Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কাগজ কুড়োতে গিয়ে পাওয়া ২২ হাজার টাকা থানায় দিল আসমিন

তার পিঠে স্কুলের ব্যাগ নয়, থাকে ঢাউস বস্তা। প্রতিদিন সকালে তার কাজ রাস্তা থেকে কাগজ কুড়োনো। অভাবের সংসারে বাবা-মাকে সাহায্য করা। পড়াশোনা শেখেনি। শুধু জেনেছে, পড়ে থাকা টাকা নিতে নেই। আর তাই শনিবার কাগজ কুড়োতে বেরিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা ২২ হাজার টাকা পেয়েও সে বাড়ি নিয়ে আসেনি। জমা দিয়ে এসেছে থানায়। পাণ্ডুয়া রেল স্টেশনের ধারের একটি ঝুপড়ির বাসিন্দা, বছর এগারোর আসমিন খাতুনের এই সততা দেখে আপ্লুত থানার অফিসার থেকে গ্রামবাসী সকলেই।

২২ হাজার টাকার বান্ডিল কুড়িয়ে পেয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয় ঝুপড়ির বাসিন্দা, বছর এগারোর আসমিন খাতুন। —নিজস্ব চিত্র

২২ হাজার টাকার বান্ডিল কুড়িয়ে পেয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয় ঝুপড়ির বাসিন্দা, বছর এগারোর আসমিন খাতুন। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাণ্ডুয়া শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:২১
Share: Save:

তার পিঠে স্কুলের ব্যাগ নয়, থাকে ঢাউস বস্তা।

প্রতিদিন সকালে তার কাজ রাস্তা থেকে কাগজ কুড়োনো। অভাবের সংসারে বাবা-মাকে সাহায্য করা।

পড়াশোনা শেখেনি। শুধু জেনেছে, পড়ে থাকা টাকা নিতে নেই।

আর তাই শনিবার কাগজ কুড়োতে বেরিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা ২২ হাজার টাকা পেয়েও সে বাড়ি নিয়ে আসেনি। জমা দিয়ে এসেছে থানায়।

পাণ্ডুয়া রেল স্টেশনের ধারের একটি ঝুপড়ির বাসিন্দা, বছর এগারোর আসমিন খাতুনের এই সততা দেখে আপ্লুত থানার অফিসার থেকে গ্রামবাসী সকলেই। হুগলির পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “মেয়েটি যে সততার পরিচয় দিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। ওকে পুরস্কৃত করার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে।” পাণ্ডুয়া বইমেলা কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, কিছুদিন পরেই মেলা শুরু হবে। মেলার মঞ্চে তারাও মেয়েটিকে পুরস্কৃত করবে।

এত প্রশংসায় অবশ্য লাজুক মেয়েটি বিশেষ বিচলিত হয়নি। সে শুধু বলে, “কাগজ কুড়োই। কিন্তু টাকা পেলে তো নিতে নেই, তাই ফিরিয়ে দিয়েছি।’’

প্রতিদিন সকালে কাগজ কুড়োতে বস্তা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে আসমিন। বস্তা বোঝাই করে দুপুরে সে বাড়ি ফেরে। শনিবারটা অবশ্য ছিল অন্যরকম। সে এ দিন ‘কাজ’ করছিল ক্ষীরকুণ্ডী-নামাজগ্রাম পঞ্চায়েতের সোনারগাঁ গ্রামে। বেলা ১২টা নাগাদ রাস্তার পাশে ঝোপের ধারে একটি টাকার বান্ডিল তার চোখে পড়ে। মেয়েটি সেই বান্ডিল হাতে তুলে নেয়।

ওই ২২ হাজার টাকার প্রতিটি নোটই ছিল এক হাজারের। টাকার অঙ্ক নিয়ে আসমিনের বিশেষ ধ্যানধারণা নেই। কিন্তু তার মনে হয়েছিল, ওই টাকা নিরাপদ জায়গায় পৌঁছনো দরকার। বিষয়টি সে দু’এক জন গ্রামবাসীকে জানায়। এর পরে গ্রামবাসীদের সহায়তায় সোজা থানায় চলে আসে। মেয়েটির মুখে সব শুনে পুলিশকর্মীরা থ হয়ে যান। এর পরে পাণ্ডুয়া থানার ওসি সুমন রায়চৌধুরীর হাতে ওই টাকা তুলে দেয় আসমিন। সুমনবাবু-সহ থানার অন্য অফিসাররা আপ্লুত হয়ে পড়েন। পুলিশ তাকে কেক-বিস্কুট খাওয়ায়।

ঝুপড়িতে গিয়ে মেয়েটির দিনমজুর বাবা-মা বা আট বছরের ভাই কাউকেই পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আসমিনদের ঝুপড়িতে বিদ্যুত্‌ নেই, শৌচাগার নেই, দু’বেলা পেট পুরে খাবার জোটে না তাদের। অর্থাত্‌, জীবনধারণের ন্যূনতম সুবিধাও তাঁদের নেই। তবু, আসমিনা এত কষ্টের মধ্যেও যে সততার দৃষ্টান্ত রেখেছে, তাতেই আপ্লুত সকলে। রমেন পাইন নামে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘মেয়েটি টাকা হাতে ঘোরাঘুরি করছে শুনে দু’-এক জন পরিচিতকে বলি ওকে সাহায্য করতে। ও খুব ভাল একটা উদাহরণ তৈরি করল।” পাণ্ডুয়া বইমেলা কমিটির সভাপতি জামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘মেয়েটি আজ যা করল তা শিক্ষণীয়।”

লোকজনের হাজারো প্রশংসাতেও অবশ্য পিঠের বস্তাটি এক বারের জন্যও হাতছাড়া করেনি আসমিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE