Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

অত্যাচারের শিকার শিশু, মাকে হুমকি-মারধর

ধর্ষিতা শিশুকন্যাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে গিয়ে জেরবার হলেন মা। ধর্ষণে অভিযুক্তের সঙ্গীরা পথ আটকে হুমকি দেওয়াতে দু-দুবার হাসপাতাল থেকে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে থানায় গিয়েও দীর্ঘক্ষণ হয়রান হতে হয়েছে। শেষ অবধি এক আত্মীয়ার সাহায্যে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করে মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করতে পারলেন তিনি। পাঁচ দিন আগে উলুবেড়িয়ার অভিরামপুর গ্রামের ওই মহিলার ছ’বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করে পড়শি এক যুবক ঝোপে ফেলে রেখে গিয়েছিল বলে অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০৪
Share: Save:

ধর্ষিতা শিশুকন্যাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে গিয়ে জেরবার হলেন মা। ধর্ষণে অভিযুক্তের সঙ্গীরা পথ আটকে হুমকি দেওয়াতে দু-দুবার হাসপাতাল থেকে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে থানায় গিয়েও দীর্ঘক্ষণ হয়রান হতে হয়েছে। শেষ অবধি এক আত্মীয়ার সাহায্যে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করে মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করতে পারলেন তিনি।

পাঁচ দিন আগে উলুবেড়িয়ার অভিরামপুর গ্রামের ওই মহিলার ছ’বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করে পড়শি এক যুবক ঝোপে ফেলে রেখে গিয়েছিল বলে অভিযোগ। মেয়েটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় একবার হাসপাতাল, একবার নার্সিং হোমের সামনে গিয়েও ভিতরে ঢুকতে পারেননি তিনি। ওই যুবকের তিন আত্মীয়ের শাসানিতে ফিরে আসতে হয়েছে। শেষমেশ এক আত্মীয়ের সাহায্যে শুক্রবার রাত ৯টা নাগাদ তিনি মেয়েকে উলুবেড়িয়া হাসপাতালে নিয়ে যান। দীর্ঘক্ষণ সেখানে বসিয়ে রেখে তাঁদের পাঠানো হয় থানায়। শিশুটিকে নিয়ে থানায় গেলে সেখানেও অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখা হয় বলে অভিযোগ। রাত ২টো নাগাদ মহিলা পড়শি শেখ সইদুলের বিরুদ্ধে মেয়েকে ধর্ষণ এবং শেখ কালো, শেখ রফিক এবং শেখ নুর ইসলামের বিরুদ্ধে তাঁকে বাধা দেওয়া এবং ভয় দেখানোর অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করে।

ওই রাতেই শেখ কালো এবং শেখ রফিককে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার শিশুটি উলুবেড়িয়া আদালতের বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দেয়। পুলিশের দাবি, শিশুটির শরীরে ধর্ষণের প্রাথমিক চিহ্ন মিলেছে। এসডিপিও (উলুবেড়িয়া) শ্যামলকুমার সামন্ত বলেন, “দুই অভিযুক্ত পলাতক। দ্রুত গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।”

হাসপাতালে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখা হল কেন? উলুবেড়িয়া হাসপাতালের সুপার সুদীপরঞ্জন কাঁড়ার জানান, ধর্ষণের চিকিৎসা শুরুর আগে পুলিশে অভিযোগ করাই নিয়ম। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছিল, তা জানার জন্য বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ওই মহিলা মেয়েকে এক ওস্তাগরের কাছে জরির নকশা আনতে পাঠান। পুলিশে দায়ের করা অভিযোগে তিনি জানান, সে দিন মেয়ে দীর্ঘক্ষণ পরেও না ফেরায় খুঁজতে বেরিয়ে একটি ঝোপের আড়াল থেকে তিনি মেয়েকে উদ্ধার করেন। মেয়ে তখন গোঙাচ্ছিল। বাড়ি ফিরে মেয়ের কাছ থেকে ধর্ষণের কথা শুনে তিনি চেঁচামেচি করেন। সেই সময়ে বাড়িতে আসে নুর ইসলাম, শেখ কালো এবং শেখ রফিক। তারা কাউকে কিছু না জানানোর জন্য মহিলাকে হুমকি দেয় এবং সইদুলের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করে মীমাংসার কথা বলে।

কিন্তু পরিস্থিতি জটিল হয় ১৬ সেপ্টেম্বর। মহিলা পুলিশকে জানিয়েছেন, সে দিন সকালেই মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার রক্তক্ষরণ হয়। উলুবেড়িয়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেও ওই তিন যুবক পৌঁছে যায় এবং তাঁকে হুমকি দিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য করে বলে অভিযোগ। ফেরার পথে মহিলা একটি নার্সিংহোমেও মেয়েকে ভর্তি করানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ওই তিন জন সেখানেও তাঁকে যেতে দেয়নি বলে অভিযোগ। এমনকী, কেন তিনি হাসপাতালে গিয়েছিলেন, সেই প্রশ্ন তুলে বাড়িতে এসে তিন জন তাঁকে মারধরও করে। শুক্রবার সন্ধ্যায় শিশুটি আরও অসুস্থ হয়ে পড়ায় মহিলা পাশের গ্রাম শ্রীরামপুরে তাঁর এক আত্মীয়কে খবর দেন। ওই আত্মীয়ের উদ্যোগেই শিশুটিকে উলুবেড়িয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তার পরেও জোটে হেনস্থা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

southbengal uluberia child victimization rape
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE