শূন্যপদ শূন্যই থেকে গিয়েছে!
অথচ নিত্য নতুন পদ তৈরি করে শ’য়ে শ’য়ে কর্মী নিয়োগ করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল শাসিত হাওড়া পুরসভার বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে, এত সংখ্যক কর্মী নিয়োগ করা হলেও প্রকাশ্য কোনও বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরীক্ষা করে দেখা হয়নি প্রার্থীর যোগ্যতার মাপকাঠিও।
এ ব্যাপারে বিরোধী দলের কাউন্সিলরদের অভিযোগ, পুরসভা যখন ধারের টাকায় শহর সাজাতে গিয়ে দেনার দায়ে কাবু, তখন কিছু পুরকর্তার ঘনিষ্ঠদের অস্থায়ী পদে ‘অবৈধ’ ভাবে চাকরি দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন পদে স্থায়ী কর্মীদের থেকেও বেশি বেতন দেওয়া হচ্ছে নতুন কিছু কর্মীকে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ খোদ পুর-অফিসার ও কর্মীদের একাংশও। তাঁদের অভিযোগ, এমন ভাবে নিয়োগ এর আগে এই পুরসভায় হয়নি। এত লোককে প্রতি মাসে বেতন দিতে হলে পুরসভার কোষাগারে টান পড়বেই।
এমনিতে হাওড়া পুরসভায় প্রায় দেড় হাজার পদ শূন্য। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে পুরসভায় ২২০০ কর্মী রয়েছেন। পুরসভার এক অফিসার বললেন, “সরকারি অনুমোদন না মেলায় শূন্য পদগুলিতে লোক নেওয়া যায়নি। কিন্তু যে সব নতুন পদে লোক নেওয়া হয়েছে, তাতে অত লোক প্রয়োজন ছিল না। এটা পুরসভার কাছে মারাত্মক অর্থনৈতিক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি মাসে শুধু বেতন দিতে হচ্ছে প্রায় ১ কোটি টাকা।’’
পুরসভার অবশ্য দাবি, কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে অস্থায়ী পদে এবং চুক্তির ভিত্তিতে। শহরের দ্রুত উন্নতির জন্য। পুর-কমিশনার নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “যে সব কর্মীকে নেওয়া হয়েছে, তাঁদের সবই অস্থায়ী চাকরি। অস্থায়ী ও চুক্তির ভিত্তিতে লোক নিয়োগ করতে এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের প্রয়োজন হয় না। তবে সকলেরই পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।”
একই দাবি করেছেন মেয়র রথীন চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, “অধিকাংশ চাকরি প্রার্থীকে সিলেকশন কমিটি পরীক্ষা নিয়ে তাঁদের নাম সুপারিশ করেছে। তবে কিছু লোককে অ্যাডহক ভিত্তিতেও নেওয়া হয়েছে শহরের উন্নতির জন্য। পুরসভায় কর্মী সংখ্যা কম থাকায় এ ছাড়া উপায় ছিল না।”
এই ভাবে কর্মী নিয়োগ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, অধিকাংশ কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে মূলত কয়েক জন মেয়র পারিষদ ও কাউন্সিলরের দেওয়া তালিকার ভিত্তিতে। তাঁদের অঙ্গুলি হেলন অনুযায়ীই কাজ করেছে সিলেকশন কমিটি।
আর এ কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন খোদ পুর-কমিশনারও। তিনি বলেন, “কাউন্সিলরদের পাঠানো কর্মীদের তালিকা অনুযায়ী সিলেকশন কমিটি প্রার্থীদের নাম সুপারিশ করেছে। তাঁদেরই চাকরি হয়েছে।”
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের ডিসেম্বরে হাওড়া পুরসভায় ক্ষমতা দখলের পরে বিভিন্ন দফতর, বোরো অফিস ও ওয়ার্ড অফিসে কর্মী নিয়োগ শুরু করে তৃণমূল বোর্ড। গত এক বছর ধরে একশো দিনের কাজের আওতায় প্রায় ১৩০০ কর্মী নিয়োগ করা হয় সাফাই দফতরে। দৈনিক মজুরি ও চুক্তির ভিত্তিতে অ্যাসেসমেন্ট দফতরে নেওয়া হয় ১৫০ জনকে। সাতটি বোরো অফিসে নেওয়া হয় ২৩০ জনকে। মোটর ভেহিকলসে ১৫ জনকে, শ্মশানে ২৩ জনকে, প্রতিটি ওয়ার্ডে ত্রিফলা আলো আর লাইসেন্স আদায়ের জন্য নেওয়া হয় ২০০ জনকে।
এ সব ছাড়াও মেয়র, ডেপুটি মেয়র ও চেয়ারম্যান-সহ সাত জন মেয়র পারিষদের অফিসের জন্য তিনটি নতুন পদ তৈরি করা হয়। এই পদগুলি হল এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট, কম্পিউটার অপারেটর ও পিওন। জঞ্জাল দফতরের মেয়র পারিষদ গৌতম চৌধুরী ছাড়া বাকিদের জন্য মোট ৩৭ জনকে ওই তিনটি পদে চাকরিতে নিয়োগ করা হয়। অভিযোগ, ওই পিওন পদে চাকরি দেওয়া হয় পদাধিকারীদের মধ্যে এক জনের পুত্রকেও। এ ছাড়াও আরও কয়েক জন মেয়র পারিষদ ও কাউন্সিলেরর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কে নতুন পদ তৈরি করে মোটা বেতনের চাকরিতে নেওয়া হয়েছে বলে বিরোধী দলের কাউন্সিলরদের অভিযোগ। অভিযোগ, কোনও প্রয়োজন না থাকলেও তৈরি করা হয়েছে জনসংযোগ অফিসারের পদও।
সিপিএম কাউন্সিলর আসরফ জাভেদ বলেন, “কোথা থেকে কী ভাবে লোক নেওয়া হচ্ছে, তা আমরা জানি না। এটুকু জানি, পুরসভায় চাকরি দেওয়া নিয়ে সম্পূর্ণ স্বজনপোষণ ও তুষ্টিকরণ চলছে।’’
পুরসভার বিজেপি কাউন্সিলর গীতা রাই বলেন, “প্রতিটি নিয়োগই হয়েছে অবৈধ ভাবে। কোনও বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়নি, পরীক্ষাও নেওয়া হয়নি। অধিকাংশ কাউন্সিলরকে অন্ধকারে রেখে এই কাজ হয়েছে। এ নিয়ে ওদের দলের কাউন্সিলরেরাই যথেষ্ট ক্ষুব্ধ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy