Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

যাদবপুরে ফের প্রশ্নের মুখে মাদক, বহিরাগত

উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বারবারই বলে থাকেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্ত পরিবেশ চান। পূর্বতন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী ক্যাম্পাসে সিসি ক্যামেরা বসাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন।

এ ভাবেই ভেঙে ফেলা হয়েছে ইউনিয়ন রুমের জানলা। নিজস্ব চিত্র

এ ভাবেই ভেঙে ফেলা হয়েছে ইউনিয়ন রুমের জানলা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:১৩
Share: Save:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আনাগোনা এবং মাদকের রমরমা নিয়ে বারবারই অভিযোগ উঠেছে। সেই অভিযোগ যে মিথ্যে নয়, বৃহস্পতিবার রাতে আরও এক বার তার প্রমাণ মিলল।

উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বারবারই বলে থাকেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্ত পরিবেশ চান। পূর্বতন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী ক্যাম্পাসে সিসি ক্যামেরা বসাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তাতে পড়ুয়াদের আপত্তি ছিল। ২০১৫ সালে উপাচার্য হিসেবে যোগ দিয়েই সুরঞ্জনবাবু জানিয়ে দিয়েছিলেন, ক্যাম্পাসে সিসি ক্যামেরা বসাতে চান না তিনি। অভিজিৎবাবু নিজের দফতরে যে ক্যামেরা বসিয়েছিলেন, তা-ও সরিয়ে দেন সুরঞ্জনবাবু। এ দিনও কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, সিসি ক্যামেরা বসানোর কোনও পরিকল্পনা তাঁদের নেই।

গত জুন মাসে দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে বহিরাগতদের প্রবেশের বিষয়টি তুলেছিলেন যাদবপুরের এক পড়ুয়া। সেখানে উপস্থিত সুরঞ্জনবাবুর সামনে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘ক্যাম্পাসে বহিরাগত ঢুকবে কেন? প্রত্যেক পড়ুয়ার পরিচয়পত্র থাকা উচিত।’’ কর্তৃপক্ষ না চাইলে বাইরে থেকে কোনও রকম হস্তক্ষেপ করা হবে না বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। উপাচার্যের উত্তর ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু এখনও সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

কিছু দিন আগেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ বিষয়ে আলোচনাসভা ও মিছিল করা হয়। সেপ্টেম্বরের সেই আলোচনায় উপাচার্য আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, যাদবপুরের মতো দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সব কার্যকলাপ চলতে থাকলে তা ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রভাব ফেলতে পারে।

এর পরে অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পক্ষ মিলে মিছিলের আয়োজন করে। যাদবপুরের অন্যান্য আন্দোলনে যে ছাত্রনেতাদের দেখা যায়, ওই আলোচনাসভায় এবং মিছিলে তাঁরা ছিলেন না। সেই আলোচনা ও মিছিলের অন্যতম উদ্যোক্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গৌতম মাইতি বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সব স্তরে এ নিয়ে সচেতনতা প্রয়োজন।’’ বাইরে থেকে মাদকের সরবরাহ বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ জরুরি বলেই তাঁর মত।

প্রসঙ্গত, মাস কয়েক আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির বৈঠকে অ্যান্টি-ড্রাগ স্কোয়াড তৈরির সিদ্ধান্তও হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি বেশি দূর এগোয়নি। উপাচার্য বারবারই বলে থাকেন, তিনি এই সব বিষয়ে শাস্তির থেকে আলাপ-আলোচনায় বেশি বিশ্বাসী। কলা বিভাগের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক দেবরাজ দেবনাথের দাবি, তিন বছর আগেও ক্যাম্পাস মদ ও মাদক সেবনের এ রকম মুক্তাঞ্চল ছিল না। তাঁর কথায়, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। রক্ষীদেরও আরও কঠোর হতে হবে।’’

এ দিন সহ-উপাচার্য প্রদীপকুমার ঘোষ জানিয়েছেন, যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে কিছু একটা ব্যবস্থা নিতেই হবে। কিন্তু এখন সেমেস্টার শেষের পরে ছুটির পরিবেশ। তাই জানুয়ারিতে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক ডাকা হবে। তবে সিসি ক্যামেরা বসানোর কোনও পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষের আপাতত নেই বলেই তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘‘ক্যামেরা তো ঘটনা ঘটলে দোষীকে ধরতে সাহায্য করে। আমরা ঘটনা যাতে না ঘটে, সেটাই চাইছি।’’
তিনি জানান, বহিরাগতেরা এমন কাণ্ড করলে রক্ষীরা যাতে সঙ্গে সঙ্গে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন, সে বিষয়ে তাঁদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এই বিষয়ে বলেন, ‘‘ভাল করে সব কিছু না জেনে মন্তব্য করব না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE