Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আত্মহত্যার ‘চেষ্টা’ নিহত নেতার স্ত্রীর

পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার রাতে চন্দন ও মধুমিতাকে মুখোমুখি বসিয়ে কয়েক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। সেই সূত্রেই তাঁরা জানতে পারেন, মধুমিতার দু’টি মোবাইল।

জখম মধুমিতা মিস্ত্রি। রবিবার, বাঙুর হাসপাতালে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

জখম মধুমিতা মিস্ত্রি। রবিবার, বাঙুর হাসপাতালে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৮ ০২:১১
Share: Save:

সোনারপুরের শ্রমিক নেতা সমীর মিস্ত্রিকে খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁর স্ত্রী মধুমিতা মিস্ত্রি এবং মধুমিতার প্রেমিক চন্দন মণ্ডলকে। রবিবার পুলিশ লক-আপের শৌচাগারে নিজের গলার নলি ও হাতের শিরা কাটার অভিযোগ উঠল মধুমিতার বিরুদ্ধে। প্রসঙ্গত, এই ঘটনায় চন্দনকে রাখা হয়েছে পুলিশি হেফাজতে। মধুমিতাকে জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছিল। শনিবার বারুইপুর মহকুমা আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাকে ফের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। সেই মতো সন্ধ্যাতেই মধুমিতাকে সোনারপুর থানায় নিয়ে আসা হয়। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, শিরা ও নলি কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল ওই অভিযুক্ত।

পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার রাতে চন্দন ও মধুমিতাকে মুখোমুখি বসিয়ে কয়েক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। সেই সূত্রেই তাঁরা জানতে পারেন, মধুমিতার দু’টি মোবাইল। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাঁধুনির কাজ করার সময়ে একটি মোবাইল সঙ্গে রাখত সে। সেটি থেকেই চন্দনের সঙ্গে কথা বলত। রবিবার সকালে মধুমিতাকে সঙ্গে নিয়ে ওই ফোনটি উদ্ধার করার পরিকল্পনা করেছিলেন তদন্তকারীরা। তা তাকে জানিয়েও দেওয়া হয়েছিল।

এক তদন্তকারী জানান, শনিবার জেরার পরে সারা রাত মধুমিতা থানার লক-আপে মাথা নিচু করে বসেছিল। এ দিন সকালে এক বার চা খায়। সকাল ৯টা নাগাদ সে শৌচাগারে যাবে বলে কর্তব্যরত মহিলা পুলিশকর্মীকে জানায়। সোনারপুর থানার দোতলায় মহিলাদের শৌচাগার। কিন্তু তাড়া আছে বলায় মধুমিতাকে একতলায় পুলিশকর্মীদের ব্যবহারের জন্য শৌচাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু বেশ কিছু ক্ষণ পরেও সে না বেরোনোয় সন্দেহ হয় কর্তব্যরত মহিলা পুলিশকর্মীর। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘কোনও অভিযুক্ত শৌচাগারে গেলে দরজায় ছিটকিনি দেওয়া হয় না। এ দিন কয়েক বার ডেকেও মধুমিতার সাড়া পাওয়া যায়নি। একটু পরে শৌচাগার থেকে গোঙানির শব্দ
পেয়ে দরজা ঠেলে দেখি, মেঝে রক্তে ভেসে যাচ্ছে। রক্ত বেরোচ্ছে ওই অভিযুক্তের বাঁ হাতের শিরা ও গলার নলির পাশ থেকে।’’

পুলিশ জানিয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে মধুমিতাকে সোনারপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে তাকে ভর্তি করা হয় এম আর বাঙুর হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ওই মহিলার শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল। সে কথা বলতে পারছে।

প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা জেনেছেন, সোনারপুর থানার একতলায় ওই শৌচাগারে এক পুলিশকর্মী দাড়ি কাটতেন। সেখান থেকেই সম্ভবত মধুমিতা ব্লেড পেয়েছিল। বারুইপুর জেলার পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘ব্লেডের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

তদন্তকারীদের কথায়, শনিবার রাতে দুই অভিযুক্তকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরার সময়ে মধুমিতা তাঁদের জানায়, কী ভাবে স্বামীকে খুনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। চন্দনকে দিনের পর দিন মানসিক চাপ দিয়ে সে-ই যে সমীরবাবুকে খুন করতে বাধ্য করেছিল, তা-ও স্পষ্ট হয়। সেই সূত্রেই মধুমিতার দ্বিতীয় মোবাইলের বিষয়টি উঠে আসে। মধুমিতা তদন্তকারীদের জানিয়েছে, দু’বছর আগে সে ফোনটি কিনলেও বাড়িতে আনত না। তার সঙ্গে চন্দনের সম্পর্কের কথা জেনে যাওয়ার পর থেকে সমীরবাবু মধুমিতাকে সন্দেহ করতে শুরু করেন। মাঝেমধ্যেই ওই মোবাইল থেকে তিনি বিভিন্ন নম্বরের খোঁজ করতেন।

অভিযুক্ত পুলিশকে আরও জানায়, সে কারণেই ফোনটি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করার সময়ে সঙ্গে রেখে দিত সে। তদন্তকারীদের অনুমান, দ্বিতীয় ফোনটির খোঁজও পুলিশ পেয়ে যাওয়ায় মানসিক ভাবে আরও ভেঙে পড়ে মধুমিতা। তার জন্যই সে এ দিন শিরা ও নলি কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madhumita Mistry Attempted Suicide
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE