এনআইটিটিটিআর ক্যাম্পাসের সামনে বন্ধ ফোয়ারায় জমা জল। সল্টলেকের লাবণিতে, বৃহস্পতিবার। ছবি: শৌভিক দে
ডেঙ্গি ও অন্যান্য জ্বরের সঙ্গে সাধারণ মানুষের যুদ্ধে খলনায়ক হয়ে উঠছে সচেতনতা এবং সমন্বয়ের অভাব! সল্টলেকের অসুখ-পরিস্থিতি অন্তত তেমনটাই ইঙ্গিত করছে।
তথ্য বলছে, সল্টলেক জুড়ে ডেঙ্গির দাপট ক্রমেই বাড়ছে। বৃহস্পতিবার সল্টলেকের একাধিক সরকারি আবাসন এবং অফিস চত্বর ঘুরে দেখা গেল, সর্বত্র পরিচ্ছন্নতার অভাব স্পষ্ট। মশা নিধনের পর্যাপ্ত পরিকাঠামো নেই বেশির ভাগ জায়গায়। কিন্তু সেগুলি বিধাননগর পুরসভার অধীনে নয়। সেগুলির দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। তাই পুরসভার কাছে মশা নিধনের জন্য আলাদা করে আবেদন না-পৌঁছলে সে সব জায়গায় কোনও ব্যবস্থা নিতে পারবে না পুরসভা। কিন্তু অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগই করছে না। যার জেরে বছরের প্রথম থেকে ডেঙ্গি প্রতিরোধ হচ্ছে না সর্বত্র। যদিও সল্টলেকের বাসিন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি রুখতে সচেতনতা প্রসারে খামতি রয়েছে পুরসভারও।
পুরসভার ডেঙ্গি নিধন কর্মসূচির সঙ্গে যে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সমন্বয় নেই, তা চোখে পড়ল লাবণির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনিক্যাল টিচার ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ (এনআইটিটিটিআর) ক্যাম্পাসে। ক্যাম্পাসের সামনে বন্ধ ফোয়ারার আশপাশে, পড়ে থাকা অব্যবহৃত পাইপে এবং ড্রামে জমা জল রয়েছে বহু দিন ধরে। পুরকর্মীরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি রুখতে জানুয়ারি মাস থেকে তৎপরতা শুরু হয়। সেটাকে ‘প্রস্তুতি সময়’ বলা হয়। কিন্তু সেই সময় বার কয়েক ওই ক্যাম্পাসে পরিদর্শনে গেলে তাঁদের ঢুকতেই দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। মাস খানেক আগে ক্যাম্পাস লাগোয়া একটি আবাসনের বাসিন্দারা পুরসভাকে অভিযোগ জানান, ক্যাম্পাসের নির্মীয়মাণ অংশে জমা জল থেকে মশার দাপট বাড়ছে।
এর পরে বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায় ক্যাম্পাস পরিদর্শনে যান। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি দেখব কী, আমাকে তো ঢুকতেই দেওয়া হয়নি! পরে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্যাম্পাসে ঢুকি। অবস্থা খারাপ ছিল। কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছিলেন দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।’’ মাস খানেক কেটে গেলেও পরিস্থিতির বদল হয়নি। যদিও এ দিন এনআইটিটিটিআর-এর এক অধিকর্তা দাবি করেন, পুরকর্তাদের পরামর্শ মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও অভিযোগ তোলেন, ডেঙ্গি প্রতিরোধে নাগরিকদেরও দায়িত্ব রয়েছে। ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসগুলিতে জমা জল ঠিকমতো পরিষ্কার করা হচ্ছে না। এর ফলে, বিধাননগরে ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে’’, বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
সল্টলেকের এএফ ব্লকের সাহা ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের আবাসনে প্রায় দশ জন আবাসিক জ্বরে আক্রান্ত। প্রতিষ্ঠানের তরফে দিন তিনেক আগে পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আবাসন কমিটির এক কর্তা জানান, মঙ্গলবার থেকে তৎপর হয়েছে পুরসভা। আবাসনের ভিতরে এবং আশপাশে মশা মারার ধোঁয়া, তেল ছড়ানো হচ্ছে। তবে, ওই আবাসন নিয়েও একই অভিযোগ পুরসভার। পুরকর্তাদের দাবি, বার কয়েক আবাসন পরিদর্শনে গেলেও নিরাপত্তারক্ষীরা ভিতরে ঢুকতে দেননি। তাই ‘প্রস্তুতি পর্বে’ বাদ পড়ে গিয়েছে ওই সব এলাকা। এখন ডেঙ্গির মরসুমে আক্রান্ত হওয়ার পরে তাঁরা পুরসভার সহযোগিতা চাইছেন। কিন্তু প্রথম থেকে রোগ রুখতে সচেতনতা বাড়িয়ে সমন্বয় গড়ে উঠলে পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব হতো। যদিও পুরকর্মীদের এলাকায় ঢুকতে না দেওয়া প্রসঙ্গে এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘পুরকর্মীরা পরিদর্শনে এসে ফিরে গিয়েছেন এমন কিছু জানি না।’’
অসচেতনতার ছবি ধরা পড়ল সল্টলেক সেক্টর ১-এর বিএফ ব্লকের পুলিশ আবাসনেও। ওই আবাসনের চল্লিশ জন জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। তার পরেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বেহাল দশা বদলায়নি। বহুতলের নীচে ফেলে রাখা নোংরার স্তূপে, অব্যবহৃত জলের পাইপে, খালি টবে ঢালাও জল জমে রয়েছে। এএফবি ব্লকের সেচ আবাসনেও একাধিক বাসিন্দা জ্বরে আক্রান্ত। যদিও জ্বরের প্রকোপ সচেতনতা বাড়াতে পারেনি মোটেই। একাধিক ফ্ল্যাটের বারান্দাতেই দেখা গেল, পাত্রে জমা জল রয়েছে।
সচেতনতা ও সমন্বয়ের অভাবেই কি ভুগতে হচ্ছে সল্টলেকবাসীকে? বিধাননগর পুরসভার মেয়র সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘সাহা ইনস্টিটিউট, বিএসফ, সিআরপিএফ আবাসনে পুরসভাকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। ডেঙ্গি রুখতে সহযোগিতা জরুরি। ওঁরা এগিয়ে না এলে পুরসভার পক্ষে কাজ করা মুশকিল। সরকারকেও এই সমস্যা সম্পর্কে জানিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy