Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

যাত্রীর সর্বস্ব লুঠ করাল ট্যাক্সিচালকই

যাত্রীদের সঙ্গে অভব্য আচরণ, গুন্ডামির অভিযোগ তো ছিলই। এ বার রিভলভার দেখিয়ে যাত্রীর সর্বস্ব লুঠ করল শহরের এক ট্যাক্সিচালক! শুক্রবার রাতে পাটুলির গ্রিন ভিউ এলাকার ঘটনা।

জখম অনুপম দাস। — নিজস্ব চিত্র।

জখম অনুপম দাস। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৫ ০১:৩০
Share: Save:

যাত্রীদের সঙ্গে অভব্য আচরণ, গুন্ডামির অভিযোগ তো ছিলই। এ বার রিভলভার দেখিয়ে যাত্রীর সর্বস্ব লুঠ করল শহরের এক ট্যাক্সিচালক! শুক্রবার রাতে পাটুলির গ্রিন ভিউ এলাকার ঘটনা। লুটেরার খপ্পরে পড়া যাত্রীর অভিযোগ, ট্যাক্সি থেকে নামার পরে পুলিশের দেখা পাননি তিনি। শনিবার সকালে থানায় অভিযোগ দায়ের করার পরে ৪৮ ঘণ্টা কাটলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

এই ঘটনায় যেমন রাতের শহরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তেমনই প্রশ্ন উঠেছে ট্যাক্সি পরিষেবার হাল নিয়েও। পুলিশের একাংশ বলছে, ক্যাব পরিষেবার ক্ষেত্রেও অপরাধের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু কোন যাত্রী কোন গাড়িতে উঠছেন, কে তা চালাচ্ছেন— সব তথ্য সংশ্লিষ্ট সংস্থায় থাকে। কিন্তু হলুদ ট্যাক্সির ক্ষেত্রে এই সব তথ্যের বালাই নেই। ফলে তদন্তে নেমে ধরপাকড়েও যথেষ্ট অসুবিধায় প়ড়তে হয় পুলিশকে।

ঠিক কী ঘটেছিল? পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাতে অনুপম দাস নামে এক ব্যক্তি অজয়নগরের কাছে বাইপাসের মোড় থেকে কেন্দুয়ায় ফেরার জন্য রাত বারোটা নাগাদ একটি শাট্ল ট্যাক্সিতে ওঠেন। তাতে দুই যুবক বসে ছিলেন। পিছনের সিটে দু’জনের মাঝে বসেন অনুপমবাবু। তাঁর অভিযোগ, কেন্দুয়া মেন রোডের কাছে এসেও গাড়ি থামায়নি চালক। দ্রুত নির্জন গ্রিন ভিউ এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয় গাড়িটি।

অনুপমবাবু পুলিশকে জানান, নির্জন এলাকায় গাড়ি দাঁড় করানোর পরে তাঁর বাঁ দিকে বসা যুবক গলায় ক্ষুর চেপে ধরে সব কিছু বার করে দিতে বলে। তিনি কিছু বলার আগেই ডান দিকের যুবক অনুপমবাবুর দু’টি মোবাইল, টাকা, ক্রেডি়ট ও ডেবিট কার্ড বার করে নেয়। ছিনিয়ে নেয় সোনার চেন ও আংটি। তার পরে গাড়ি থেকে নেমে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। গালে তখনও ক্ষুর ঠেকিয়ে রাখায় জড়োসড়ো হয়ে গিয়েছিলেন অনুপমবাবু। রিভলভার বার করে হুমকি দেয় ট্যাক্সিচালকও। ধাক্কা মেরে নামানোর সময়ে এক যুবক অনুপমবাবুর মাথায় ক্ষুর দিয়েও আঘাত করে। অনুপমবাবু জানান, গ্রিন ভিউ থেকে হেঁটে কেন্দুয়ায় ফেরার সময়ে কোনও টহলদার পুলিশের দেখা পাননি বলেও অভিযোগ।

পুলিশ জানায়, অভিযোগ মিলতেই সক্রিয় হয়েছেন তদন্তকারীরা। গোয়েন্দা বিভাগের ডাকাতি দমন শাখা অনুপমবাবুর সঙ্গে কথা বলেছে। দুষ্কৃতীদের স্কেচও আঁকানো হয়েছে। দেখা হচ্ছে বাইপাস এলাকার বিভিন্ন সিসিটিভির ফুটেজ। লালবাজারের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘শুক্রবার কেন পুলিশের দেখা মেলেনি, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ট্যাক্সিচালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন নয়। এ নিয়ে ট্যাক্সিমালিক ও চালক সংগঠনগুলির সঙ্গে কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। ট্যাক্সিচালকদের সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্যও সংগঠনগুলির কাছ থেকে মেলে না।

কী বলছেন সংগঠনের নেতারা? ট্যাক্সিচালকদের কোনও তথ্য যে তাঁদের হাতে থাকে না, স্বীকার করে নিয়েছে সব সংগঠনই। তাঁদের যুক্তি, গাড়িতে জিপিএস ব্যবস্থা এবং সংস্থার অধীনস্থ না থাকলে এই তথ্য ভাণ্ডার চালু করা সম্ভব নয়। আগের সব অপরাধের মতো এ বারও চালকের কড়া শাস্তি, লাইসেন্স বাতিলের দাবি তুলেছেন তাঁরা। বেঙ্গল ট্যাক্সিচালক সংগঠনের নেতা বিমল গুহ বলছেন, ‘‘পুলিশকে বারবার বলেছি, দোষী ট্যাক্সিচালকদের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। আজ পর্যন্ত তা হয়নি।’’ সিটুর ট্যাক্সিচালক সংগঠনের নেতা প্রমোদ ঝা আবার বলছেন, ‘‘এ রকম নোংরামো বরদাস্ত করা হবে না। কিছু চালকের জন্য সকলের বদনাম হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE