প্রিয়াঙ্কা জয়সওয়াল
চলতি মাসেই পাঁচ বছর পূর্ণ হচ্ছে ছেলেটির। জন্মদিনে সে কী কী উপহার নেবে, বৃহস্পতিবার অনেক রাত পর্যন্ত মায়ের সঙ্গে শুয়ে সেই পরিকল্পনাই করেছিল ছেলে। শুক্রবার সকালে উঠে সেই ছেলেই দেখে, মা আর উপহার দেওয়ার অবস্থায় নেই। পুলিশ জানায়, বাড়ির লোকের ডাকাডাকিতে ঘুম ভেঙে সে-ই প্রথম দেখে, সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে মায়ের দেহ!
এর পরে সেই শিশুই খুলে দেয় ঘরের দরজা। বাইরে তখন বাড়ির লোক, প্রতিবেশীদের ভিড়। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ উদ্ধার করে মৃতদেহটি। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে মৃত ঘোষণা করা হয় ওই শিশুর মা প্রিয়াঙ্কা জয়সওয়ালকে (২৮)। তরুণীর পরিজনেদের অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতেই বেলেঘাটা থানার পুলিশ গ্রেফতার করে প্রিয়াঙ্কার স্বামী আনন্দ জয়সওয়াল এবং শাশুড়ি মালা জয়সওয়ালকে। অভিযোগ, ৩৪ বছরের আনন্দের সঙ্গে অন্য এক মহিলার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এর প্রতিবাদ করায় প্রিয়াঙ্কার উপরে মানসিক নির্যাতন চালানো হচ্ছিল। পুলিশ আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার ধৃতদের শিয়ালদহ আদালতে তোলা হলে বিচারক আনন্দকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশি হেফাজত দেন। অসুস্থতার কারণ দেখানোয় মালাকে ২ মার্চ পর্যন্ত জেল হেফাজ দেওয়া হয়েছে। ওই আদালতের সরকারি আইনজীবী অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই ঘটনায় ধৃতের সঙ্গে এক মহিলার নাম জড়িয়েছে। মৃত্যুতে তাঁর ভূমিকাও খতিয়ে দেখা দরকার। ধৃতকে জেরা করে সে সম্পর্কে জানা যাবে। তাই পুলিশি হেফাজত চাওয়া হয়েছে।’’
পুলিশ জানায়, প্রিয়াঙ্কার বাড়ি বিহারে। তবে তাঁর আত্মীয়েরা কলকাতার নারকেলডাঙায় থাকেন। ২০১১ সালে প্রিয়াঙ্কা এবং আনন্দের বিয়ে হয়। মোটর পার্টসের পারিবারিক ব্যবসা রয়েছে আনন্দদের। সেখানে কর্মরতা এক মহিলার সঙ্গেই বছর দেড়েক ধরে আনন্দের একটি বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ। পুলিশকে প্রিয়াঙ্কার পরিজনেরা জানিয়েছেন, বছর খানেক আগে এ নিয়ে প্রিয়াঙ্কা এবং আনন্দের মধ্যে প্রবল ঝগড়া হয়। আনন্দ প্রিয়াঙ্কাকে মারধর করেন বলেও অভিযোগ। দুই বাড়ির মধ্যে এ নিয়ে বৈঠকও হয়। এক আত্মীয় বলেন, ‘‘আনন্দ কথা দিয়েছিলেন, ওই মহিলার সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখবেন না। সম্প্রতি ফের একই কাজ করে প্রিয়াঙ্কার কাছে ধরা পড়েন আনন্দ। প্রতিবাদ করায় প্রিয়াঙ্কার উপরে মানসিক অত্যাচার শুরু করেন আনন্দ আর তাঁর মা।’’
বৃহস্পতিবার রাতে আনন্দ বাড়িতে ছিলেন না। রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র লেনের শ্বশুরবাড়িতে ছেলেকে নিয়ে শুতে যান প্রিয়াঙ্কা একাই। পুলিশের অনুমান, রাতেই ছেলে ঘুমিয়ে পড়ার পরে আত্মহত্যা করেন ওই তরুণী। সকালে প্রিয়াঙ্কা দরজা খুলছেন না দেখে ডাকাডাকি শুরু হয়। বেলেঘাটা থানার এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘মাকে ও ভাবে দেখার পর থেকে ছেলেটা কথা বলছে না। শুনলাম খাচ্ছেও না। এই ছেলের ভবিষ্যৎ কী হবে, সেটাই চিন্তার!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy