Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হাওড়া স্টেশনে তোলা চেয়ে হকারকে ‘মারধর’

হাওড়া স্টেশনের হকারদের থেকে তোলা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল আগেই। আবার এমন ঘটনায় অভিযোগের সত্যতায় কার্যত সিলমোহর পড়ল।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:২৬
Share: Save:

দাবি মতো ‘তোলার’ টাকা দিতে না চাওয়ায় হাওড়া স্টেশনের এক চা বিক্রেতাকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল স্থানীয় একদল দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে।

তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে মারধরের হাত থেকে রেহাই পেলেন না অন্য হকারেরাও। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার রাতে হাওড়া স্টেশনের জিআর রোড গোলাবাড়ি ট্র্যাফিক অফিসের পাশে।

আক্রান্ত হকারদের অভিযোগ, ওই দুষ্কৃতীরা এলাকার এক মহিলা তৃণমূল কাউন্সিলরের স্বামী সন্তোষ সাহানির দলের সঙ্গে যুক্ত। যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে সন্তোষের দাবি, ‘‘আমি কিংবা আমার ঘনিষ্ঠ কেউ এই মারধরের ঘটনায় জড়িত নয়। আমি তোলাবাজি সমর্থন করি না। বিরোধীরা ইচ্ছাকৃত ভাবে আমার ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দিচ্ছেন।’’

হাওড়া স্টেশনের হকারদের থেকে তোলা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল আগেই। আবার এমন ঘটনায় অভিযোগের সত্যতায় কার্যত সিলমোহর পড়ল। পুলিশ সূত্রের খবর, হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন জিআর রোডে ট্র্যাফিক অফিসের পাশে দীর্ঘদিনের পারিবারিক চায়ের দোকান কৃষ্ণ সাহুদের। অভিযোগ, রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ তাঁর দোকানে ৮-১০ জন যুবক আসে। দোকানের যাবতীয় জিনিস ফেলে দেওয়ার পরে তাঁকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয়। মারের চোটে মুখ ফেটে রক্ত বেরোতে থাকে, কোমরে এবং ঘাড়েও গুরুতর চোট লাগে। তাঁকে বাঁচাতে এলে বাপি দাস, নারায়ণ সরকার, শান্তু কুমার-সহ কয়েক জন হকারকেও লাঠি, বাঁশ দিয়ে আক্রমণ করে ওই যুবকেরা। অভিযোগ, এর পরে মাছ বাজারের সামনে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ের কাছে কৃষ্ণকে টেনে নিয়ে যায় অভিযুক্তেরা। হকারদের দাবি, সেখানেও আরও একদফা মারধর করা হয়। কৃষ্ণ বলেন, ‘‘মারধরের সময়ে গলা থেকে সোনার হারও ছিনিয়ে নেওয়া হয়।’’

নয়ন সরকার নামে এক হকার বলেন, ‘‘আমি ৫২ বছর ধরে ব্যবসা করছি। হাওড়া স্টেশনে এখন যা চলছে, আগে এমন কখনও হয়নি। কাউন্সিলরের স্বামীর ঘনিষ্ঠ ছেলেরাই মারধর করেছে।’’ একই অভিযোগ কৃষ্ণের ভাই বিকাশ সাহুর। তিনি বলেন, ‘‘দশ দিন আগে
তোলা চেয়ে হুমকি দিয়ে গিয়েছিল। বলেছিল, দোকান চালাতে হলে মাসে দশ হাজার টাকা দিতে হবে। না হলে ওই জায়গা থেকে তুলে দেবে। টাকা না দেওয়ায় তাই দশ দিন পরে এসে হামলা চালাল।’’

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর লক্ষ্মী সাহানির মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি নিজে ধরেননি। সেই ফোন ধরেন তাঁর স্বামী সন্তোষ। তোলাবাজি ও মারধরের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘আমিও রাজনীতি করি।
তাই আমার বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে কুৎসা রটানো হচ্ছে। আমি তোলাবাজির সঙ্গে যুক্ত নই। কিংবা কোনও ব্যক্তিকে মারধর করার ঘটনার সঙ্গেও যুক্ত নই।’’ পাশাপাশি তাঁর দাবি, ওই রাতে যা ঘটেছে, তা সব ‘জুনিয়র’ ছেলেদের নিজেদের মধ্যে গোলমালের ফল। বড় কোনও ঘটনা নয়।

উত্তর হাওড়ার তৃণমূল সভাপতি গৌতম চৌধুরী অবশ্য বলেন, ‘‘যা ঘটেছে তা একেবারেই ঠিক হয়নি। দলীয় নেতৃত্বকে বিষয়টা জানাব। খোঁজ নিয়ে দেখছি কারা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত।’’

হাওড়ার পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বলেন, ‘‘গোটা ঘটনাটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিসিটিভি-র ফুটেজও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE