দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ পরপর তিনটে গুলির আওয়াজ। চমকে উঠেছিলেন দমদম ক্যান্টনমেন্ট দু’ নম্বর লেভেল ক্রসিং সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। অনেকে ভেবেছিলেন বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে অষ্ট্রেলিয়ার উইকেট পড়ার উল্লাসে বাজি ফাটছে। কিন্তু রেললাইনের দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে যান স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তাঁরা দেখেছেন, খুব কাছ থেকে এক যুবককে গুলি করে পালাচ্ছে তিন দুষ্কৃতী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাদের দু’জনকে তাড়া করে ধরে ফেলেন এলাকার বাসিন্দারা।
বৃহস্পতিবার ভরদুপুরে জনবহুল এলাকায় গুলি চালানোর এই ঘটনায় প্রশ্নের মুখে দমদমের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, দিনের বেলাতেই দুষ্কৃতীরা যদি এত সাহস দেখাতে পারে, তা হলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? এ দিনের ঘটনাস্থলের খুব কাছেই মাস দুয়েক আগে একটি ভ্যাট থেকে বেশ কয়েকটি তাজা বোমা উদ্ধার হয়েছিল। স্থানীয়দের অভিযোগ, দমদম ক্যান্টনমেন্ট সংলগ্ন এলাকা দুষ্কৃতীদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। নামমাত্র পুলিশি টহলকে পরোয়াই করছে না দুষ্কৃতীরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন ক্যান্টনমেন্ট রেল লাইন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মনোজ দেবনাথকে (৩৪) খুব কাছ থেকে পেটে, বুকে ও মাথায় তিনটে গুলি ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। এর পরে রেললাইন বরাবর দৌড়োতে থাকে তারা। গুরুতর জখম অবস্থায় মনোজকে দমদম মিউনিসিপ্যাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। পুলিশ জানায়, মনোজ ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন সংলগ্ন এলাকার একটি বস্তিতে থাকেন। স্টেশনের ধারে তিনি জমি-বাড়ির দালালির কাজ করেন বলে খবর।
ঘটনাস্থল থেকে দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ২৫ থেকে ৩০ মিটার দূরে। প্ল্যাটফর্মে প্রচুর মানুষের ভিড়। কাছেই লেভেল ক্রসিং দিয়ে গাড়ি যাতায়াত করছে। কাছাকাছি চলছে মেট্রো রেলের কাজও। ফলে আশপাশে বহু মানুষ ছিলেন। প্রাথমিক ভাবে প্রত্যক্ষদর্শীরা হতভম্ব হয়ে গেলেও দ্রুত তা কাটিয়ে উঠে দুষ্কৃতীদের পিছনে ধাওয়া করেন। লাইন সংলগ্ন লক্ষ্মীনারায়ণ রোড ধরে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে যায় দুই দুষ্কৃতী। সাধারণ মানুষই তাদের চড়-থাপ্পড় মেরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ধৃতদের নাম তারক ঘোষ ও পিকাই বিশ্বাস। তাদের কাছ থেকে একটি বন্দুক মিলেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এমন ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্কিত স্থানীয়েরা। তাঁদের বেশির ভাগের একটাই প্রশ্ন দিনের বেলা জনবহুল এলাকায় এ ভাবে গুলি চালানোর সাহস দুষ্কৃতীরা পায় কী করে? স্থানীয় বাসিন্দা বিপুল দাস বলেন, ‘‘খেলা দেখব বলে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরছিলাম। পরপর তিনটে গুলির আওয়াজে চমকে উঠি। প্রথমে ভেবেছিলাম কেউ বোমা ফাটাচ্ছে। পরে রেললাইনের ধারে গিয়ে দেখি এক জন রেললাইনে পড়ে কাতরাচ্ছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে শরীর। পালানোর পথে ওরা যদি আরও গুলি ছুড়ত, কী যে হতো!’’ আর এক স্থানীয় বাসিন্দার কথায়, ‘‘সাধারণ মানুষ যদি তাড়া করে দুষ্কৃতীদের ধরে পুলিশের হাতে তুলে না দিত, তা হলে তো ওরা গুলি চালিয়ে পালিয়েই যেত!”
ঘটনাস্থল রেল লাইনের ধারে। তাই তদন্তে নেমেছে রেল পুলিশ। আবার দুষ্কৃতীরা ধরা পড়েছে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট এলাকায়, লক্ষ্মীনারায়ণ রোডে। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দাপ্রধান অজয় ঠাকুর বলেন, ‘‘আমি এলাকার বাইরে ভিন্ রাজ্যে আছি। অন্য অফিসারদের থেকে জেনে নিন।’’ কমিশনারেটের আর এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘ঘটনাটি রেল পুলিশের এলাকায় বলে দুষ্কৃতীদের আমরা জিআরপি-র হাতে তুলে দিয়েছি।’’ এলাকার আইন-শৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে অবশ্য ওই কর্তার দাবি, ‘‘দু’একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা প্রমাণ করে না এলাকার আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে। আমাদের এখানে গত এক বছরে পুলিশের টহল অনেকটাই বেড়েছে। তবে দমদমের মতো বিস্তীর্ণ এলাকার সর্বত্র সব সময়ে পুলিশের টহল কার্যত সম্ভব নয়। তবু অনেক পরিচিত দুষ্কৃতীই গত এক বছরে ধরা পড়ে জেলের ঘানি টানছে।’’
অন্য দিকে, রেল পুলিশ সুপার (শিয়ালদহ ডিভিশন) দেবাশিস বেজ বলেন, ‘‘মৃত মনোজ দেবনাথ ও ধৃত দুই দুষ্কৃতী, সকলেরই আগে অপরাধের রেকর্ড আছে। তিন জনেরই পুলিশের খাতায় নাম রয়েছে।” পুলিশের অনুমান, মনোজের সঙ্গে পুরনো কোনও শত্রুতার জেরেই এই ঘটনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy