আচ্ছন্ন: ধোঁয়ায় ঢেকেছে আকাশ। বৃহস্পতিবার, ময়দানের সেই অফিস ভবনে। ছবি:দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
সকাল ১০টা নাগাদ অফিসে ঢুকতে গিয়ে চমকে উঠেছিলেন নিরাপত্তারক্ষী।
কুড়ি তলা অফিসের সতেরো তলার জানলার কাচ ভেঙে গলগল করে বেরোচ্ছে সাদা ধোঁয়া। তাতে ঢেকে গিয়েছে আশপাশ। কালীপুজো হওয়ায় এ দিন অধিকাংশ অফিসই ছিল বন্ধ। বেগতিক দেখে ওই রক্ষী এবং আরও কয়েক জন শেক্সপিয়র সরণি থানা এবং দমকলে খবর দেন।
বৃহস্পতিবার, ছুটির সকালে আগুন লাগার খবর পেয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই দমকল পৌঁছে যায় ৪২, জওহরলাল নেহরু রোডে ওই বহুতল জীবন সুধা ভবনে। কিন্তু ভিতরে কিছুটা ঢোকার পরেই গাড়ি রাখার ছাউনি থাকায় আর এগোতে পারেননি দমকলকর্মীরা। শেষমেশ ওই শেড ভেঙে যতক্ষণে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন তাঁরা, আধ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে।
১৭ তলায় যে আগুন লেগেছিল, তা ইতিমধ্যে ছড়াতে শুরু করে। ওই তলেই ছিল বেশ কিছু এসি মেশিন। সেগুলি ফাটতে শুরু করে। ফল্স সিলিংয়ে আগুন লাগায় আঠেরো এবং উনিশ তলাতেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বাড়তে থাকে তাপ। ভাঙতে শুরু করে জানলার কাচ। মিনিট দশেকের মধ্যেই তিনটি তলা ছাই হয়ে যায়। অবশেষে দমকলের ১০টি ইঞ্জিন সাড়ে চার ঘণ্টা লড়াই চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। বিকেল ৩টে নাগাদ আগুন পুরোপুরি নেভে। দমকল সূত্রের খবর, শর্ট সার্কিট থেকেই এই আগুন।
সূত্রের খবর, জীবন সুধা ভবনের এগারো থেকে উনিশ তলা পর্যন্ত স্টেট ব্যাঙ্কের বিশ্ব বাজার ইউনিটের অফিস। সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে লেনদেন চলে। যে তলে প্রথমে আগুন লাগে, সেখানেই অফিসের সার্ভার রুম। আগুন তিনটি তলে ছড়িয়ে পড়ায় পুড়ে গিয়েছে বিশ্ব বাজার ইউনিটের একাধিক কম্পিউটার, যন্ত্রপাতি এবং গুরুত্বপূর্ণ নথি। কর্মীদের একাংশের আশঙ্কা, বেশ কিছু তথ্য নষ্ট হয়ে থাকতে পারে। তবে এক অধিকর্তা জানান, বিশ্ব বাজার ইউনিটের কাজ কখনওই বন্ধ রাখা যায় না। তাই স্টেট ব্যাঙ্কের সমৃদ্ধি ভবনে কয়েক জন কর্মী নতুন ভাবে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। আজ, শুক্রবার থেকে অস্থায়ী ভাবে সমৃদ্ধি ভবনে সব কিছু সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হবে।
দাউদাউ: পুড়ছে সেই অফিস। বৃহস্পতিবার, ময়দানে। নিজস্ব চিত্র
কুড়ি তলা এই অফিস ভবনে অগ্নি-সুরক্ষায় কী ব্যবস্থা ছিল? কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রতিটি তলে অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র রাখার পাশাপাশি জলও মজুত রাখা হয়। দুর্ঘটনা ঘটলে যাতে পাইপের মাধ্যমে সেই জল একতলা থেকে ২০ তলা পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া যায়, সেই ব্যবস্থাও রয়েছে। অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্রগুলি ঠিক মতো কাজ করে কি না, সেই পরীক্ষাও হয় নিয়মিত।
তবে দমকলকর্মীরাই জানিয়েছেন, এ দিন জলের চাপ ছিল খুব কম। সতেরো তলা পর্যন্ত জল পৌঁছতেই অনেকটা সময় কেটে যায়। আগুনে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পুলিশ ও দমকলকর্মীরা সিঁড়ি দিয়ে ১৭ তলায় ওঠেন। দমকলের আর একটি দল জীবন সুধার পাশের বহুতল জীবনদীপের ট্যাঙ্ক থেকে জল নিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনায় কেউ আহত হননি। আগুন লাগার খবর পেয়ে চলে আসেন স্টেট ব্যাঙ্কের কর্মীরা। সকলের মুখে একটাই কথা, কালীপুজোর ছুটিই বাঁচিয়ে দিল বিশ্ব বাজার ইউনিটের তিনশো কর্মীকে। তাঁরা বলছেন, কাজের দিনে এমন ঘটলে আরও বড় বিপদ হতে পারত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ব বাজার ইউনিটের এক কর্তার কথায়, ‘‘নীচে দাঁড়িয়ে দেখছি, দাউদাউ করে জ্বলছে উনিশ তলায় আমার ডেস্ক। কত জরুরি কাগজ রেখেছিলাম লকারে! তবে রক্ষা এটাই যে উপরে কেউ ছিলাম না। যে ভাবে আগুন লেগেছে, তাতে হয়তো কেউই নামতে পারতাম না। কর্মীরা আটকে পড়লে কী ভাবে তাঁদের উদ্ধার করা হবে, সেই পরিকল্পনা করে বহুতল নির্মাণ জরুরি।’’ আর এক কর্তা বাসবজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘নেহাৎ ছুটির দিন, তাই বড় বিপদ হয়নি। কিন্তু অফিসের দিনেও তো এমন হতে পারত! তখন কী হতো? সব কর্মীদের দ্রুত নামিয়ে আনার পরিকাঠামো কি রয়েছে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy