প্রতীকী ছবি।
হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আড্ডা দিচ্ছেন কলকাতার ২৫ টি সরকারি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকরা! তবে চাকরি বা আর্থিক দাবিদাওয়া নিয়ে নয়। স্কুল, পড়ুয়াদের শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়েই আলোচনায় ডুবে তাঁরা।
‘শিক্ষা-বৈঠক’ নামের ওই গ্রুপের আলোচনায় উঠে আসছে স্কুলের সিলেবাস, পড়ুয়াদের সমস্যা থেকে সহজে শিক্ষার উপকরণ তৈরির উপায়-সহ নানান বিষয় নিয়ে কথা। কলকাতার সর্বশিক্ষা মিশনের আওতায় থাকা ১৭টি ওয়ার্ডের ২৫টি স্কুলের শিক্ষক ছাড়াও জেলার সর্বশিক্ষা মিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক ও শিক্ষার অধিকার নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরাও রয়েছেন। উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতায় ছড়িয়ে থাকা স্কুলগুলির শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রায় নব্বই জন রয়েছেন গ্রুপে। কিন্তু এভাবে গ্রুপ তৈরির প্রয়োজন পড়ল কেন?
শিক্ষা বৈঠকের সদস্যদের দাবি, স্কুলে পড়াতে গিয়ে সিলেবাস, কম খরচে শিক্ষার বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করার (টিচিং-লার্নিং এড) থেকে শুরু করে পড়ুয়াদের বিভিন্ন সামাজিক সমস্যারও মুখে পড়তে হয়। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পক্ষে বিচ্ছিন্নভাবে সে সবের সমাধান খোঁজা অনেক সময়েই খুব কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়ায়। অনেকের সঙ্গে সমস্যার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলে দ্রুত সমাধানও খুঁজে পাওয়া সম্ভব। কিন্তু সারাদিন অনলাইন থাকতে হলেও তো সমস্যা!
শিক্ষা বৈঠকের এক সদস্য, গড়িয়াহাটের এক স্কুলের শিক্ষক শুচিব্রত গুপ্ত বলেন, “স্কুল চলার সময়ে খুব গুরুতর কিছু না হলে, সদস্যেরা কেউ কোনও পোস্ট করেন না। যা কিছু আলোচনা, সব হয় স্কুলের সময়ের পরে।”
সকাল-সন্ধের অনর্থক শুভেচ্ছা বিনিময় যেমন, তেমনই সমস্ত রকমের রাজনৈতিক আলোচনাও এই গ্রুপে পুরোপুরি নিষিদ্ধ। তবে সব সময়ে যে রামগরুড়ের ছানার মতো গাম্ভীর্য থাকে তা নয়। ছড়া, ছবি, সুকুমার রায় —সবই আছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। বছরে দু-তিনবার সদস্যরা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন। স্কুল চালানো নিয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময় ছাড়াও কর্মশালার আয়োজন হয়।
হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের অন্যতম সদস্য, ক্যালকাটা গার্লসের শিক্ষিকা জয়া পাণ্ডে বলেন, “পড়ুয়াদের পাঠ্যবিষয় বোঝাতে গিয়ে কোনও অসুবিধে হলে তারও সহজ সমাধান খোঁজার চেষ্টা হয়।”
সম্প্রতি শিক্ষকরা পড়ুয়াদের জন্য বাংলার হারিয়ে যাওয়া ছড়া খোঁজার কাজ শুরু করেন। গ্রুপের অন্যতম সদস্য আশিস রায় জানান, শিক্ষকরা শ’খানেক ছড়ার সংগ্রহ খুঁজে বার করেছেন।
শিক্ষার অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আধিকারিক চিত্তপ্রিয় সাধু বলেন, “প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষকদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগকে নিবিড় করার মাধ্যম খুঁজতেই গ্রুপ তৈরির ভাবনা।”
তিনি আরও জানান, শিক্ষকদের নিয়ে হেল্পলাইন গড়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। বাড়িতে পড়া তৈরি করতে গিয়ে সমস্যায় পড়লে কোনও পড়ুয়া ফোনে শিক্ষকদের সাহায্য পেতে পারে।
মাসখানেক আগে টালা ব্রিজের কাছে অগ্নিকাণ্ডে সর্বস্ব খোয়ানো মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মাধবী প্রামাণিককেও সাহায্য করেছে শিক্ষা বৈঠক। গ্রুপের সদস্যরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে তার জন্য বই-খাতা, টেস্ট পেপারের ব্যবস্থা করেন।
কলকাতা জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের চেয়ারম্যান কার্তিক মান্না বলেন, “বাছাই স্কুলগুলিকে মডেল স্কুল হিসেবে তুলে ধরতে এই অভিনব উদ্যোগ। অন্য স্কুলগুলিকেও ধাপে ধাপে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy