Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ওয়ার্ড অফিস ভাঙচুর, ফের প্রকাশ্যে শাসক দলের কোন্দল

নির্বাচন পরবর্তী সন্ত্রাসে নতুন মাত্রা যোগ করল শাসক দলেরই অন্তর্দ্বন্দ্ব। এখনও পর্যন্ত মূলত বিরোধীদের উপরে হামলার অভিযোগ উঠেছিল শাসক দলের বিরুদ্ধে। এ বার তৃণমূলেরই এক কাউন্সিলর তার ওয়ার্ড অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় আঙুল তুললেন অন্য এক তৃণমূল নেতার আশ্রিত এক দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে।

ভাঙচুরের পরে সেই অফিস। শুক্রবার। — নিজস্ব চিত্র

ভাঙচুরের পরে সেই অফিস। শুক্রবার। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৬ ০১:৫৫
Share: Save:

নির্বাচন পরবর্তী সন্ত্রাসে নতুন মাত্রা যোগ করল শাসক দলেরই অন্তর্দ্বন্দ্ব। এখনও পর্যন্ত মূলত বিরোধীদের উপরে হামলার অভিযোগ উঠেছিল শাসক দলের বিরুদ্ধে। এ বার তৃণমূলেরই এক কাউন্সিলর তার ওয়ার্ড অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় আঙুল তুললেন অন্য এক তৃণমূল নেতার আশ্রিত এক দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে।

পুলিশ জানায়, শুক্রবার দুপুরে কলকাতা পুরসভার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়ার্ড অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর ইকবাল আহমেদের অভিযোগ, ‘‘এলাকারই বাসিন্দা পাপ্পু খানের নেতৃত্বে একদল দুষ্কৃতী এই ভাঙচুর চালিয়েছে। পাপ্পুই বিধানসভার ভোটে বেলেঘাটার তৃণমূল প্রার্থী পরেশ পালের হয়ে কাজ করেছে।’’ এলাকাবাসীর দাবি, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেই এই ভাঙচুর হয়েছে। খোদ কাউন্সিলরও জানিয়ে দিয়েছেন, এর পিছনে অন্য কোনও দলের হাত নেই।

স্থানীয় তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলেঘাটা কেন্দ্রে বিধানসভা ভোটে দলের প্রার্থী হিসাবে পরেশ পালকে পছন্দ ছিল না ইকবালের। প্রার্থী নির্বাচনের আগেই তৃণমূল নেত্রীর কাছে সেই বার্তাও পৌঁছে যায়। কিন্তু তাতে কর্ণপাত না করে দল পরেশকেই প্রার্থী করে। স্থানীয় তৃণমূল নেতা কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, ভোটের সময়
২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে ভোটের কোনও কাজে ‘নাক গলাতে’ দেননি পরেশ পাল। তাঁদের দাবি, পরেশের সঙ্গে ইকবালের সম্পর্কও বিশেষ ‘মধুর’ নয়। যদিও তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ফোন করা হলে তিনি শুধু বলেন, ‘‘যা বলার ১৯ মে-এর পরে বলবো।’’

কী ঘটেছিল এ দিন?

অভিযোগ, শুক্রবার দুপুর বারোটা নাগাদ সাত আট জন দুষ্কৃতী বন্দুক, লাঠি, হকি স্টিক নিয়ে রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিটের ওয়ার্ড অফিসে হামলা চালায় এবং ঘটনায় আহত হন কাউন্সিলরের ভাইপো মহম্মদ ইমরান ও অফিসে থাকা আরও দুই তৃণমূলকর্মী। ইমরানকে প্রথমে মেডিক্যাল কলেজে ও পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ দিনের ভাঙচুরের ঘটনার পিছনে অবশ্য বেআইনি নির্মাণকে কেন্দ্র করে বিরোধীতার সম্পর্ক রয়েছে বলে স্থানীয়দের একাংশের দাবি।

কাউন্সিলর ঘনিষ্ঠ একটি মহলের অভিযোগ, পাপ্পুর নেতৃত্বে ক্যানাল ওয়েস্ট রোডে একটি বেআইনি বাড়ির কাজ শুরু হয়েছে বছর দুই আগে। কাউন্সিলরের বাধায় ওই নির্মাণ দীর্ঘ দিন বন্ধ ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে ফের কাজ শুরু হয়। কাউন্সিলর খবর পেয়ে রাতেই পুলিশে অভিযোগ জানালে পুলিশ গিয়ে ওই কাজ বন্ধ করে।

স্থানীয়দেরই অন্য একটি অংশের অবশ্য দাবি, ইকবাল ও তাঁর গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও এলাকায় প্রোমোটিং সংক্রান্ত ক্ষেত্রে ‘তোলা আদায়ের’ অভিযোগ রয়েছে। তবে সেই সমস্ত অভিযোগই এ দিন খারিজ করে ইকবাল বলেন, ‘‘দাগি দুষ্কৃতী পাপ্পুর নেতৃত্বে সমাজবিরোধীরা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে এই ধরনের বেআইনি কাজ করে যাচ্ছে। এ সবের প্রতিবাদ করাতেই ওয়ার্ড অফিসে ভাঙচুর চালানো হল।’’ পাপ্পু ছাড়াও কাক্কু আব্বাস, রবি, হাতি রাজা, টিকু ও আশরফেরা এ দিন হামলা চালায় বলে তাঁর অভিযোগ। এ দিন কাউন্সিলরের নেতৃত্বে তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরা নারকেলডাঙা থানার সামনে প্রায় আধ ঘণ্টা বিক্ষোভ দেখান। থানায় স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।

এ দিন পাপ্পুকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। বহু বার ফোন করেও যোগাযোগ করা যায়নি বেলেঘাটার তৃণমূল প্রার্থী পরেশ পালের সঙ্গে। জবাব মেলেনি এসএমএস-এর। ডিসি (ইএসডি) ধ্রুবজ্যোতি দে অবশ্য জানান, ২৮ নম্বর ওয়ার্ড অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE