Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সাইবার হেনস্থা বাড়ছে, তবু কুণ্ঠা অভিযোগে

বুধবার রাত পর্যন্ত অভিযোগ দায়ের করেননি তিনি। ফলে ঘটনায় মামলা রুজু করা যায়নি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০৭:১০
Share: Save:

অশ্লীল ছবি পাঠিয়ে, ধর্ষণ করে খালে ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়ে বার্তা এসেছিল এক তরুণীর ফেসবুকে। তিনি কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পেজে বিষয়টি জানালে লালবাজারের তরফে যোগাযোগ করা হয় তাঁর সঙ্গে। কিন্তু পুলিশের দাবি, বুধবার রাত পর্যন্ত অভিযোগ দায়ের করেননি তিনি। ফলে ঘটনায় মামলা রুজু করা যায়নি।

পুলিশ জানিয়েছে, নিগ্রহের ঘটনায় নিগৃহীতা অভিযোগ দায়ের না করলে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা রুজু করতে পারে না। কারণ, এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মহিলার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি কোনও মেসেজ পেয়ে পুলিশের সাহায্য না-ও চাইতে পারেন। ফলে নিগৃহীতার অভিযোগটাই আদালতের কাছে গ্রহণযোগ্য। পুলিশের দাবি, এমনই ঘটছে আকছার। সাইবার দুনিয়ায় নিত্যদিন নানা ভাবে যৌন হেনস্থার ঘটনা ঘটলেও, তা নিয়ে প্রথাগত ভাবে অভিযোগ দায়ের খুবই কম হয়। তার ফলে মামলা রুজু হয় না। আর এই ভাবেই নেট দুনিয়ার নিগ্রহকারীরা আরও উৎসাহ পেয়ে যায় বলে মনে করছেন সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।

কিন্তু ব্যতিক্রমও রয়েছে। কিছু দিন আগেই ফেসবুকে অশ্লীল প্রস্তাব পাঠানোয় এক যুবকের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছিলেন কলকাতার এক মহিলা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে বিরাটি থেকে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে লালবাজারের সাইবার অপরাধ শাখা।

ফেসবুক, টুইটারে ক্রমাগত অশ্লীল মেসেজ এবং কুপ্রস্তাব পেয়ে এড়িয়ে যাননি গায়িকা সাহানা বাজপেয়ীও। শান্তিনিকেতনে এবং লালবাজারে অভিযোগ দায়ের করেন। বীরভূম জেলা পুলিশের এক কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘অভিযোগের ব্যাপারে এই মূহূর্তে কিছু বলতে পারছি না। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’’ বোলপুরের ভারপ্রাপ্ত মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অরিন্দম দাস বলেন, ‘‘নভেম্বরে দায়িত্ব নিয়েছি। এই অভিযোগ সম্পর্কে জানা নেই।’’ তবে শুধু পুলিশের কাছেই নয়, সংবাদমাধ্যমেও নিজের নাম প্রকাশ্যে এনে ঘটনাটি তুলে ধরেছিলেন সাহানা।

কিন্তু পুলিশের একাংশ বলছে, এমন দৃষ্টান্ত বেশ কম। সাইবার বিশেষজ্ঞ এবং পুলিশের একাংশ বলছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লোকলজ্জার ভয়ে নিগৃহীতারা অভিযোগ দায়ের করে মামলা-মোকদ্দমায় জড়াতে চান না। কারণ, অনেক সময়ই আইনি লড়াইয়েও হেনস্থার শিকার হতে হয় তাঁদের। সে সব ভেবেই পিছিয়ে যান মহিলারা। অনেকেই আবার এ ধরনের মেসেজ পেলে এড়িয়ে যান বা ব্লক করে দেন। এমনই ঘটেছিল উত্তর ২৪ পরগনার এক যুবতীর সঙ্গে। বন্ধু সূত্রে পরিচিত বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তাকে ফোন নম্বর দিয়েছিলেন তিনি। হোয়্যাটসঅ্যাপে মেসেজ চালাচালিও হতো। কিছু দিন পর থেকেই নানা রকম অশ্লীল মেসেজ আসতে শুরু করে তাঁর কাছে। সেই মেসেজ এড়াতে ওই ব্যক্তির ফোন নম্বর ‘ব্লক’ করলেও পুলিশের দ্বারস্থ হননি তিনি। সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, থানা পর্যন্ত বিষয়গুলি না পৌঁছনোয় অপরাধীরা শাস্তি পায় না। অথচ এ ধরনের মামলায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে অপরাধীদের কাছে কড়া বার্তা যাবে।

এ দেশে সাইবার তদন্তের ক্ষেত্রে কিছু জটিলতাও রয়েছে। সাইবার-বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানান, অনেক সময়েই তদন্তের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায় না। তার ফলে তদন্ত আটকে থাকে।
সম্প্রতি শিলিগু়ড়ির এক মহিলার মামলার ক্ষেত্রেই এমন হয়েছে। সেই জটিলতা কা়টাতে গিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে আলাদা একটি মামলাও হয়েছে। পুলিশের একাংশের এ-ও দাবি, এত সমস্যা সত্ত্বেও অভিযোগ দায়ের করা হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। গত কয়েক মাসে লালবাজারের সাইবার অপরাধ দমন শাখায় এমন যে ক’টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তার সব ক’টিতেই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE