অটো ইউনিয়নগুলির অনিচ্ছা। তাই, কলকাতার রাস্তায় চলা বেআইনি অটোরিকশা শনাক্ত করার সরকারি কৌশল প্রথমেই মুখ থুবড়ে পড়ল। কারণ ওই কৌশল প্রয়োগের জন্য পরিবহণ দফতরের তরফে যে নির্দেশ জারি করা হয়েছিল, তা মেনে কাজ করেছে কেবল আড়াই শতাংশ অটো। বাকি সব অটো ওই নির্দেশকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বসে রয়েছে।
কী ছিল ওই নির্দেশ?
পরিবহণ দফতর বলেছিল, প্রতিটি অটোকে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে বাধ্যতামূলক ভাবে ‘হাই সিকিওরিটি নম্বর প্লেট’ (এইচএসএনপি) লাগাতে হবে। তবে বৈধ কাগজপত্র যে সব অটোর নেই, তারা ওই নম্বর প্লেট পাবে না। বৈধ নথির শর্তের এই কৌশল প্রয়োগ করেই অবৈধ অটো রোখার কথা ভাবা হয়েছিল। কারণ নতুন নম্বর প্লেট না পেলে সহজেই শনাক্ত করা যাবে যাবতীয় বেআইনি অটোকে। এবং শেষমেশ সেগুলি বন্ধও করে দেওয়া হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমার চার দিন আগে পরিবহণ দফতরের হিসেবে, মাত্র আড়াইশো অটো এইচএসএনপি লাগিয়েছে। অথচ দফতরের হিসেবে কলকাতার রাস্তায় চলা বৈধ অটোর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার।
বিভিন্ন সময়ে সরকারি এবং বেসরকারি নানা সংস্থা কলকাতায় যে সমীক্ষা চালিয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে এ শহরে প্রচুর অবৈধ অটো চলে। অনেক ক্ষেত্রে অন্য গাড়ির নম্বর প্লেট লাগিয়েও অটো কলকাতার রাস্তায় চলে বলে অভিযোগ। এ ধরনের অবৈধ অটোকে বাগে আনতে সরকারের হাতে সবচেয়ে বড় অস্ত্র এইচএসএনপি। কারণ, এই ধরনের নম্বর প্লেটে একটি চিপ থাকে। যাতে থাকে গাড়ির ইঞ্জিন নম্বর, চেসিস নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর এবং মডেল ও পারমিট নম্বর। ফলে খুব সহজেই একটি অটোর যাবতীয় তথ্য দেখে নেওয়া যায় ওই নম্বর প্লেট থেকে। রাজ্য পরিবহণ দফতর সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, চলতি জুলাই মাসের পরে যে সব অটোয় ওই নম্বর প্লেট থাকবে না, তাদের ফিটনেস সার্টিফিকেট (সিএফ) দেওয়া হবে না। তা সত্ত্বেও অবশ্য অধিকাংশ অটোচালকই এইচএসএনপি লাগাতে এগিয়ে আসছেন না।
এর কারণ কী?
পরিবহণ দফতরের কর্তাদের দাবি, অটো ইউনিয়নগুলির আশ্রয়েই কলকাতা জুড়ে চলছে অবৈধ অটো। প্রত্যেকটি রুটে কত অটো চলবে, সে সম্পর্কিত সরকারি বিজ্ঞপ্তিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইউনিয়নগুলি ইচ্ছেমতো তা ঠিক করে। এইচএসএনপি চালু হলে ইউনিয়নগুলির ওই ক্ষমতা কার্যত চলে যাবে। সে কারণেই ইউনিয়নগুলি সরকারি ওই প্রকল্পে উৎসাহ দেখাচ্ছে না বলে দাবি পরিবহণ-কর্তাদের। পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, “এক সময়ে অটো ইউনিয়নগুলিতে সিটু-র শাসন চলত। এখন রাজ্যে পালাবদলের পরে সেই ক্ষমতা গিয়েছে আইএনটিটিইউসি-র হাতে। বেআইনি অটো বাদ হয়ে গেলে শ্রমিক সংগঠনগুলির সদস্য-সংখ্যা কমবে এবং সেখান থেকে নিয়মিত আয়ের রাস্তাও কমবে। সে কারণে দু’পক্ষই নতুন এই নিয়ম মানতে চাইছে না।”
আইএনটিটিইউসি-র এক নেতার বক্তব্য, “বাম আমল থেকে প্রায় সব রুটেই এমন অনেক অটো রয়েছে, যাদের কাছে বৈধ সব কাগজপত্র নেই। এখন যদি তারা বাতিল হয়ে যায়, স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের সংগঠনের উপরে তার প্রভাব পড়বে।”
যদিও প্রকাশ্যে সিটু এবং আইএনটিটিইউসি-র পক্ষ থেকে এর পিছনে অন্য কারণ রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। দু’পক্ষের নেতাদেরই বক্তব্য, “সরকারি পরিকল্পনা সঠিক নয়। এইচএসএনপি নিতে গেলে অন্তত দু’দিন নষ্ট হবে। দু’দিনের রোজগার নষ্ট করে কোনও অটোচালকই যেতে চাইছেন না। সরকারের উচিত ছিল সিএফ-এর সময়ে ওই নম্বর প্লেট বসানোর ব্যবস্থা করা। তা হলেই কোনও সমস্যা হত না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy