Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

জুয়ার ঠেকে গণ্ডগোল ঘিরে গুলিতে খুন যুবক

জুয়া খেলা নিয়ে বচসা এবং তার জেরে এক যুবককে খুনের অভিযোগ উঠল এক দল দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে। শুক্রবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বজবজের রামচন্দ্রপুরে। পুলিশ জানায়, শেখ মফিজুল (১৮) নামে নিহত ওই যুবকের বাড়ি স্থানীয় বিশ্বাসপাড়ায়। পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় পাঁচ দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

শেখ মফিজুল।

শেখ মফিজুল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৫ ০১:৪১
Share: Save:

জুয়া খেলা নিয়ে বচসা এবং তার জেরে এক যুবককে খুনের অভিযোগ উঠল এক দল দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে। শুক্রবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বজবজের রামচন্দ্রপুরে। পুলিশ জানায়, শেখ মফিজুল (১৮) নামে নিহত ওই যুবকের বাড়ি স্থানীয় বিশ্বাসপাড়ায়। পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় পাঁচ দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম নিয়াজ হোসেন ওরফে টারজান, জাকির হোসেন, শেখ মুস্তাফা, শেখ মকিম এবং শেখ মফিজুল। যদিও শেখ আক্রম নামে মূল অভিযুক্ত এখনও অধরাই।

এই খুনের কারণ নিয়ে অবশ্য পরস্পর-বিরোধী বক্তব্য মিলেছে। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, জুয়া খেলার প্রতিবাদ করতে গিয়েই প্রাণ দিতে হল মফিজুলকে। অন্য দিকে, পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জেরায় জানিয়েছে, মফিজুলও তাদের সঙ্গে জুয়া খেলছিল এবং সে হেরে যাওয়াতেই শুরু হয় বচসা।

পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে কিছু দূরে পূজালিতে একটি মেলায় গিয়েছিল মফিজুল। সেখানে জুয়া খেলা হচ্ছিল বলে জেনেছে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ওই খেলাকে কেন্দ্র করেই রাত সাড়ে আটটা নাগাদ স্থানীয় দুষ্কৃতী আক্রম এবং দলবলের সঙ্গে বচসা শুরু হয় মফিজুলের। বেশ কিছুক্ষণ গোলমালের পরে বাড়ি ফিরে আসে মফিজুল। এর পরেই রাত বারোটা নাগাদ তাকে ফের বাড়ি থেকে মেলায় ডেকে নিয়ে যায় আক্রমেরা। পুলিশ জেনেছে, আক্রম মফিজুলের বন্ধু ছিল। রাতে আবার তারা মেলায় গেলে সেখানে ফের শুরু হয় বচসা। এর পরেই আক্রম ও তার কয়েক জন শাগরেদ মফিজুলকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় বলে অভিযোগ। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, প্রায় ৬-৭টি গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। দৌড়ে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছিল মফিজুল। তখনই একটি গুলি এসে লাগে তার বুকে।


শোকবিহ্বল মা।

ধৃতেরা পুলিশকে জানিয়েছে, ওই দিন মেলায় তাদের সঙ্গে জুয়া খেলতেই এসেছিল মফিজুল। খেলায় হেরে যায় সে। এর পরে মত্ত অবস্থায় থাকা মফিজুল গোলমাল শুরু করে। এ নিয়ে আক্রম ও মফিজুলের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ বচসা চলে। হুমকি-পাল্টা হুমকির পরে বাড়ি চলে যায় মফিজুল। রাতে ফের তাকে বাড়ি থেকে ডেকে আনার কথা অবশ্য স্বীকার করেছে ধৃতেরা। তবে তাদের নয়, আক্রমের ছোড়া গুলিতেই মফিজুলের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। তাদের বক্তব্যের সত্যতা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

এ কথা অবশ্য অস্বীকার করেছে মফিজুলের পরিবার। তারা জানিয়েছে, দশ ভাইয়ের মধ্যে সব চেয়ে ছোট মফিজুল। সে কোনও দিনই জুয়া খেলেনি। রঙের কাজ করত সে। ওই দিন পূজালির মেলায় জুয়া খেলার প্রতিবাদ করতে গিয়েই আক্রম ও তার দলবলের সঙ্গে মফিজুলের বচসা হয় বলে দাবি পরিবারের। সেই গোলমালের সূত্রেই ওই রাতে ফের তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয় বলে পুলিশে অভিযোগ করেছেন মফিজুলের পরিজনেরা।

পুলিশ মেলার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জেনেছে, মফিজুল মাটিতে পড়ে গেলে পাঁচ-ছ’জন যুবক তাকে টেনেহিঁচড়ে, চ্যাংদোলা করে মাঠের বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন লোকজন তেড়ে এলে জখম যুবককে ফেলে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। ইতিমধ্যে খবর যায় পুলিশে। পুলিশ আসার আগেই অবশ্য স্থানীয়েরা আক্রমের চার শাগরেদকে ঘিরে ফেলে। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। পরে ধরা পড়ে আরও এক জন। তবে তাদের কাছে কোনও আগ্নেয়াস্ত্র মেলেনি। পুলিশের অনুমান, দুষ্কৃতীরা সেগুলি পুকুরে ফেলে দিয়েছে। অস্ত্রের খোঁজে পুকুরে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে খবর, আক্রমের বিরুদ্ধে এর আগেও বেশ কিছু জায়গায় গোলমাল করার অভিযোগ রয়েছে। এমনকী, পুর-নির্বাচনেও তাকে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দাপাদাপি করতে দেখা গিয়েছে। শুক্রবারের এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারাও। তাঁদের অভিযোগ, আক্রম ও তার দলবল বহুদিন ধরেই এলাকার ত্রাস হয়ে উঠেছে। আগেও কয়েক বার তারা অনেককেই হুমকি দিয়েছে। তা সত্ত্বেও পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে ঘুরে বেড়াত আক্রম। শুক্রবারের ঘটনার পরে আক্রম পালিয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ দানা বেঁধেছে মফিজুলের পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। আক্রম ও বাকি অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে সরব হয়েছেন তাঁরা।

এই খুনের ঘটনায় সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলিও। শনিবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ ঘটনাস্থল থেকে ঘুরে এসে অভিযোগ করেন, ‘‘জুয়া ও মদ খাওয়ার প্রতিবাদ করেছিল নিহত যুবক। এ রাজ্যে প্রতিবাদ করলেই খুন হতে হয়।’’ এ দিন কলকাতায় ছিলেন কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী হর্ষবর্ধন। তাঁকে সব জানিয়েছেন রাহুলবাবু। রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীকেও জানানো হবে বলে বিজেপি সূত্রে খবর।

আবার বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘‘ক্রমেই জঙ্গলের রাজত্বের দিকে এগোচ্ছে। অপদার্থ সরকার। তোলাবাজদের সরকার। সমাজবিরোধীদের মদতকারী সরকার। এখানে মদের ঠেকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে খুন হতে হয়। আর বিষমদে মারা গেলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়!’’ বিমানবাবুর অভিযোগ, ‘‘দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়াতেই তারা উৎসাহিত হয়ে এমন কাজ করছে।’’ সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য বৃন্দা কারাট বলেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলাহীনতায় এ রাজ্য রেকর্ড করেছে। গুন্ডারাজ চলছে। প্রথমে প্রতিবাদ করে বামপন্থীরা আক্রান্ত হয়েছেন। এখন সাধারণ মানুষও আক্রান্ত হচ্ছেন। পূজালিই তার প্রমাণ।’’

তবে এই ঘটনা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি তৃণমূলের মহাসচিব তথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘পূজালিতে কী হয়েছে, না জেনে কোনও মন্তব্য করব না।’’

— নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE