Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
স্ট্র্যান্ড ব্যাঙ্ক রোড

নদীকূলের পথে এ বার গাড়ি ছুটবে বন্ধনহীন

মানচিত্রে পরিচয় ছিল রাস্তা হিসেবে, কিন্তু বাস্তবে তা ছিল গাড়ি বা লরির পার্কিংয়ের জায়গা। এমনকী, ওই রাস্তা অর্থাৎ, স্ট্র্যান্ড ব্যাঙ্ক রোডের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত শেষ কবে সরাসরি যানবাহন চলাচল করেছে, তা-ও ভুলে গিয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক কর্তারা।

এ ভাবেই খালি করা হয়েছে রাস্তা। — নিজস্ব চিত্র

এ ভাবেই খালি করা হয়েছে রাস্তা। — নিজস্ব চিত্র

শিবাজী দে সরকার
শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:২০
Share: Save:

মানচিত্রে পরিচয় ছিল রাস্তা হিসেবে, কিন্তু বাস্তবে তা ছিল গাড়ি বা লরির পার্কিংয়ের জায়গা। এমনকী, ওই রাস্তা অর্থাৎ, স্ট্র্যান্ড ব্যাঙ্ক রোডের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত শেষ কবে সরাসরি যানবাহন চলাচল করেছে, তা-ও ভুলে গিয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক কর্তারা। বাগবাজার থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার ওই রাস্তার সব ‘বাধা’ হঠিয়ে এ বার সেখানে গাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে বলে দাবি পুলিশের।

লালবাজারের দাবি, পোস্তার নির্মীয়মাণ উড়ালপুল ভেঙে পড়ার পরে ওই এলাকার যানজটের সমস্যা মেটাতে চিন্তায় পড়ে প্রশাসন। তখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ওই রাস্তায় যান চলাচল চালু করার। তার জন্য অনেক ব্যবস্থাপনাও হয়েছে। রাস্তার দু’পাশের পার্কিং তুলে আনা হয়েছে এক পাশে। তা-ও এক লাইনে। কাঠগোলা, ডালপট্টি-সহ ওই রাস্তার বিভিন্ন অংশে এত দিন দু’-তিন সারিতে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকত।

শুধু কি পোস্তা উড়ালপুল ভেঙে পড়ার জন্যই হারিয়ে যাওয়া রাস্তা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হল? পুলিশের একাংশের বক্তব্য, উড়ালপুল ভেঙে পড়ার পরে বিকল্প রাস্তার খোঁজ করা হচ্ছিল। সেই সঙ্গে জাতীয় পরিবেশ আদালতে পরিবেশপ্রেমী সুভাষ দত্ত হারিয়ে যাওয়া ওই রাস্তা খোলার জন্য আবেদনও করেছিলেন। পুলিশের দাবি, সব মিলিয়েই ওই রাস্তা সাধারণের গাড়ি চলাচলের জন্য খোলার সিদ্ধান্ত হয়।

লালবাজার জানিয়েছে, জোড়াবাগান ট্র্যাফিক গার্ড এবং হাওড়া ব্রিজ ট্র্যাফিক গার্ডের পুলিশ আধিকারিকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই রাস্তায় গাড়ি চলাচলের জন্য ‘ট্রায়াল রান’ও শুরু হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে ওই দাবি করা হলেও রাস্তাটি সম্পূর্ণ বাধা মুক্ত হয়নি বলে অভিযোগ অনেকের। ফলে কবে থেকে ওই রাস্তা পুরোপুরি সাধারণ গাড়ি চলার জন্য খুলে দেওয়া হবে, তা নিয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছননি কলকাতা পুলিশের কর্তারা।

এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘পাশে গঙ্গা থাকায় ওই রাস্তার সৌন্দর্য্য অন্য মাত্রা পেয়েছে। নদীর পাশ দিয়ে যান চলাচল কলকাতাতে নেই বললেই চলে। তাই সাধারণ মানুষের কাছে ওই রাস্তা খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। গাড়ি চলাচল নিয়মিত হলেই বাকি বাধা সরে যাবে।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, গত কয়েক দশক ধরে ওই রাস্তার বেশির ভাগ অংশেই দু’পাশে সার দিয়ে লরি দাঁড়িয়ে থাকত। বিশেষ করে শোভাবাজার ঘাট বা ভূতনাথ মন্দির, নিমতলার কাছে সব সময়ে ভিড় লেগেই থাকত। এ ছাড়াও হাওড়া সেতুর এক দিকে ফুলবাজারের একটি বড় অংশ ওই রাস্তায় বসত। পোস্তার মতো এলাকা থাকায় ছোট গাড়ি বা ভ্যান রিকশা রাস্তার মাঝে দাঁড় করানো থাকত অবহেলায়। পুলিশকর্তাদের দাবি, পোর্ট ট্রাস্ট, কেএমডিএ সব দফতরের সঙ্গে কথা বলে ফুলবাজারের ব্যবসায়ীদের রাস্তার দু’পাশে সরিয়ে গাড়ি চালানোর জায়গা করা হয়েছে। অন্য জায়গায় লরি পার্কিং-এর জায়গা রাস্তার এক পাশে নিয়ে এসে ছোট গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

লালবাজার জানিয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ট্রায়াল পদ্ধতিতে গঙ্গার পাড় ধরে ওই রাস্তা দিয়ে এখন হাওড়া সেতুর দিকে বা দক্ষিণ দিকে গাড়ি চলাচল করছে। বাগবাজার ঘাটের সামনে থেকে হাওড়ামুখী গাড়ি সোজা চলে যাচ্ছে বি বা দী বাগের কাছে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত। সেখান থেকে বাঁ দিকে ঘুরে স্ট্র্যান্ড রোড দিয়ে তা যাচ্ছে হাওড়ার দিকে। গত সপ্তাহেই অবরোধের জন্য উত্তর কলকাতার একটি রাস্তা বন্ধ থাকায় স্ট্র্যান্ড ব্যাঙ্ক রোড দিয়ে হাওড়ামুখী গাড়ি যায় বলে জানিয়েছে লালবাজার।

তবে বাধা আছে কিছু। পুলিশের দাবি, ওই রাস্তায় এখনও কোনও ট্র্যাফিক সিগন্যাল নেই। দু’বার চক্র রেলের লেভেল ক্রসিং পেরোতে
হচ্ছে। জায়গায় জায়গায় ছোট গাড়ি বা ভ্যান যে রকম খুশি দাঁড় করানো থাকছে। এ ছাড়া রাস্তার পরিধি বেশি না হওয়ায় দু’টির বেশি গাড়ি পাশাপাশি যেতে পারছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Vehicle Ganga
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE