ফ্লু-র রোগীও। গত কয়েক দিন ধরে সোয়াইন ফ্লু-র উপসর্গ নিয়ে তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শনিবার রাতে পরীক্ষার রিপোর্টে সোয়াইন ফ্লু নিশ্চিত হয়। কিন্তু তার পরেও কর্তৃপক্ষ তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করার কোনও ব্যবস্থা করেননি বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত সোমবার রাতে অন্য রোগীর পরিজনেরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলে তাঁকে একটি পৃথক কেবিনে স্থানান্তরিত করা হয়।
যদিও এই মরশুমে এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দিন কয়েক আগেই বাইপাসের আরেক হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে গুরুতর অসুস্থ শিশুদের সঙ্গে রাখা হয়েছিল সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত একটি শিশুকেও। সাধারণভাবে যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের মধ্যেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ভয় বেশি। ওই শিশু ওয়ার্ডে গুরুতর শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি ছিল বেশ কয়েকটি শিশু। তাদের পরিবারের লোকেরা আপত্তি জানানোয় শেষ পর্যন্ত সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত শিশুটিকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা হয়।
চিকিৎসকদের মতে, সোয়াইন ফ্লু রোগী হাঁচলে বা কাশলে তা থেকে আশপাশের লোকজনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। ক্রিটিক্যাল কেয়ার চিকিৎসক সৌরেন পাঁজা বলেন, ‘‘ সোয়াইন ফ্লু ধরা পড়লে সেই রোগীকে সব সময় আলাদা রাখাই নিয়ম। তাঁদের ব্যবহার করা জিনিস অন্যদের ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। কারণ তাঁরা হাঁচলে-কাশলে তা যদি বিছানাতেও লাগে এবং সেই বিছানায় অন্য কেউ হাত দেন, তা হলে সেটাও যথেষ্ট ঝুঁকির। কারণ সেই হাত কেউ নিজের নাকে-মুখে দিলে তা থেকে সংক্রমণ ছড়াবে।’’
মাস কয়েক আগে মেটিয়াবুরুজের এক বাসিন্দা সোয়াইন ফ্লু-তে মারা যান। এর পরে গত সপ্তাহেই নদীয়ার কল্যাণীর বাসিন্দা ২৯ বছরের গৃহবধূ সীমা ঘোষ এবং তাহেরপুরের বাসিন্দা চার বছরের সোহম ঘোষের মৃত্যু হয় কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে।
স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে সোয়াইন ফ্লু আক্রান্তদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড রয়েছে। ৩০ শয্যার সেই ওয়ার্ডে একাধিক শয্যা খালি থাকলেও কেন বেসরকারি হাসপাতালগুলি সেখানে রোগী রেফার করছে না সে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। পাশাপাশি অভিযোগ করেছেন, নিয়ম অনুযায়ী এই ধরনের সংক্রামক রোগ নিয়ে কেউ ভর্তি হলে সেই সংক্রান্ত তথ্য স্বাস্থ্য ভবনকে জানানোর নিয়ম থাকলেও বেশির ভাগ হাসপাতালই তা জানাচ্ছে না।
প্রশ্ন হল, বেসরকারি হাসপাতালগুলি নিয়ম মানছে না তা জেনেও তাদের বিরুদ্ধে কেন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না স্বাস্থ্য দফতর? সোয়াইন ফ্লু এ বছর ফের ছড়াতে শুরু করেছে বুঝেও কেন সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগী হচ্ছে না তারা? স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন হাসপাতালকে সতর্ক করা হচ্ছে। তবে তাঁদের দাবি, প্রতি বছর যেমন ভাবে কিছু মানুষ সোয়াইন ফ্লু-তে আক্রান্ত হন, এ বারও তেমনটাই হচ্ছে। পরিস্থিতি তার চেয়ে বেশি উদ্বেগজনক কিছু নয়।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষের দাবি, কলকাতায় সোয়াইন ফ্লু তে আক্রান্তের সংখ্যা ৮। এর মধ্যে ৭ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এক জন এখনও হাসপাতালে ভর্তি। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, মাস দুয়েক আগে হায়দরাবাদে সোয়াইন ফ্লু ছড়াতেই সতর্ক হয় কলকাতা পুর প্রশাসনও। পাছে কলকাতায় সেই রোগের প্রকোপ না বাড়ে তার জন্য পুরসভার ১৬টি বরোর স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোতে সোয়াইন ফ্লু-এর ওষুধ মজুত রাখা হয়েছে।a
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy