Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

খাস কলকাতায় জন্মদিনের পার্টিতে খুন! বন্ধুর পেটে বোতল ঢোকাল কিশোর

জন্মদিনের পার্টিতে শুরু হয়েছিল বচসা। তার জেরেই মদের বোতল ভেঙে এক কিশোরের পেটে, হাতে কোপাতে শুরু করল তারই এক বন্ধু। শনিবার বিকেলে বালিগঞ্জের সানি পার্কের ঘটনা। পুলিশ জানায়, পেটে গুরুতর আঘাত নিয়ে লুটিয়ে পড়েছিল আবেশ দাশগুপ্ত (১৭) নামে ওই কিশোর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৬ ০২:৪৯
Share: Save:

জন্মদিনের পার্টিতে শুরু হয়েছিল বচসা। তার জেরেই মদের বোতল ভেঙে এক কিশোরের পেটে, হাতে কোপাতে শুরু করল তারই এক বন্ধু। শনিবার বিকেলে বালিগঞ্জের সানি পার্কের ঘটনা। পুলিশ জানায়, পেটে গুরুতর আঘাত নিয়ে লুটিয়ে পড়েছিল আবেশ দাশগুপ্ত (১৭) নামে ওই কিশোর। ঢাকুরিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। নিহত কিশোরের বাড়ি টালিগঞ্জ থানা এলাকায়। রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।

পুলিশ জানিয়েছে, লেখক অমিত চৌধুরীর মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে এ দিন দুপুরে আনোয়ার শাহ রোডের একটি ক্লাবে লাঞ্চ করতে গিয়েছিল আবেশ-সহ সতেরো জন বন্ধু। সেখান থেকে ফিরে বিকেলে তারা জড়ো হয় তাঁদের সানি পার্কের ফ্ল্যাটে। কিছু ক্ষণ গল্পগুজবের পরে সবাই নীচে নেমে আসে। বেসমেন্ট সংলগ্ন লনে শুরু হয় হইহুল্লো়ড়। চলে মদ্যপান। আবাসনের বেসমেন্ট থেকে এ দিন মদের বোতল, গ্লাস বাজেয়াপ্ত করেছেন তদন্তকারীরা।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, সেই সময় কোনও বিষয় নিয়ে বচসা শুরু হয়। তার জেরেই এক কিশোর মদের বোতল ভেঙে আবেশের উপরে চড়াও হয়। তার পেটে, বুকে, কাঁধে কোপাতে থাকে। তদন্তকারীরা জানায়, অভিযুক্ত যুবককে চিহ্নিত করা গিয়েছে। তবে ঘটনার পরেই সে চম্পট দেয়। তার খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।

ওই আবাসনের নিরাপত্তারক্ষী এবং পুলিশ সূত্রের খবর, আবেশকে লুটিয়ে পড়তে দেখে অমিতবাবুর মেয়ে তার বাবা-মাকে ডাকে। তার পরে অমিতবাবু, তাঁর স্ত্রী এবং মেয়ে আবেশকে নিজেদের গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু তাকে বাঁচানো যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, পেটের পাশাপাশি আবেশের বাঁ হাত এবং হাঁটুতেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

এ দিন রাতে অমিতবাবুদের ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায়, ঘর বেলুন দিয়ে সাজানো। তাঁদের এক পরিচারিকা জানান, পরিবারের সবাই ঢাকুরিয়ার ওই বেসরকারি হাসপাতালে রয়েছেন।

পুলিশ সূত্রে খবর, আবেশের বাবা এ বছরের গোড়াতেই মারা গিয়েছেন। রাতে আবেশের মা ও অন্য পরিজনেরা হাসপাতালে এলে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। পরে আবেশের মা জানান, অমিত চৌধুরীর মেয়ের সঙ্গে তাঁর ছেলের পরিচয় ছিল না। তার এক বন্ধু এ দিন তাকে ওই পার্টিতে নিয়ে গিয়েছিল। দুপুরেই আবেশ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। সন্ধে সাতটা নাগাদ তার এক বন্ধু ফোন করে জানায়, একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। আবেশকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেই খবর পেয়েই তিনি হাসপাতালে আসেন। সেখানে ছেলের মৃত্যুসংবাদ শুনে অসুস্থ হয়ে পড়েন আবেশের মা। হাসপাতালেই তাঁর চিকিৎসা করা হয়।

ঘটনার পরেই বালিগঞ্জ থানার অফিসারেরা সানি পার্কের ওই আবাসনে যান। সন্ধ্যায় আসেন গোয়েন্দা বিভাগের হোমিসাইড শাখার তদন্তকারীরাও। তাঁরা আবাসনের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেন। তবে পুলিশ সূত্রের খবর, বেসমেন্ট বা পার্কিং লটে কোনও সিসিটিভি নেই।

জন্মদিনের পার্টিতে বন্ধুদের বচসা ঘিরে এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা কী ভাবে ঘটল, তা বুঝে উঠতে পারছেন না অনেকেই। সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ মিত্রের মতে, এখন আনন্দের ধরনটাই খুব উগ্র হয়ে যাচ্ছে। যেন যথেষ্ট হিংস্র হতে না পারলে বন্ধুদের সঙ্গে তাল মেলানো যায় না। ‘‘এদের বয়স অনেক কম। তাই হয়তো এই ভাবনার মধ্যে ঢুকে নিজেকে আর সামলাতে পারেনি। তার ফলই এত ভয়ঙ্কর হয়েছে’’— বলছেন তিনি।

মনোবিদ উশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ‘‘বিশ্বায়নের ফলে ভি়ডি়ও গেম থেকে কার্টুন, সব কিছুই সমাজকে আরও উগ্র করে তুলছে। সেই উগ্রতাই যেন এই প্রজন্মের আচরণে বেরিয়ে আসছে। ফলে সামাজিক মূল্যবোধও নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE