প্লাবিত: এর মধ্যেই চলছে বিকিকিনি। ছবি: অরুণ লোধ
প্রায় হাঁটু সমান জল। তাই চাতাল থেকেই মিষ্টিকুমড়ো ছুঁড়ে দিচ্ছেন এক ব্যবসায়ী। অন্য জন থরে থরে তা সাজিয়ে চলেছেন মিনিডোরটিতে। কোথাও আবার টেবিল-বেঞ্চ পেতে চলছে কেনাবেচা। যদিও বেশির ভাগ ব্যবসায়ীর ঠাঁই হয়েছে রাস্তায়। ভেঙে পড়েছে গুদামের টিনের চালা। জল ঢুকে নষ্ট হয়ে গিয়েছে বহু টাকার আনাজ। ভ্যাট উপচে আবর্জনা ছড়িয়ে পড়েছে জমা জলে। দিন কয়েকের বৃষ্টিতে এমনই নরক বিষ্ণুপুর দু’ নম্বর ব্লকের কৃষক বাজার বা কিষাণ মান্ডি।
জেলার কৃষকদের এক ছাদের তলায় আনতে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প ছিল কৃষক বাজার। বিষ্ণুপুর দু’নম্বর ব্লকের এই বাজারটির উদ্বোধন হয়েছিল মাত্র বছর দেড়েক আগে। এর মধ্যেই বাজারের বেহাল দশা নিয়ে অভিযোগ উঠছে। আড়তদার, ফড়ে ও চাষি মিলিয়ে প্রায় আড়াইশো ব্যবসায়ী এর সঙ্গে যুক্ত। মাত্র পনেরো জন ব্যবসায়ী বসার জন্য চাতাল পেয়েছেন। বাকিদের স্থান মাটিতেই।
সদ্য তৈরি মান্ডি কী ভাবে এতটা নীচু হল? চণ্ডী গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন এই এলাকা। ওই পঞ্চায়েতের প্রধান তারক মণ্ডলের দাবি, ‘‘মান্ডি তৈরির সময়ে বারবার বলেছিলাম অন্তত রাস্তার সমান করতে। কাজ চলাকালীন আমাদের ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। তাই কী হয়েছে জানতে পারিনি। পরে দেখলাম রাস্তা থেকে প্রায় ফুট তিনেক নীচু মান্ডি। গত বছর বারুইপুর রোড মেরামতি হওয়ায় আরও খানিকটা নীচু হয়ে গিয়েছে।’’
বিষ্ণুপুর দু’ নম্বর ব্লকের এই কৃষক বাজারের ব্যবসায়ী চন্দন পাঁজা বলেন, ‘‘ভ্যাটের ময়লা উপচে মান্ডির জমা জলে তা ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যবসায় প্রচুর টাকার ক্ষতি হয়েছে। কয়েক গাড়ি আনাজ নষ্ট হয়েছে।’’ আড়তদার গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘বিপুল ক্ষতি ঠেকাতে ৩০ টাকায় আনাজ কিনে ১০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। খিদিরপুর, বেহালা ট্রাম ডিপো, মুচিপাড়া-সহ দক্ষিণ কলকাতা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন বাজারে এই কিষাণ মান্ডি থেকেই আনাজ যায়। ফলে ওই বাজারগুলিতে যোগানে টান পড়ছে।’’
তারকবাবুর দাবি, ‘‘চোখের হাসপাতাল থেকে কাটাখালির পোল পর্যন্ত ডায়মন্ড হারবার খাল বা সুতি খালের সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু চণ্ডী পঞ্চায়েতের পক্ষে তা অসম্ভব। বিষ্ণুপুর দু’নম্বর ব্লক সূত্রের খবর, বাইরের জল যাতে মান্ডিতে ঢুকতে না পারে, যন্ত্র দিয়ে চার ধারের মাটি কেটে বাঁধ গড়া হয়েছে। মান্ডির জল বার করতে চারটি পাম্পও বসানো হয়েছে।
বিষ্ণুপুর দু’ নম্বর ব্লকের বিডিও সুদেষ্ণা দে মৈত্র বলেন, ‘‘কৃষি বিপণন দফতর চাষের জমিতে মান্ডি করেছিল। তখনই উঁচু করা উচিত ছিল। গত বছর বারুইপুর রোড উঁচু হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। কৃষি বিপণন দফতরকে সব জানানো হয়েছে। দরপত্র ডাকা হয়েছে। শুনেছি, এক জন আবেদন করায় অর্থ দফতরে তা আটকে গিয়েছে।’’ তিনি জানান, গুদামটি এফসিআই-এর দায়িত্বে। ওরাই সেটির মেরামত করবে। মান্ডির ধার থেকে চোখের হাসপাতাল পর্যন্ত দু’ কিলোমিটার খাল কাটা হয়েছে। বারুইপুর রোডে নিকাশি তৈরির কাজ চলছে। সেটি শেষ হলে মান্ডির নিকাশির সমস্যা কিছুটা সমাধান হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy