Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

গরমে জল নেই, হাসপাতালে চরম দুর্ভোগ রোগীদের

সকাল থেকে বার বার বমি করে চলেছে বছর ছয়েকের বাচ্চাটা। হাসপাতালের বিছানা ভেসে যাচ্ছে বমিতে। সে নিয়ে বেশ কয়েক বার নার্সের ধমকও খেয়েছেন তার মা। কিন্তু বিছানা পরিষ্কার করা তো দূরের কথা, নেতিয়ে পড়া ছেলেকে পরিষ্কার করা বা তাকে বার বার জলটুকু খাওয়ানোরও সুযোগ নেই তাঁর কাছে। কারণ হাসপাতালে জল ‘বাড়ন্ত’! ঘটনাস্থল— আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

স্বামীর সঙ্গে বাসন্তী দাসবৈরাগ্য। রবিবার, এনআরএসে। ছবি: সুমন বল্লভ।

স্বামীর সঙ্গে বাসন্তী দাসবৈরাগ্য। রবিবার, এনআরএসে। ছবি: সুমন বল্লভ।

সোমা মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৫ ০৩:৩৪
Share: Save:

সকাল থেকে বার বার বমি করে চলেছে বছর ছয়েকের বাচ্চাটা। হাসপাতালের বিছানা ভেসে যাচ্ছে বমিতে। সে নিয়ে বেশ কয়েক বার নার্সের ধমকও খেয়েছেন তার মা। কিন্তু বিছানা পরিষ্কার করা তো দূরের কথা, নেতিয়ে পড়া ছেলেকে পরিষ্কার করা বা তাকে বার বার জলটুকু খাওয়ানোরও সুযোগ নেই তাঁর কাছে। কারণ হাসপাতালে জল ‘বাড়ন্ত’! ঘটনাস্থল— আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

নদিয়ার বাসন্তী দাসবৈরাগ্যের কেমোথেরাপি চলছে নীলরতন সরকার মেডিক্যালে। হাসপাতাল চত্বরে নেতিয়ে পড়ে থাকা বৃদ্ধাকে হাতপাখা দিয়ে হাওয়া করছিলেন তাঁর স্বামী। বার বার তেষ্টা পাচ্ছে বাসন্তীদেবীর। দোকান থেকে জল কিনে এনেই খাওয়াতে হচ্ছে তাঁকে। আশপাশে শুয়ে-বসে থাকা রোগীরাও জানালেন, এই গরমে গলা ভেজানোর জলটুকুও মিলছে না।

তাপমাত্রা যত বাড়ছে, সরকারি হাসপাতালে ভোগান্তির ছবিটাও বেড়ে চলেছে। কিন্তু প্রায় সবর্ত্রই কর্তৃপক্ষ দায় চাপাচ্ছেন পূর্ত দফতরের উপরে। পূর্ত দফতর পাল্টা জানাচ্ছে, হাসপাতালের তরফে তাদের কিছু জানানোই হয় না।

একেই সরকারি হাসপাতালে শয্যার অভাব থাকায় মেঝেতে ঠাঁই নিতে হয় বহু রোগীকে। তার উপরে জল থাকছে না শৌচাগারেও। ফলে নোংরা, দুর্গন্ধ মিলিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ড প্রায় নরকের চেহারা নিয়েছে। গত গরমে জলকষ্ট ঠেকাতে বিভিন্ন হাসপাতালে পাউচে জল বিলি হয়। এ বার তাও হয়নি। ইতিমধ্যেই অসহ্য গরমে বিভিন্ন পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় ন্যাশনালে ভাঙচুর চালান রোগীর পরিজনেরা। রবিবার কার্যত এক পরিস্থিতি হয় পিজি ও এনআরএসে।

স্বাস্থ্যকর্তারা স্বীকার করেছেন, প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে তাঁদের কাছে নানা অভিযোগ আসছে। বহু ওয়ার্ডে পাখা খারাপ। কোথাও পানীয় জলের সরবরাহ বন্ধ। তাপমাত্রার পারদের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি হাসপাতালগুলিতে রোগী-ভোগান্তির পারদও চড়ছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে চলতি সপ্তাহেই স্বাস্থ্য ভবনে বিভিন্ন হাসপাতালের সুপারদের নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। শিশু বিভাগ, প্রসূতি বিভাগ এবং ক্যানসার বিভাগের উপরে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।

স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সমস্যা বাড়ছে বুঝতে পারছি। একে শয্যার অভাব, তার উপরে এই গরমে রোগীদের সত্যিই জেরবার অবস্থা। সুপারদের নিয়ে বৈঠকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Patient nadia bed water R G Kar Doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE