Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

শোভন-ছকে ভোট জিততে কাজের ঢল আর ঢালাও নিয়োগ

পুরভোটের দামামা বাজতেই এক দিকে কাজের বন্যা এবং অন্য দিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যত বেশি সম্ভব লোক নিয়োগ করা। ভোটের আগে বুধবার মেয়র পরিষদের শেষ বৈঠকে উদ্যোগ ছিল এমনই। স্বভাবতই বিরোধীরা বলছেন, পুরোটাই নির্বাচনী চাল।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

পুরভোটের দামামা বাজতেই এক দিকে কাজের বন্যা এবং অন্য দিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যত বেশি সম্ভব লোক নিয়োগ করা। ভোটের আগে বুধবার মেয়র পরিষদের শেষ বৈঠকে উদ্যোগ ছিল এমনই। স্বভাবতই বিরোধীরা বলছেন, পুরোটাই নির্বাচনী চাল।

পুরসভা সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকের সবচেয়ে নজরকাড়া বৈশিষ্ট্য ছিল মূল ৯টি আলোচ্য বিষয়ের বাইরে আরও ৫৪টি বিষয় (মিটিং আউটসাইড অ্যাজেন্ডা বা এমওএ) অনুমোদন। পুর অফিসারদের কথায়, মূল অ্যাজেন্ডার বাইরের এতগুলো বিষয় মেয়র পরিষদের বৈঠকে আগে কখনও আনা হয়নি। আসলে ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে গেলে আর কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। তাই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তড়িঘড়ি অনুমোদনের জন্য এ ভাবে এমওএ হিসেবে বৈঠকে তোলা হয়েছে। এ দিন এমওএ হিসেবে এমন কিছু বিষয় অনুমোদিত হয়েছে, যাতে মূলত উপকৃত হবেন তৃণমূল অধ্যুষিত এলাকার বাসিন্দারা। পাশাপাশি এতে একইসঙ্গে অস্থায়ী ভাবে বেশ কয়েকশো লোককে নিয়োগও করা যাবে। মাসখানেক আগে ঠিক এ ভাবেই তৃণমূল অধ্যুষিত ওয়ার্ডগুলির হাজারখানেক ক্লাবকে ২ লক্ষ টাকা করে পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানেও লক্ষ্য সেই পুরভোট।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতার জঞ্জাল অপসারণে স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। আরও ১৩-১৪ হাজার ১০০ দিনের কর্মী রয়েছেন সেই কাজেই। এর উপরে পুরভোটের মুখে শহরের ৫টি বরোয় কয়েকটি রাস্তায় জঞ্জাল অপসারণের জন্য আরও ১২ কোটিরও বেশি টাকা বরাদ্দ করছে পুরবোর্ড। যা নিয়ে শোরগোল পড়েছে পুরসভাতেই। পুর-অফিসারদের মতে, এমনিতেই লোক বেশি। তার উপর ফের ওই কাজে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করার কোনও কারণ নেই। ভোটের দিকে তাকিয়ে শুধু পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি চলছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এটা নিয়মমাফিক বলেই জানান।

মেয়র পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত জেনে স্তম্ভিত ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্যায়। রাজাবাজার অঞ্চলের ওই কাউন্সিলরের কথায়, “আমার এলাকায় কিছু বস্তিতে শৌচাগারের দরজা-জানলা নেই। মহিলাদের অস্বস্তির অন্ত নেই। বিরোধী দলের বলে আমার কথায় গা করে না পুরবোর্ড।” বিরোধী দলনেত্রী সিপিএমের রূপা বাগচী বলেন, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এটা হয়েছে। ওই সব বরোয় তৃণমূলের আসন বেশি। তাই সেখানে তুষ্ট করার খেলায় নেমেছে পুরবোর্ড।” তাঁর অভিযোগ, “সামনে তো আর অধিবেশন নেই। তাই কিছু বলার সুযোগ কেড়ে নিতেই শেষ সময়ে শোভনবাবুরা এই ‘অনৈতিক’ কাজ করলেন।”

প্রসঙ্গত, কলকাতাকে জঞ্জালমুক্ত শহর করার লক্ষ্যে অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় কম্প্যাক্টর মেশিন বসানো শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৫০টির মতো মেশিন বসেছে। সেগুলি স্বয়ংক্রিয় হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই কর্মীর সংখ্যা আর না বাড়ানোই উচিত ছিল। কিন্তু পুরসভায় তার উল্টোটাই দেখা যাচ্ছে। বিরোধী কাউন্সিলরদের বক্তব্য, শহরে বস্তির সমস্যা এখনও প্রবল। শহরের নিকাশির হালও সেই মানে পৌঁছয়নি। সে দিকে নজর না দিয়ে ভোটের মুখে লোক নিয়োগের হিড়িক বাড়ছে।

শুধু জঞ্জাল নয়, রাস্তায় ম্যাস্টিক বসানোর অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে। এ দিনের বৈঠকে ঠিক হয়েছে শরত্‌ বসু রোড, পণ্ডিতিয়া রোড-সহ আরও কয়েকটি এলাকার রাস্তায় ম্যাস্টিক বসবে। খুব শীঘ্রই ওই কাজ শুরু করতে পুর-ইঞ্জিনিয়ারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মেয়র পরিষদের শেষ বৈঠকে এ সব অনুমোদন করা নিয়ে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সবই নিয়ম মেনে করা হয়েছে। বিরোধীরা যা কিছু বলুক। ওদের কথায় কান দিই না। এমন আগেও হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE