Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

হোম বাড়ন্ত, ঠাঁই মিলছে না শিশুদের

ওই কিশোর তার পরে একটু একটু করে সুস্থ হয়ে উঠেছে। কিন্তু কোনও হোম না থাকায় তাকে ওই হাসপাতালেই থাকতে হচ্ছে। এই সমস্যা শুধু এ ধরনের অসুস্থ শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে নয়। সাধারণ নাবালক-নাবালিকাদের ক্ষেত্রেও উদ্ধারের পরে তাদের কোথায় রাখা হবে, সম্প্রতি তা নিয়ে সমস্যায় পড়েছে পুলিশ, চাইল্ড লাইন থেকে শুরু করে শিশু কল্যাণ সমিতি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দীক্ষা ভুঁইয়া
শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৭ ১২:৩০
Share: Save:

বছর তেরো-চোদ্দোর ছেলেটিকে কয়েক দিন ধরেই রানিকুঠি মোড়ে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছিল। চোখমুখ দেখেই বোঝা গিয়েছিল, তার কিছু একটা সমস্যা রয়েছে। কয়েক দিন পরে সেই কিশোরই পৌঁছে যায় পাটুলিতে। সেখানে একটি বা়ড়ির বাইরে আশ্রয় নেয়। গৃহকর্ত্রী অমৃতা রায় দেখেই চিনতে পারেন তাকে। তাঁর মনে পড়ে যায়, ছেলেটিকে রানিকুঠির মোড়ে বেশ কয়েক বার দেখেছেন। ওই কিশোরকে বাড়িতে এনে প্রথমে খেতে দেন তিনি। তার পরে খবর দেন থানায় এবং পরে চাইল্ড লাইনে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ছেলেটিকে উদ্ধার করে পাঠানো হয় একটি হাসপাতালে। শরীর খারাপ তো ছিলই। কিন্তু তার থেকেও বড় সমস্যা, ওই কিশোরকে রাখার উপযোগী কোনও সরকারি হোম কলকাতা শহরে নেই। কারণ, সে ‘ডাউন সিনড্রোম’-এ আক্রান্ত।

ওই কিশোর তার পরে একটু একটু করে সুস্থ হয়ে উঠেছে। কিন্তু কোনও হোম না থাকায় তাকে ওই হাসপাতালেই থাকতে হচ্ছে। এই সমস্যা শুধু এ ধরনের অসুস্থ শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে নয়। সাধারণ নাবালক-নাবালিকাদের ক্ষেত্রেও উদ্ধারের পরে তাদের কোথায় রাখা হবে, সম্প্রতি তা নিয়ে সমস্যায় পড়েছে পুলিশ, চাইল্ড লাইন থেকে শুরু করে শিশু কল্যাণ সমিতি। সমিতি সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে এ শহরে ৬৯টি থানা রয়েছে। কোথাও কোনও ছেলে বা মেয়ে উদ্ধার হলে সংশ্লিষ্ট থানা প্রথমেই তাদের পাঠিয়ে দেয় কলকাতা শিশু কল্যাণ সমিতির কাছে। তার পরে সমিতির নির্দেশ যায় সরকার অনুমোদিত ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত ছোটদের বিভিন্ন হোমে। কিন্তু কয়েক মাস আগে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা-চালিত মেয়েদের একটি হোম বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে মেয়ে উদ্ধার হলে পাঠাতে হচ্ছে সল্টলেকের সুকন্যা হোমে।

ছেলেদের হোমটি এখনও খোলা। তবে সেটাও যে কোনও দিন বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে সমিতি সূত্রের খবর। তখন ছেলেদেরও বিভিন্ন জেলার হোমগুলিতে পাঠাতে হবে। প্রশ্ন উঠেছে, কলকাতা শহরের মতো জায়গায় শিশুদের কোনও সরকারি হোম নেই কেন? রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের একটি সূত্রের খবর, অনেক বারই কলকাতায় সরকারি হোম তৈরির কথা হয়েছে। এমনকী, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, যারা হোম চালাতে পারবে, তাদের সরকারি অনুদান দেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছে বিভিন্ন স্তর থেকে। কিন্তু দফতর কোনও দিনই সেই সুপারিশ মানেনি। ফলে সমস্যা বাড়ছে।

মানসিক বা শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা হোম তৈরির বিষয়ে কেন চিন্তা করা হচ্ছে না, খোদ দফতরের একাংশই সে প্রশ্ন তুলেছে। যদিও সমাজকল্যাণ দফতরের অধিকর্তা রিচা মিশ্রের কথায়, ‘‘কলকাতা জেলা থেকে কোনও দিন এ ধরনের হোমের জন্য আবেদন আসেনি। তাই এ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Children Home NGO হোম
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE