প্রতীকী ছবি।
শরীরের একাংশ অসাড়। মাস কয়েক আগে থেকে চেষ্টা করে শহরের এক সরকারি হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগে এক চিকিৎসকের ‘ডেট’ পেয়েছিলেন পুরুলিয়ার এক রোগী। কিন্তু দু’দিন আগে কলকাতার ওই হাসপাতালে পৌঁছে রোগী জানতে পারেন, ওই ডাক্তারবাবু ‘শীতের ছুটিতে’ গিয়েছেন।
দিন কয়েক আগে বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে জরায়ুর সমস্যা নিয়ে বেহালার এক মহিলা ভর্তি হন। অবিলম্বে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। কিন্তু ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক ছুটিতে। তাই ভর্তি হওয়ার পরে কিছু ওষুধ দিয়ে ওই রোগিণীকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে চিকিৎসক ফিরলে তাঁকে জানানো হবে।
শুধু হাসপাতাল নয়, একাধিক সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, শীতের মরসুমে কর্মীরা ছুটিতে। তাই রক্ত সংগ্রহেও অসুবিধা হচ্ছে। অধিকাংশ শিবির থাকে ছুটির দিনে। তখন কর্মী সঙ্কট পৌঁছয় চরমে। বাধ্য হয়ে বহু ক্ষেত্রে ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ রক্তদান শিবির বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, পুজোর সময়ে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিয়ে বারবার প্রশ্ন ওঠে। গত দু’-তিন বছর ধরে ইংরেজি বছরের শেষেও সেই অভিযোগ উঠছে। সরকারি হাসপাতাল এবং ব্লাড ব্যাঙ্কের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসক এবং কর্মীদের অনুপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। রোগীর পরিজনেদের একাংশের অভিযোগ, অস্ত্রোপচার পিছোচ্ছে। মাস কয়েক আগে ডাক্তার দেখানোর দিন নির্ধারিত থাকলেও সেটা বাতিল হয়ে যাচ্ছে। অনেক সময়ে বাতিল হওয়ার খবর রোগীকে জানানো হচ্ছে না। যার জেরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের রোগীরা সমস্যায় পড়ছেন।
বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে জানা গিয়েছে, কোনও সিনিয়র ডাক্তার ছুটি নিলে তাঁর দায়িত্ব সম যোগ্যতার চিকিৎসককে বুঝিয়ে দিয়ে যাওয়া নিয়ম। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই সেটা হচ্ছে না। একই বিভাগের একাধিক চিকিৎসক ছুটি নিচ্ছেন। কার্যত পুরো বিভাগের দায়িত্ব জুনিয়র চিকিৎসকেরা সামলাচ্ছেন। তাঁদের অভিজ্ঞতা কম। তাই জটিল সমস্যা নিয়ে কোনও রোগী ভর্তি হলে, চিকিৎসার পদ্ধতি কী হবে, সেই সিদ্ধান্ত নিতেও দেরি হচ্ছে।
স্বাস্থ্যভবনের কর্তাদের একাংশ জানান, উৎসবের মরসুমে স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের ছুটি নেওয়ার রেওয়াজ নতুন নয়। কিন্তু তার জেরে চিকিৎসা পরিষেবায় যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেই জন্য স্বাস্থ্য দফতরে মনিটরিং সেল তৈরি হয়। এ বছর পুজোর সময়ে সেই সেল যথেষ্ট সক্রিয় ছিল। বিভিন্ন হাসপাতালে পর্যাপ্ত কর্মী, চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় রক্ত রয়েছে কি না, সে দিকে নজর রাখা হয়েছিল। বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য ডিউটি তালিকা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বছর শেষে সেই সেলের সক্রিয়তা তেমন নেই।
স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষকর্তার কথায়, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালের প্রত্যেক বিভাগে ৬০ শতাংশ চিকিৎসক উপস্থিত থাকতে হবে। একসঙ্গে একাধিক চিকিৎসক ছুটির আবেদন করতেই পারেন, কিন্তু সেটা মঞ্জুর করার আগে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল সুপারের সবটা খতিয়ে দেখা দরকার। বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করে ডিউটি তালিকা তৈরি করা তাঁর দায়িত্ব। কিন্তু অধিকাংশ হাসপাতাল এই নিয়ম মেনে চলে না। যার জেরে বিপাকে পড়েন রোগীরা।’’
যদিও সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর পরিজনেদের এই অভিযোগ মানতে চাননি। বেসরকারি হাসপাতালগুলির সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হসপিটালস অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’-র ভাইস প্রেসিডেন্ট রূপক বড়ুয়ার কথায়, ‘‘বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের ছুটি নেওয়ার নির্দিষ্ট নীতি রয়েছে। ছুটির আবেদন কয়েক মাস আগে করতে হয়। সেই বিভাগের অন্যান্য চিকিৎসক তখন ছুটি নিতে পারেন না। এমনকী, ওই চিকিৎসক ছুটিতে যাওয়ার তিন দিন আগে থেকে তাঁর অধীনে রোগী ভর্তি করেন না। যাতে রোগী সমস্যায় না পড়েন। যদি কোনও রোগী এর পরেও চিকিৎসকের অনুপস্থিতির জেরে সমস্যায় পড়েন, তা হলে নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। সেই অভিযোগ নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy