Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

‘ভূত’ দেখিয়ে মেট্রো কি দায় এড়াচ্ছে, প্রশ্ন

মেট্রোর লাইনে মঙ্গলবার কী দেখেছিলেন চালক, তার তদন্ত রিপোর্ট এখনও এল না মেট্রো-কর্তৃপক্ষের কাছে। এ দিকে রব উঠেছে, মেট্রো স্টেশনে ভূত রয়েছে। আর তা যুক্তিসঙ্গত করতেও বিশেষ বেগ পেতে হচ্ছে না। কারণ, ইন্টারনেটে খুঁজলেই দেখা যাবে কলকাতার ভুতুড়ে জায়গাগুলির মধ্যে একটি হল রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশন। বলা হয়েছে, এই স্টেশনেই নাকি মেট্রোর ৭০ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৫ ০০:২৯
Share: Save:

মেট্রোর লাইনে মঙ্গলবার কী দেখেছিলেন চালক, তার তদন্ত রিপোর্ট এখনও এল না মেট্রো-কর্তৃপক্ষের কাছে। এ দিকে রব উঠেছে, মেট্রো স্টেশনে ভূত রয়েছে। আর তা যুক্তিসঙ্গত করতেও বিশেষ বেগ পেতে হচ্ছে না। কারণ, ইন্টারনেটে খুঁজলেই দেখা যাবে কলকাতার ভুতুড়ে জায়গাগুলির মধ্যে একটি হল রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশন। বলা হয়েছে, এই স্টেশনেই নাকি মেট্রোর ৭০ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। রাত সাড়ে দশটার শেষ ট্রেনের অনেক চালক ও যাত্রীরা নাকি ওই সময়ে বিভিন্ন ছায়ামূর্তিকে রেললাইন দিয়ে খানিক হেঁটে যাওয়ার পরে অদৃশ্য হয়ে যেতে দেখেছেন। আর এ সবের পরে ভুতুড়ে ব্যাখ্যাটি তাই কিছু লোকের কাছে গ্রহণযোগ্য হতেই পারে। কিন্তু সে দিন মেট্রোর সুড়ঙ্গে যে লোক ঢুকেছিল, সে রকম ব্যাখ্যাও উঠে আসছে মেট্রোর অন্দর থেকে।

কী ঘটেছিল মঙ্গলবার? রবীন্দ্র সরোবর স্টেশন থেকে একটি বাতানুকূল ট্রেন ছেড়ে যখন এসপ্ল্যানেড স্টেশনের দিকে আসছিল, তখন ট্রেনের চালক লাইন ধরে এক জনকে দৌড়তে দেখেন। সঙ্গে সঙ্গে সুড়ঙ্গেই ট্রেনটি থামিয়ে দেন তিনি। পরে সেই লোকটি সরে গেলে তিনি ফের ট্রেন চালাতে শুরু করেন। এর পরেই কেন সুড়ঙ্গে ট্রেন অতক্ষণ ট্রেন দাঁড়িয়ে রইল, তা নিয়ে হইচই শুরু হয়। মেট্রোর কর্তারা এর ব্যাখ্যা দেন যান্ত্রিক ত্রুটি হিসেবে। কেউ কেউ আবার বলেন, চালক ভূত দেখেছেন।

মেট্রোর কর্তারা অবশ্য যা-ই বলুন না কেন, কর্তা-কর্মীদের একাংশ স্বীকার করে নিয়েছেন সুড়ঙ্গে লোক ঢোকার কথা। কোনও কর্মী সুড়ঙ্গে কাজ করার সময়ে তাঁর মোবাইল ফেলে এসেছিলেন। তা খুঁজতেই তিনি ভিতরে গিয়েছিলেন বলে অনেকের দাবি। অবশ্য রেলের নিয়ম অনুযায়ী, মেট্রোর তৃতীয় লাইনে যতক্ষণ বিদ্যুৎ থাকবে, ততক্ষণে কেউ সুড়ঙ্গে যেতে পারবেন না। কিন্তু কর্মীদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ থাকা অবস্থায় প্রায়শ বিভিন্ন কাজে তাঁদের সুড়ঙ্গে পাঠান কর্তারা। মাঝে মধ্যে ভিতরে ঢোকে আরপিএফও। কিন্তু মঙ্গলবার কেউ ট্রেনের সামনে এসে পড়ায় চালক বাধ্য হন ট্রেন থামিয়ে দিতে। আর এই খবর বাইরে চলে আসতেই তড়িঘড়ি দায় এড়াতে খবরটিকে যান্ত্রিক ত্রুটির গল্প বানিয়ে দেন মেট্রো-কর্তারা। অনেকে আবার বানিয়ে ফেলেন ভূতের গল্প।

কারণ, ট্রেন চালু থাকাকালীন কেউ ভিতরে গেলে তার দায় বর্তায় মেট্রো-কর্তৃপক্ষের উপরে। ভিতরে ঢোকার পরে ওই কর্মী যদি তড়িদাহত হন, সেক্ষেত্রেও দোষী সাব্যস্ত হবেন মেট্রো-কর্তৃপক্ষই। পাশাপাশি, এর দায় চাপবে পুলিশের ঘাড়েও। কারণ মেট্রোর সুড়ঙ্গের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে পুলিশই। মঙ্গলবার তাই ঘটনাটি প্রকাশ্যে চলে আসতেই দায় এড়াতে মেট্রো-কর্তৃপক্ষ থেকে পুলিশ, সকলেই চূড়ান্ত গোপনীয়তা রাখার চেষ্টা শুরু করেছে। মেট্রোর কর্মীদের বক্তব্য, দায় এড়াতেই এখন তাঁরা নানা রকম গল্প ফাঁদছেন।

মেট্রো কর্তাদের একাংশের অভিযোগ, যদি যান্ত্রিক ত্রুটির তত্ত্ব বিশ্বাস করতে হয়, তবে বলতে হবে সুড়ঙ্গে ট্রেন ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পরেও কর্তৃপক্ষ কোনও তদন্তের নির্দেশ দিলেন না কেন ? এবং অত বড় ঘটনার পরেও কোনও হেলদোল দেখা যায়নি মেট্রো-কর্তাদের মধ্যে। ফলে এই তথ্য সঠিক কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE