Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

জল নয়, মশা ছাড়ছে শোধনাগার

বাঙুরের ডি ব্লকের একেবারে শেষে কেষ্টপুর খালের ধারে কয়েক একর জমির উপরে কলকাতা পুরসভা তৈরি করেছে ওই জল শোধনাগার।

উৎস: শোধনাগারের জলাধারের এ ভাবেই জমে জল। নিজস্ব চিত্র

উৎস: শোধনাগারের জলাধারের এ ভাবেই জমে জল। নিজস্ব চিত্র

আর্যভট্ট খান
শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৫৮
Share: Save:

সৌন্দর্যায়নের এলাকাই এখন মশার বংশ বিস্তারের আদর্শ জায়গা।

কয়েক একর জমিতে সৌন্দর্যায়নের কাজের পরে তৈরি হয়েছিল জল শোধনাগার। দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে ওই জল শোধনাগারে কাজ বন্ধ থাকায় কার্যত পরিত্যক্ত হয়ে গিয়েছে ওই জমি। সেখানে বড় বড় জলাধারের জমা জলেই এখন মশার জমজমাট সংসার।

বাঙুরের ডি ব্লকের একেবারে শেষে কেষ্টপুর খালের ধারে কয়েক একর জমির উপরে কলকাতা পুরসভা তৈরি করেছে ওই জল শোধনাগার। উত্তর কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে নিকাশির জল ওই শোধনাগারে এনে পরিশুদ্ধ করে পাম্পের সাহায্যে পাশের বাগজোলা খালে ফেলা হত। ওই শোধনাগারের কয়েক জন কর্মী জানালেন, দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে পাম্প খারাপ থাকায় কাজ হচ্ছে না। ফলে ভিতরের জমা জলও বাইরে বার করা যাচ্ছে না।

পুরসভার ওই প্রকল্প এলাকায় ঢুকতেই দেখা গেল, চার দিকে বড় বড় ঘাস। ইতিউতি জমে রয়েছে জঞ্জাল। শোধনাগারের কিছু কিছু জলাধার একতলা সমান উঁচু। মই দিয়ে উঠে তবেই দেখা যায়, কতটা জল জমে রয়েছে। কিন্তু, তা দেখার কেউ নেই। কয়েকটি উঁচু জলাধারে উঁকি দিয়ে দেখা গেল, সব ক’টিতেই জল রয়েছে। জলাধারগুলির পাশে ছোট ছোট নর্দমাতেও জমে আছে জল। একটু এগিয়েই দেখা গেল, সৌন্দর্যায়নের কাজের জন্য ছোট ছোট যে সব ডোবা তৈরি হয়েছিল, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলি জঞ্জালের স্তূপে পরিণত হয়েছে। ভিতরে জমে আছে জল। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই সব জলাধার ও ডোবাই এখন মশার কারখানায় পরিণত হয়েছে। আগে যে জায়গায় তাঁরা বাচ্চাদের নিয়ে বিকেলে বেড়াতে আসতেন,
সেই জায়গাই এখন তাঁদের মাথাব্যথার কারণ। বিশেষ করে, এই ডেঙ্গির মরসুমে।

বাঙুরের ডি ব্লকের বাসিন্দা অমিত কোলে ওই জল শোধনাগারের কাছেই থাকেন। তাঁর বৃদ্ধ বাবা শচীকুমার কোলে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। অমিতবাবু বলেন, ‘‘ওই জল শোধনাগার বন্ধ হওয়ার পরেই মশার উৎপাত বেড়ে গেল। বাড়িতে এত মশা যে, জানলা খুলে রাখাই যায় না। শুধু আমার বাবাই নন, আমাদের ব্লক, বাঙুরের বি ব্লক, এমনকী দমদম পার্কের কেষ্টপুর খাল সংলগ্ন বাসিন্দাদের অনেকেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। পুরসভার ওই জমি থেকেই মশার বাড়বাড়ন্ত চলছে।’’

ওই এলাকার আর এক বাসিন্দা সৌরভ দত্ত জানালেন, পাড়ার বাসিন্দারা মিলে দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং পুর আধিকারিকদের কাছে
স্মারকলিপি দিয়েছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, কোনও তরফেই কেউ ব্যবস্থা নেননি। সৌরভবাবু বলেন, ‘‘বাঙুরের বেশির ভাগ এলাকায় ব্লিচিং পাউডার ও মশা মারার তেল ছড়ানো হলেও যেখানে তা সব থেকে বেশি জরুরি ছিল, সেই জায়গাটাই ব্রাত্য থেকে গিয়েছে।’’

কবে সারানো হবে পাম্পগুলি? মন্টু সাহা নামে প্রকল্পের এক ঠিকাদার বলেন, ‘‘কাজ চলছে। এক দিকে পাম্প খারাপ। অন্য দিকে আবার কয়েকটি পাম্পের ভাল্ভ চুরি হয়ে যাওয়ায় নতুন করে সমস্যা তৈরি হয়েছে।’’ কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিংহ বলেন, ‘‘পাম্পগুলি দ্রুত সারিয়ে ওই সব জলাধার পরিষ্কার করে ফেলা হবে।’’

কিন্তু ওই জায়গাটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা সত্ত্বেও দক্ষিণ দমদম পুরসভার তরফে কলকাতা পুরসভাকে জানানো হয়নি কেন? দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যানের দাবি, ‘‘আমরা বেশ কয়েক বার পুরসভাকে বিষয়টি জানিয়েছি। ওরা অনুমতি দিলে আমরা ওই এলাকার সৌন্দর্যায়ন করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Water treatment plant Dengue Garbage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE