Advertisement
১৯ মার্চ ২০২৪

আভিজাত্যের আলোয় উজ্জ্বল বনেদি বাড়ির শ্যামাবন্দনা

বাঙালির বারো মাসের তেরো পার্বণের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িয়ে রয়েছেন দেবী কালী। বনেদি পরিবারের কালীপুজোয় দেখা যায় হরেক বৈচিত্র এবং রীতি রেওয়াজ।

ভবানীপুর মিত্রবাড়ি

ভবানীপুর মিত্রবাড়ি

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৪০
Share: Save:

বাঙালির বারো মাসের তেরো পার্বণের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িয়ে রয়েছেন দেবী কালী। বনেদি পরিবারের কালীপুজোয় দেখা যায় হরেক বৈচিত্র এবং রীতি রেওয়াজ।

ভবানীপুর মিত্রবাড়ি (পদ্মপুকুর রোড): ১৮৯২-এ পুজো শুরু করেন অ্যাটর্নি সুবোধচন্দ্র মিত্র। ডাকের সাজের প্রতিমার কানে থাকে দুটি শিশুর শব মূর্তি। কপালে আঁকা থাকে উল্কি। ভোগে দেওয়া হয় লুচি, তরকারি ও নানা ধরনের মিষ্টি।

বউবাজার মতিলালবাড়ি (দুর্গা পিতুরি লেন): জয়নগর-মজিলপুরের মতিলাল পরিবারের বিশ্বনাথ মতিলাল পিতৃহীন হয়ে মাতুলালয়ে চলে এসেছিলেন। পরে সরকারি নুনের গোলার সামান্য চাকুরে থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লবণ বিভাগের দেওয়ান হন। পরবর্তী কালে তিনি মামার সম্পত্তি লাভ করে পুজোর ভার গ্রহণ করেন। এখানকার প্রতিমা শ্যামাকালী। পুজো হয় বৈষ্ণবরীতি মেনে। ভোগে থাকে খিচুড়ি, সাদা ভাত, মাছের মুড়ো দিয়ে ডাল, ছ্যাঁচড়া, লাউ চিংড়ি, নানা ধরনের মাছ ইত্যাদি।

হাটখোলার দত্তবাড়ি (নিমতলাঘাট স্ট্রিট): আন্দুল দত্তচৌধুরী পরিবারের রামচন্দ্র দত্ত অষ্টাদশ শতকের শেষ ভাগে হাটখোলায়
বসতি স্থাপন করে দুর্গোৎসব ও কালীপুজো শুরু করেন। মদনমোহন দত্ত লেনের পুরনো বাড়িতে এখনও সেই পুজো হয়। পরবর্তী কালে রামচন্দ্রের পৌত্র জগৎরাম দত্ত নিমতলা ঘাট স্ট্রিটে এক প্রাসাদোপম গৃহ তৈরি করে পুজো শুরু করেন। সাবেক কাঠের সিংহাসনে দেবীর অধিষ্ঠান। সাবেক বাংলা শৈলীর প্রতিমা রুপোলি ডাকের সাজে সজ্জিত। বিসর্জনের আগে প্রতিমা বরণ করেন বাড়ির কুমারী মেয়েরা। ভোগে থাকে লুচি এবং নানা
ধরনের মিষ্টি।

বৈষ্ণবদাস মল্লিকের বাড়ি (দর্পনারায়ণ ঠাকুর স্ট্রিট): অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে সে কালের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং ওরিয়েন্টাল সেমিনারি-র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বৈষ্ণবদাস মল্লিক পুজো শুরু করেন। চালি গোলাকৃতি। পুজোয় কারণ ব্যবহার হয় না। ভোগে থাকে লুচি, পাঁচ রকম মিষ্টি, সাদা মাখন, ক্ষীর ইত্যাদি। পারিবারিক প্রথা মেনে ঠাকুরদালানের মেঝেতে বালি দিয়ে ভিতকে সাক্ষী রেখে হোম করা হয়।

রাধাকৃষ্ণ মিত্রের বাড়ি (দর্জিপাড়া): নীলমণি মিত্রের পৌত্র প্রাণকৃষ্ণ ছেলেবেলায় খেলার ছলে মাটির কালীমূর্তি গড়েছিলেন। তাতে ভুলবশত কালী প্রতিমার বাম পা শিবের বুকে ছিল। সেই থেকেই এ বাড়ির কালীপুজোর শুরু। আজও সেই প্রথা মেনে দেবীর বাম পা শিবের বুকে থাকে। কালীপুজোয় ১০৮টি জবার পরিবর্তে নীল অপরাজিতা দেওয়া হয়। অন্যান্য বৈচিত্রের মধ্যে মাখনের নৈবেদ্যের উপরে থাকে পানের খিলি।

বালি বন্দ্যোপাধ্যায়বাড়ি (শান্তিরাম রাস্তা): পরিবারের পূর্বপুরুষ প্রাণকৃষ্ণ সার্বভৌম ছিলেন কৃষ্ণনগর রাজসভার সভাপণ্ডিত। সেখানেই পুজোর শুরু। ডাকের সাজের দক্ষিণাকালী প্রতিমার
গায়ের রঙ গাঢ় আকাশি। অতীতে ঘটে পুজো হলেও এখন হয়
মূর্তিতে। অমাবস্যার গভীর রাতে তন্ত্রমতে পুজো হয় বলে জানান পরিবারের বর্তমান সদস্য ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। পুজোয় সাদা ভাত, পোলাও, ফ্রাইড রাইস, খিচুড়ি, ঘি ভাত-সহ ২১ কিংবা ২৭ রকমের মাছের বিভিন্ন পদ, মিষ্টি ভোগ
দেওয়া হয়।

বালি ঘোষপাড়া সাউবাড়ি (পালপাড়া): এক সময় ভাড়া বাড়িতে পুজো করার জন্য মালিক তা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তাতে প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো এই পুজোয় কয়েক বছরের জন্য ছেদ পড়েছিল। এই পরিবারের মেয়ে কবিতা সাউ বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়িতে সেই পুজো শুরু করেন। গত ৩০ বছর ধরে বৈষ্ণব মতে পুজো হচ্ছে। ভোগে থাকে
লুচি, ফল, মিষ্টি। পুজো উপলক্ষে থাকে পাত পেড়ে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন। পুজো চলাকালীন আতসবাজি
পোড়ানো হয়।

তথ্য: বিভূতিসুন্দর ভট্টাচার্য ও শান্তনু ঘোষ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE