Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আধপোড়া বই, এক আকাশ সাহস

চিৎপুরের টালা ব্রিজ লাগোয়া ১৯ প্রাণকৃষ্ণ রোডের বস্তির বাসিন্দা মাধবী বলছেন, ‘‘সব ঠিক হয়ে যাবে, ঠিক সামলে নেব।’’

মাধবী প্রামাণিক

মাধবী প্রামাণিক

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:২৯
Share: Save:

বই পুড়েছে, স্বপ্নগুলো নয়। পোড়েনি এত দিনের পরিশ্রমও।

বলছেন মাধবী প্রামাণিক, এ বছরের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। সোমবার রাতের হঠাৎ আগুনে পুড়ে গিয়েছে যাঁর ঘর। পুড়েছে প্রায় সব বই-খাতা-নোট। এ দিকে পরীক্ষার বাকি আর মাত্র দু’মাস।

এই অবস্থায় ভেঙে পড়াটাই হয়তো দস্তুর ছিল। দস্তুর ছিল হতাশা, কান্নাকাটি, চেয়েচিন্তে সাহায্য খোঁজা। কিন্তু চিৎপুরের টালা ব্রিজ লাগোয়া ১৯ প্রাণকৃষ্ণ রোডের বস্তির বাসিন্দা মাধবী বলছেন, ‘‘সব ঠিক হয়ে যাবে, ঠিক সামলে নেব।’’ বুধবার সকালেও পড়তে বসেছেন তিনি, কাজেও বেরিয়েছেন।

একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গিয়েছিল মাধবীর কাছে। জানতে চেয়েছিল, বই-খাতা বা অন্য কোনও সাহায্য দরকার কি না। পুষ্টিবিজ্ঞান ও পরিবেশবিজ্ঞানের দু’টো সহায়িকা বইয়ের নাম বলেছেন মাধবী। সঙ্গে ছ’টা খাতা। আর জানিয়েছেন, স্কুল ড্রেসটা পেলে খুব ভাল হয়। আজ, বৃহস্পতিবারই সে সব মাধবীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে সংগঠনটি। কিন্তু বহু অনুরোধেও ক’টা বই-খাতা আর স্কুলের পোশাক ছাড়া কিচ্ছু নিতে রাজি হননি মাধবী। ওই সংগঠনের বাদল জানা বলছিলেন, ‘‘সব পরীক্ষার্থীর শিরে সংক্রান্তি। সেখানে ওঁর মনের জোর দেখে অবাক হতে হয়!’’

লক্ষ্য এখন একটাই, উচ্চমাধ্যমিক পাশের পরে একটা চাকরি। ‘‘কিছু একটা করতে চাই। বাবা-মাকে অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়ে রাখব। আরও পড়তে চাই, কিন্তু পড়ার খরচটা নিজেই জোগাড় করতে চাই,’’ ছাইয়ের স্তূপের পাশে দাঁড়িয়ে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নগুলোর কথা বলে চলেন মাধবী। কিন্তু আগুনের ছোবলে কি আরও কঠিন হল সেই স্বপ্নের পথ?

মৃদুভাষী মাধবী বলেন, ‘‘বিপদ হতেই পারে। সামলেও উঠতে হয়।’’ জানালেন, আধপোড়া বইগুলো থেকে প্রয়োজনীয় পড়াটুকু করে নেওয়া যাবে। সব বই নতুন করে কেনা অপচয়। যতটুকু দরকার, ততটুকুই চাই। বেশি নিয়ে কী লাভ! পরীক্ষা তো এসে গেল, ভয় করছে না? উত্তর আসে, ‘‘বইখাতা জোগাড় করা যাবে। প্রস্তুতি তো মাথার ভিতরে আছে, সেটা কিন্তু পোড়েনি।’’

আত্মবিশ্বাস দেখে বোঝার উপায় নেই, কী বিপর্যয় ঘটে গিয়েছে ৪৮ ঘণ্টা আগে। বোঝার উপায় নেই, মাথার উপরের ছাদটুকুও হারিয়েছেন এই তুমুল শীতে। বরং নতুন শক্তি নিয়ে এক সদ্য-তরুণী ঘুরে দাঁড়িয়েছেন সামনের দিকে।

ফিনিক্স পাখির মতোই। ছাই থেকেই যার নবজন্ম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE