Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অবশেষে ধৃত কাশীপুরের স্বপন

রাজপথে তাঁর মদতে বোমা-গুলি ছোড়ার অভিযোগ ওঠার পরেও পুলিশ ‘খোঁজ পায়নি’ তাঁর! তিনি কিন্তু কাশীপুরে নিজের অফিসে বসেই বলেছিলেন, ‘‘পুলিশ পারলে আমাকে গ্রেফতার করুক।’’ এত দিন কাশীপুরেই ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন তিনি।

স্বপন চক্রবর্তী

স্বপন চক্রবর্তী

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:১৯
Share: Save:

রাজপথে তাঁর মদতে বোমা-গুলি ছোড়ার অভিযোগ ওঠার পরেও পুলিশ ‘খোঁজ পায়নি’ তাঁর! তিনি কিন্তু কাশীপুরে নিজের অফিসে বসেই বলেছিলেন, ‘‘পুলিশ পারলে আমাকে গ্রেফতার করুক।’’ এত দিন কাশীপুরেই ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন তিনি। তাঁর নামে একাধিক অভিযোগ, আদালতের সমন ঝুললেও থানা কখনওই ‘হদিস’ পেত না তাঁর!

তিনি স্বপন চক্রবর্তী। কাশীপুরের ‘দাপুটে’ তৃণমূল নেতা। কাশীপুর এলাকায় তাঁর খোঁজ না পেলেও বৃহস্পতিবার কলকাতা বিমানবন্দরের এক নম্বর গেট এলাকা থেকে স্বপনকে পাকড়াও করেছে পুলিশ। লালবাজার জানিয়েছে, গত মাসে কাশীপুরের ঝিল রোডে বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর এক জনকে খুনের চেষ্টার মামলায় ধরা হয়েছে তাঁকে। তাঁর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনের ধারাও যুক্ত করা হয়েছে। স্বপনের বিরুদ্ধে আরও চারটি মামলা রয়েছে বলে পুলিশের দাবি। আজ, শুক্রবার ধৃত তৃণমূল নেতাকে শিয়ালদহ আদালতে তোলা হবে।

কাশীপুরে ‘মোটা’ নামে পরিচিত স্বপন। এক সময়ে এলাকায় সিপিএমের ছত্রচ্ছায়ায় থাকলেও পরে তৃণমূলে ভেড়েন তিনি। রাজ্যে পালাবদলের পরে তৃণমূলের নেতা হয়ে ওঠেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, কাশীপুরের প্রোমোটিং ও নির্মাণসামগ্রীর ব্যবসার মূল নিয়ন্ত্রক তিনি। তাঁর ক্লাবের অনুষ্ঠানে রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী, শাসক দলের নেতাকে দেখা যেত। এ দিকে, এলাকার দখল নিয়ে তৃণমূলেরই বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা আনোয়ার খানের সঙ্গে বিরোধ স্বপনের। পুলিশের দাবি, গত ১৫ এপ্রিল কাশীপুর উদ্যানবাটীর সামনে আনোয়ার গোষ্ঠীর সঙ্গে গোলমালে প্রকাশ্যে গুলি চালায়, বোমা ছোড়ে স্বপনের দল। আহত হন এক জন। যা সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে গোটা রাজ্যে। ওই ঘটনায় ১৮ জন অভিযুক্ত গ্রেফতার হলেও আনোয়ার ও স্বপনের টিকি ছুঁতে পারেনি পুলিশ। নভেম্বরেও জমি দখল নিয়ে এক মহিলাকে মারধর করা হয়। গত মাসেও স্বপন ও তার লোকজন এলাকার এক বাসিন্দাকে খুনের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ।

কিন্তু এত কিছুর পরেও স্বপন পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরেই ছিলেন। তা হলে হঠাৎ তৎপর হয়ে তাঁকে পাকড়াও করল কেন কাশীপুর থানা?

লালবাজারের অন্দরের খবর, সম্প্রতি নবান্নের শীর্ষস্তর থেকে সুরজিৎ করপুরকায়স্থের (তখন তিনি কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদে ছিলেন) কাছে স্বপনকে গ্রেফতারের নির্দেশ গিয়েছিল। তাঁকে যে পাকড়াও করতে হবে, তখনই তা চূড়ান্ত হয়ে যায়। পুলিশের একাংশের বক্তব্য, স্বপনকে আগে ধরাই যেত। কিন্তু তাঁর সঙ্গে কলকাতার এক সাংসদ ও এক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠতা থাকায় পাকড়াও করার ব্যাপারে গা লাগাত না পুলিশ। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘এ বার স্বপনকে গ্রেফতারের বিষয়ে কারও কথা না শুনতে বলে নবান্নের শীর্ষস্তর।’’ লালবাজারের খবর, কাশীপুরের আর এক তৃণমূল নেতা আনোয়ার খানকেও ধরার নির্দেশ রয়েছে। এই নেতার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা রয়েছে। এক পুলিশ অফিসার জানান, কাশীপুরে রেল সাইডিং-সহ বিভিন্ন এলাকা কার দখলে থাকবে, তা নিয়েই গোলমাল আনোয়ার ও স্বপনের। স্বপনের মাথায় সাংসদের হাত ও আনোয়ারের মাথায় এক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর হাত থাকায় পুলিশ এত দিন কিছুই করতে পারেনি।

পুলিশ সূত্রে খবর, এলাকা থেকে স্বপনকে ধরলে পরিস্থিতি সামলানো যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ ছিল কাশীপুর থানার। তাই নবান্নের শীর্ষস্তরের নির্দেশ পেয়েই তড়িঘড়ি তাঁকে ধরা হয়নি। বৃহস্পতিবার খবর মেলে বাগডোগরা থেকে বিমানে কলকাতায় ফিরছেন স্বপন। কাশীপুর থানার একটি দল অপেক্ষা করছিল বিমানবন্দরের কাছে। এক নম্বর গেটের কাছে স্বপনের গাড়ি থামিয়ে ধরা হয় তাঁকে। পুলিশের দাবি, স্বপনের কিছু শাগরেদও সঙ্গে ছিল। তারা পালিয়ে যায়। গ্রেফতারের খবরে কাশীপুরের একটি বড় এলাকা থমথমে হয়ে যায়। তাঁর পাড়ার দোকানপাট ছিল বন্ধ। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে আঁচ করে এলাকায় বড় বাহিনী পাঠান লালবাজারের কর্তারা।

প্রশ্ন উঠেছে, এত দিন শাসক দলের ছায়ায় থাকলেও হঠাৎ স্বপনকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হল কেন?

পুলিশের একাংশের ব্যাখ্যা, কাশীপুর থেকে পাইকপাড়া, বেলগাছিয়ার দিকেও প্রভাব বাড়াচ্ছিল স্বপন। যে ভাবে তাঁর দল নিত্যদিন গোলমাল করছিল, তাতে এলাকায় শাসকদল সম্পর্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছিল। ভোটের আগে এলাকায় শাসক দলের ভাবমূর্তি ফেরাতেই এই গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত। শীর্ষস্তরের এই বার্তা পৌঁছেছে দলের নিচুতলাতেও। দলের দাপুটে নেতার গ্রেফতারের পরে স্থানীয় কাউন্সিলর সীতা জয়সোয়ারা তাই কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে পুলিশেরই একাংশ বলছে, স্বপনকে গ্রেফতার করে যেমন দলের ভাবমূর্তি ফেরানো হচ্ছে, তেমনই ভোটের আগে আগে জামিন পেলে ফের দলের কাজেও লাগতে পারবেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Kolkata Airport Cossipore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE