Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

খুদে ছাত্রীকে ‘যৌন হেনস্থা’, ধৃত ২ শিক্ষক

শিশুটির পরিবারের দাবি, ঘটনার কথা জানার পরে সোমবারই তাঁরা অভিযোগ জানাতে যান স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৮ ০২:২৪
Share: Save:

সাড়ে চার বছরের মেয়েটা স্কুলে যাওয়ার নাম শুনলেই কাঁদছিল কিছু দিন ধরে। সোমবার খেলনা কিনে দেওয়ার পরে তাকে স্কুলে পাঠানো গেলেও ফিরেই শুরু হয় কান্না। রাতে মেয়েটি তার দাদুকে জানায়, কেন সে স্কুলে যেতে চায় না। পরিবারের অভিযোগ, স্কুলেরই এক শিক্ষক কিন্ডারগার্টেনের ওই পড়ুয়াকে যৌন নির্যাতন করেছেন। সেই আতঙ্কেই স্কুলে যেতে চাইছে না সে। খড়দহ থানার পাতুলিয়া বাজার এলাকার ঘটনা।

শিশুটির পরিবারের দাবি, ঘটনার কথা জানার পরে সোমবারই তাঁরা অভিযোগ জানাতে যান স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে। কিন্তু তিনি অভিযুক্ত শিক্ষকের সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে দায় এড়াতে চান। এর পরে অভিযুক্ত শিক্ষকের বাড়িতে চড়াও হন শিশুটির বাড়ির লোকজন। শিশুটির বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে ওই রাতেই অভিযুক্ত শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক, দু’জনেই গ্রেফতার হয়।

পুলিশ জানায়, শিশুটির বাবা দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধেই লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযুক্ত শিক্ষক তরুণকান্তি ঘোষের (৫৫) বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা দায়ের হয়েছে। পাশাপাশি, প্রধান শিক্ষক কুন্দন ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযুক্তকে আড়াল করার চেষ্টা ও ভুল তথ্য দেওয়ার মামলা রুজু হয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, পাতুলিয়া বাজারে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ওই বেসরকারি স্কুলে মাস দুয়েক আগে ভর্তি হয় কদমতলার বাসিন্দা শিশুটি। দিন পনেরো ধরে সে স্কুলে যেতে কান্নাকাটি করছিল। শেষে গত শুক্রবার মেয়েকে নিয়ে স্কুলে গিয়ে দেখা করেন তার বাবা-মা। তাঁরা পুলিশকে জানান, সেই সময়ে তরুণকান্তিবাবু মেয়ের আচরণ নিয়ে বকাবকি করেন। কিন্তু অন্য শিক্ষিকারা তাতে আপত্তি জানান। তার বাবা বলেন, ‘‘সোমবার যাতে মেয়ে স্কুলে যায়, তার জন্য ওকে খেলনা কিনে দিই। কিন্তু স্কুল থেকে ফিরেই ফের কান্নাকাটি শুরু করে মেয়ে।’’

শিশুটির মা পুলিশকে জানান, ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি মেয়েকে পাতুলিয়া সরকারি কোয়ার্টার্সে তার মামার বাড়িতে পাঠান। সেখানে শিশুটির দাদু গল্পের ছলে নাতনির থেকে জানতে পারেন, এক শিক্ষক পেন ও নখ দিয়ে তার গোপনাঙ্গে আঘাত
করেছেন। এর পরেই শিশুটির পরিজন ও প্রতিবেশীরা কুন্দনবাবুর কাছে যান। পুলিশ জানায়, শিশুটি প্রথমে অভিযুক্ত শিক্ষক হিসেবে কুন্দনবাবুর নাম বললেও তাঁকে দেখার পরে সে জানায়, ওই শিক্ষক নয়। শুক্রবার যে শিক্ষক তার বাবা-মাকে বকেছিলেন, তিনিই তার উপরে নির্যাতন চালিয়েছেন।

পুলিশ জানায়, কুন্দনবাবু প্রথমে দাবি করেন, তরুণবাবু তাঁর স্কুলে সাম্মানিক নিয়ে মাঝেমধ্যে পড়াতে আসেন। তাই তিনি অভিযোগের বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না। এমনকী, ওই শিক্ষকের ঠিকানাও তিনি জানেন না বলে দাবি করেন। তবে কুন্দনবাবু জানান, অভিযুক্ত শিক্ষক হুগলিতে থাকেন বলে তিনি শুনেছেন। এ সব কথায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন শিশুটির পরিজনেরা। তাঁরা ব্যারাকপুরের পানপাড়ায় তরুণবাবুর ফ্ল্যাটের হদিস পেয়ে সেখানে যান। কিন্তু তরুণবাবু সেখানে ছিলেন না। তাঁর ছেলে জানায়, বাবা পাতুলিয়ার ওই স্কুলেই নিয়মিত পড়ান।

এর পরে তরুণবাবুর ছেলেকে পাতুলিয়ায় নিয়ে আসেন শিশুটির পরিজনেরা। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে খোঁজ পায় তরুণবাবুর। গ্রেফতার করা হয় তাঁকে।

পুলিশের দাবি, উদ্বেগে ভুল তথ্য দিয়েছিলেন বলে কুন্দনবাবু পরে দাবি করেছেন। রাতে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময়ে তিনি বলেন, ‘‘ঘটনাটি নিশ্চয়ই অন্যায়। তবে এত লোকজন দেখে ভয়ে ভুল বলে ফেলেছিলাম।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, তরুণবাবু জেরায় জানিয়েছেন, কুন্দনবাবুর ফোন পেয়েই তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sexual harassment Child Teachers Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE