সাতসকালেই বদলে গেল হোয়াট্সঅ্যাপ!
খুটখাট লেখাজোকায় স্মার্টফোনে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রাখা এই মেসেজ অ্যাপে মঙ্গলবার থেকেই সরাসরি ফোনে কথা বলা যাচ্ছে। আর তাই নিয়েই সরগরম কলকাতা থেকে ক্যালিফোর্নিয়া।
সাধারণ ফোনের মতো কল পিছু টাকা কাটার বদলে এ ক্ষেত্রে খরচ হচ্ছে ইন্টারনেটের ডেটা চার্জ। ফলে ওয়াইফাই বা নেট প্যাক, ইন্টারনেট ব্যবহারের নির্দিষ্ট খরচ বইলেই দিব্যি ফোন করা যাচ্ছে পাশের পাড়া থেকে ভিন্দেশ যেখানে খুশি। ভিন্রাজ্যে বা বিদেশের কলে সাধারণ ফোনের মতো অনেক টাকাও গুনতে হচ্ছে না। তবে আপাতত এই পরিষেবা মিলছে শুধু অ্যান্ড্রয়েড ফোনেই।
আঠেরো থেকে আটষট্টি, এ পরিষেবার সুযোগ নেওয়া প্রতেকেই বলছেন, কথা বলা যাচ্ছে প্রায় সাধারণ ফোনের মতোই। ঝকঝকে পরিষ্কার আওয়াজ, নেটের সিগন্যাল ঠিক থাকলে কল কাটছেও না তেমন। কথা শুনতে না পাওয়ার সমস্যা একটুআধটু হলেও বাড়াবাড়ি কিছু নয়। ২জি-র চেয়ে ৩জি-তে কলের মান ভাল, সেটাও বলছেন অনেকেই। ব্যস্ত কর্পোরেট অয়ন, জয়দীপ, মঞ্জিরা, পৃথা, শিক্ষিকা অনিন্দিতা, সংহিতারা প্রত্যেকেই কল করেছেন আত্মীয়-বন্ধুদের। বিদেশ থেকে কলকাতায় ফোন সেরেছেন গবেষক শুভমিতা বা ইঞ্জিনিয়ার তীর্থও। কেউ বলছেন, নেট কলের বাকি মাধ্যমগুলির চেয়ে হোয়াট্সঅ্যাপে ভয়েস ক্ল্যারিটি কিংবা কানেকশন বেশি ভাল। কেউ আবার বলছেন, কল সংযোগের বেশ কয়েক সেকেন্ড পরে কথা শোনা যাচ্ছে। তবে এক বার কথা শুরু হয়ে গেলে আর তেমন অসুবিধে হচ্ছে না। কলের মাঝখানে কথা কেটে যাওয়া বা সাধারণ ফোন এলে হোয়াট্সঅ্যাপ কল কাটার সমস্যাতেও পড়েছেন কেউ কেউ। যদিও মোটের উপরে হোয়াট্সঅ্যাপ কল-কে ভাল নম্বরই দিয়েছেন সকলে।
হোয়াট্সঅ্যাপে এই বাড়তি মজায় উল্লসিত ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’-খ্যাত ঋদ্ধি আর সুরঙ্গনা। ঋদ্ধি যেমন একে বেশি নম্বর দিতে চায় স্রেফ কলের মানের নিরিখেই। সঙ্গে তার উচ্ছ্বাস, ‘‘সাধারণ ফোনের চেয়ে খরচও কম। ওয়াইফাই-য়ে একেবারে ফ্রি!’’ নিজে কল না করলেও বন্ধুদের কল পেয়েছে সুরঙ্গনা। তার কথায়, ‘‘ফেসবুক-ভাইবারের চেয়ে হোয়াট্সঅ্যাপ তো বেশি প্রচলিত। তাতে কল করা গেলে অনেক বেশি সুবিধার। আমি তো এ বার বিদেশে বন্ধুদের নিয়মিত ফোন করব।’’
তবে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে ঘুরেফিরে এসেছে একটা প্রশ্নও। এ ক্ষেত্রে কল পিছু খরচ হবে ইন্টারনেট ডেটা। তবে হোয়াট্সঅ্যাপ কলে খরচ কেমন দাঁড়াবে? কতটাই বা সস্তা হবে সাধারণ ফোনের তুলনায়?
জিএসএম মোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলির সংগঠন সেলুলার অপারেটরস অফ ইন্ডিয়া-র ডিজি রাজন ম্যাথিউস বলেন, ‘‘ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য প্রত্যেকেই নির্দিষ্ট ডেটা প্ল্যান বা ওয়াইফাই কানেকশন নেন। তাতে ডেটা ব্যবহারের খরচ পূর্ব নির্ধারিত। হোয়াট্সঅ্যাপ কল-ও সেই অনুযায়ীই চলবে। কলে কতটা ডেটা খরচ হবে, তা ঠিক হবে হোয়াট্সঅ্যাপের নিয়মে। তার পরে ব্যবহৃত ডেটার পরিমাণের হিসেবে প্ল্যান থেকে খরচ হবে। আনলিমিটেড ওয়াইফাই-য়ে এর আলাদা খরচ লাগবে না।’’ তবে নেটের খরচে এসটিডি বা আইএসডি-র তুলনায় হোয়াট্সঅ্যাপে কল করা যে বেশ সস্তা হবে, তা বলছেন গ্রাহকেরাই। একটাই সমস্যা, প্রতিটি কলে কেমন ডেটা খরচ হল, সাধারণ ফোনের মতো কল-শেষে তা দেখার সুযোগ এখনও সব ক্ষেত্রে নেই।
তবে সুবিধার পাশাপাশি আশঙ্কার জায়গাটাও মনে করিয়ে সাইবার ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘অন্য নেট কলের মতো হোয়াট্সঅ্যাপে আদানপ্রদান হওয়া তথ্য ট্যাপ করার সুযোগ নেই। ফলে সাইবার অপরাধ বৃদ্ধির বিপদ উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এই পরিষেবাকে স্যাটেলাইট ফোনের মতো ব্যবহার করে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের আশঙ্কাও বাড়ছে। এ দিকে, হোয়াট্সঅ্যাপ ভারতীয় আইনের এক্তিয়ারে আসে না। তাদের নীতিতেও স্পষ্ট লেখা, তথ্যের দায় সংস্থার নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy