বার করে আনা হচ্ছে তপতীদেবীর দেহ (বাঁ দিকে)। ছেলে অমিতাভ দাসকে আটক করেছে পুলিশ। রবিবার সকালে, মুচিপাড়া থানা এলাকায়। নিজস্ব চিত্র
দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে মায়ের দেহ থেকে। পোকায় ছেয়ে গিয়েছে গোটা শরীর। তারই পাশে ভাবলেশহীন বসে ছেলে। পড়শিরা গিয়ে তা দেখে হতবাক। ঘটনার খবর পেয়ে আসে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, দিন ৩-৪ আগেই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ওই মহিলার।
রবিবার সকালে এমনই ঘটেছে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের অদূরে শশিভূষণ দে স্ট্রিটের একটি বাড়িতে। মৃতার নাম তপতী দাস (৬৫)।
পুলিশ সূত্রের খবর, ১০, শশিভূষণ দে স্ট্রিটের ওই চারতলা বাড়ির উপরের তলায় একটি ঘরে ছেলে অমিতাভের সঙ্গে থাকতেন তপতীদেবী। তাঁর স্বামী প্রদীপ দাস বছর দেড়েক আগে মারা গিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মা-বাবার একমাত্র সন্তান বছর তিরিশের অমিতাভ দীর্ঘদিন ধরেই মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন। একই সঙ্গে তিনি নেশাগ্রস্তও। এই সমস্যার জন্য তাকে দীর্ঘদিন নেশামুক্তি কেন্দ্রেও রাখা হয়েছিল। বছর খানেক আগেই সেখান থেকে বাড়ি ফিরে এলেও তিনি পুরোপুরি সুস্থ নন বলেই দাবি স্থানীয়দের। এ দিন তপতীদেবীর দেহ উদ্ধার করে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানোর পাশাপাশি অমিতাভকেও আটক করে মুচিপা়ড়া থানার পুলিশ।
আরও পড়ুন: শৌচালয় হলেই ফিরবেন নববধূ
পুলিশ জানিয়েছে, জায়ের সঙ্গে শশিভূষণ দে স্ট্রিটের ওই বাড়ির যৌথ মালিকানা রয়েছে তপতী দাসের। বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি। তিনতলার ভা়ড়াটে বিজলি মণ্ডলের কথায়, ‘‘তপতী নিয়মিত আমার বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। গত রবিবারও এসেছিলেন। কিন্তু তার পর থেকেই ওঁকে নীচে নামতে দেখিনি। গত মঙ্গলবার আমি ওঁকে দেখতে গিয়েছিলাম। সে দিন বেশ অসুস্থ দেখাচ্ছিল। বিছানা থেকে উঠতে পারছিলেন না।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নেশাগ্রস্ত ছেলে অমিতাভ প্রায়ই মাকে মারধর করতেন। শারীরিক অসুস্থতার জন্য তপতী রান্নাবান্না করতে পারতেন না। কখনও ছেলে বাজার থেকে খাবার কিনে আনতেন। আবার কখনও ভা়ড়াটেরাই খাবার দিয়ে আসতেন। স্থানীয়দের বক্তব্য, একেই বাধর্ক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন তপতী তার উপরে ছেলের মানসিক অসুস্থতার কারণে আরও বেশি করে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি।
তপতীর জা মিতালি দাস ওই বাড়িরই তিনতলায় থাকেন। মিতালির বউমা জয়িতা দাসের কথায়, ‘‘গত রবিবার আমার শাশুড়ি ও স্বামী তপতীদেবীকে দেখতে গেলে আমার স্বামীকেও মারধর করেন অমিতাভ।’’ সে দিনই ওই পরিবারের তরফে মুচিপাড়া থানায় অমিতাভের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশ সে দিন অমিতাভকে আটক করে থানায় নিয়ে গেলেও ছেড়ে দেয়। ওই বা়ড়ির এক ভাড়াটের কথায়, ‘‘গত তিন দিন ধরে অমিতাভকে বাড়ির ছাদে শুতে দেখেছি। এ বার বুঝতে পারছি, প্রচণ্ড দুর্গন্ধের জন্যই ও ঘরে না ঘুমিয়ে ছাদে চলে যেত।’’
কিন্তু মায়ের মৃত্যুর পরে দেহ পচতে শুরু করলেও কেন কাউকে খবর দিলেন না অমিতাভ? মনোবিদেরা এর জন্য অমিতাভের মানসিক অবস্থাকেই দায়ী করছেন। মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের কথায়, ‘‘এ ক্ষেত্রে ছেলে কোনও ‘সাইকোটিক ডিসঅর্ডার’-এ ভুগে বাস্তব জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন। মায়ের মৃত্যু হলেও তাঁর কাছে তিনি জীবিত।’’ মনোবিদ জয়রঞ্জন রামের আবার বক্তব্য, পরিবারের একমাত্র সদস্য মায়ের মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি ছেলে। তিনি বলেন, ‘‘মৃত্যুটা অস্বীকার করে এক অর্থে মাকে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করেছেন মানসিক ভাবে অসুস্থ ছেলে।’’ যেমনটা এর আগেও দেখা গিয়েছে শহরের দু’টি ঘটনায়। ২০১৫ সালে রবিনসন স্ট্রিটে একটি বাড়িতে মৃতা দিদির দেহ আগলে মাস ছয় কাটিয়েছিলেন ভাই পার্থ দে। শেষে উদ্ধার হয় দিদির কঙ্কাল। সপ্তাহ দুই আগে বাইপাসের কাছে একটি সরকারি আবাসনেও ঘটে এমন ঘটনা। এক মহিলার দেহ উদ্ধার করতে গিয়ে পুলিশ দেখে, নির্বিকার ভাবে মুড়ি খাচ্ছেন মানসিক অসুস্থ দিদি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy