মহম্মদ আলি
তাকে ভর্তি করার জন্য সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে কলকাতার পাঁচটি হাসপাতালে বাবা-মাকে হন্যে হয়ে ছুটে বেড়াতে হয়েছিল। অভিযোগ, সকলেই জানিয়েছিল আইসিইউ নেই, তাই ভর্তি করলেও শিশুর অবস্থা খারাপ হলে দায় নেবে না হাসপাতাল। এই কথা শোনার পরে কোনও বাবা-মায়ের পক্ষেই সেখানে সন্তানকে ভর্তি করা সম্ভব নয়। ফলে অন্য হাসপাতালের দরজায় ধর্না দিতে হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত জায়গা মেলে এসএসকেএমের আইসিইউ-তে। ভেবেছিলেন, এ যাত্রায় হয়তো ফাঁড়া কেটে গেল। কিন্তু অসুস্থ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই মারা গেল ডেঙ্গি আক্রান্ত ছোট্ট ছেলে। প্রথম শ্রেণির ছাত্র, সাত বছরের মহম্মদ আলির মৃত্যুতে পাম অ্যাভিনিউ ও বাঁকড়ায় তার দুই বাড়ির পাড়াই শোকাচ্ছন্ন।
গত বৃহস্পতিবার থেকে জ্বর হয়েছিল বাঁকড়ার খাঁ পাড়ার বাসিন্দা মহম্মদ আলির। বাড়ির লোক জানালেন, ওই পাড়ায় অন্য এক জনের ডেঙ্গি হয়েছিল। তাই দেরি না করে আলির বাড়ির লোক এসএসকেএমের আউটডোরে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকেরা রক্ত পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন। শনিবার রিপোর্টে ডেঙ্গির প্রমাণ পাওয়া যায়। মৃত শিশুর বাবা শেখ আনোয়ার আলি বলেন, ‘‘তার পর থেকে আমরা ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য ঘুরতে শুরু করি। প্রথমে মেডিক্যাল কলেজ যাই। ওরা বলে, ছেলের আইসিইউ দরকার কিন্তু সেখানে জায়গা নেই। এর পরে একে একে তিনটি বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরে আইসিইউ পাইনি। চিত্তরঞ্জন শিশু সদনে জানায়, সারানোর জন্য একটি আইসিইউ বন্ধ রয়েছে। শেষ পর্যন্ত পিজি-তে জায়গা পাই।’’
হাসপাতাল সূত্রের খবর, অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও শিশুর অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। প্লেটলেট নামছিল হুহু করে। একের পর এক অঙ্গ কাজ করা বন্ধ করছিল। শেষে শনিবার ভোরে তার মৃত্যু হয়। ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা হয়েছে, ‘ডিসেমিনেটেড ইন্ট্রাভাস্কুলার কোয়াগুলেশন ইন আ কেস অব সিভিয়ার ডেঙ্গি।’ ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি হয়ে গেলেও ডেঙ্গির প্রকোপ ও আক্রান্তদের মৃত্যু না কমায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্তারা উদ্বিগ্ন। দু’দিন আগেই উত্তরপাড়ায় ২১ বছরের এক যুবক মারা গিয়েছেন। তার পরেই আবার এক শিশুর মৃত্যু হল। স্বাস্থ্যকর্তাদের চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে নতুন করে শুরু হওয়া নিম্নচাপের বৃষ্টি।
মৃত শিশুর বাবা আনোয়ার আলি পেশায় গাড়িচালক। কাজের সূত্রে পাম অ্যাভিনিউয়ে বড় ভাইয়ের বাড়িতে থাকেন তাঁরা। শনিবার বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, গোটা পাড়াই শোকে ডুবে আছে। প্রতিবেশীরা ভিড় করেছেন তাঁদের বাড়িতে। ছোট্ট ঘরে খাটের উপরে পাথরের মতো বসে রয়েছেন আনোয়ার আর তাঁর স্ত্রী সাইনা বেগম। আলি ছিল তাঁদের একমাত্র সন্তান। আনোয়ার কোনও রকমে বলেন, ‘‘আমার ছেলেটাই তো চলে গেল, কাউকে কিছু বলার নেই। শুধু চাইব হাসপাতালে একটা আইসিইউ-র জন্য আর কোনও রোগীকে যেন এতটা ঘুরতে না হয়।’’
স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাও জানিয়েছেন, আইসিইউ পাওয়া একটা বড় সমস্যা। প্রয়োজনের তুলনায় বেশ কম। তার উপরে সরকারি হাসপাতালে রোগীর চাপে সব সময়ে তা ভর্তি থাকে। ডেঙ্গির রোগী এলেও ভর্তি থাকা কাউকে তো আর আইসিইউ থেকে বার করে দেওয়া যায় না। তবে অনেক ক্ষেত্রে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করে অনেকে অপ্রয়োজনে আইসিইউ আটকে রাখেন। স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ স্বীকার করেছেন, সেই সমস্যা রয়েই গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy