Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

খেলাধূলা ও সংস্কৃতিতে অতীতের গরিমা ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী আরামবাগ পুরসভা

মাঠ আছে, সংস্কার নেই। নেই খেলাধুলোর চর্চাও। তবে সংস্কৃতি চর্চা বা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে কোনও খামতি নেই। যদিও অনেকের মতে অতীতের ধ্রপদী রূপ বদলে তা এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চটুল নাচ-গানের অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। শহরের ক্রীড়াপ্রেমী এবং সংস্কৃতিমনস্ক মানুষের এ নিয়ে উদ্বেগও কম নেই। এক সময় আরামবাগ শহরের সংস্কৃতি চর্চায় নাটক ছিল এক নম্বরে। ৬০ থেকে ৮০-র দশক অবধি নিয়মিত নাটক মঞ্চস্থ হত।

আরামবাগের অন্যতম প্রধান খেলার মাঠ জুবিলি পার্ক এখন যে চেহারায়।

আরামবাগের অন্যতম প্রধান খেলার মাঠ জুবিলি পার্ক এখন যে চেহারায়।

পীযূষ নন্দী
শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৪ ০১:৪৩
Share: Save:

মাঠ আছে, সংস্কার নেই। নেই খেলাধুলোর চর্চাও। তবে সংস্কৃতি চর্চা বা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে কোনও খামতি নেই। যদিও অনেকের মতে অতীতের ধ্রপদী রূপ বদলে তা এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চটুল নাচ-গানের অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

শহরের ক্রীড়াপ্রেমী এবং সংস্কৃতিমনস্ক মানুষের এ নিয়ে উদ্বেগও কম নেই। এক সময় আরামবাগ শহরের সংস্কৃতি চর্চায় নাটক ছিল এক নম্বরে। ৬০ থেকে ৮০-র দশক অবধি নিয়মিত নাটক মঞ্চস্থ হত। সঙ্গো পাল্লা দিত আবৃত্তি, রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি, হাস্যকৌতুকের অনুষ্ঠান। এখন বছরে একবার কি দুবার হয় নাটক হয়। হাস্য কৌতুকের অনুষ্ঠান প্রায় উঠেই গিয়েছে। পরিবর্তে সংস্কৃতির ক্ষেত্রে প্রথম স্থানে উঠে এসেছে নাচ, গান।

ছবি আঁকা, আবৃত্তি, অনুষ্ঠান সঞ্চলনা নিয়ে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা চিললেো নতুন মুখ আসছে না বললেই চলে। বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে ডাক পড়ে অতীতের পুরনো মুখেরই। ডাক পড়ে বিভাংশু দত্তর মতো পুরনো শিল্পীর। আরামবাগের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কবি সাধন বারিকের আক্ষেপ, “শহরে সংস্কৃতির হাল খুব খারাপ। খালি নাচ-গান করে জন্মদিন পালন হচ্ছে। নাটক-কবিতা আবৃত্তির মতো অনুষ্ঠান নিয়ে কারও আগ্কহ নেই। কদাচিৎ সে সব হলেও দর্শক মেলাই ভার হয়ে ওঠে।

সংস্কৃতির এই রূপ বদল নিয়ে আফসোস থাকলেও সংস্কৃতি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত এবং দীর্ঘদিন ধরে অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় যুক্ত বিভাংশুবাবু বলেন, “আমরা নাটক হারিয়েছি ঠিকই। কিন্তু নাচ গানের অনুষ্ঠানগুলো থেকে উঠে আসা আরামবাগের অনেক ছেলে-মেয়ে টিভিতে সুযোগ পাচ্ছে। এটা ভেবে তৃপ্তি পাই।” শহরের সংস্কৃতিমনস্ক মানুষের আর একটা তৃপ্তি, আরামবাগে একমাত্র সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রেই কোনওদিন রাজনৈতিক প্রভাব পড়েনি।

তবে মাঠ থাকলেও খেলাধূলার চর্চা ক্রমশ কমছে বলেই মনে করেন শহরবাসী। আরামবাগ পুরসভা এলাকার ১৮ টি ওয়ার্ডে স্কুল এবং বিভিন্ন ক্লাব মিলিয়ে মোট ৯টি খেলার মাঠ। অধিকাংশ স্কুল কিংবা ক্লাবের বড় মাঠ বলতে পারুল, বসন্তপুর ও বয়েজ স্কুল মাঠ। এ ছাড়া কালীপুরে বিজয় ক্রীড়াঙ্গন নামে একটি খেলার মাঠ তৈরি করছে পৌরসভা। তবে অধিকাংশ মাঠই রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে। তলানিতে ঠেকেছে খেলাধূলার চর্চাও। মহকুমার অতীত দিনের নামকরা খেলোয়াড় আরামবাগের নয়ন তরফদার, প্রতীত কর্মকার, হুমায়ুন খান প্রমুখর আক্ষেপ, ৪০-এর দশক থেকে আরামবাগে ফুটবল, ভলিবলে জোয়ার ছিল। ফুটবলে তখন আরামবাগের অনেকেই কলকাতার বড় দলগুলিতে খেলতেন। এখন মাঠে ছেলেদের পাওয়া যায় না। কলকাতার টালিগঞ্জ অগ্রগামী, হাওড়া ইউনিয়ন সহ কয়েকটি নামী ক্লাবের হয়ে ১৯৭৬ সাল থেকে ’৮১ সাল পর্যন্ত ময়দানে দাপিয়েছেন নয়ন তরফদার। প্রাক্তন এই ফুটবলারের অভিযোগ, “ফুটবলের এমন অবস্থার জন্য অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম প্রধান হল মাঠের সমস্যা।” কলকাতার নানা ক্লাবে খেলা আর এক প্রাক্তন ফুটবলার হুমায়ুন খানের মতে, খেলাধূলার চর্চা নিয়ে প্রসাসন উদ্যোগী হলে মহকুমায় ফুটবলের সোনালি ফের ফিরে আসবে।

তবে মাঠগুলির দূরবস্থা নিয়ে সকলেই একমত। অভিযোগ, প্রশাসনের তরফে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মাঠগুলো ধানখেতে পরিণত হয়েছে। মহকুমা খেলাধূলাকে স্বমহিমায় ফেরাতে মাঠ সংস্কার যে জরুরি তা নিয়ে সরব ক্রীড়াপ্রেমীরা। শহরের সবচেয়ে প্রাচীন জুবিলি পার্ক দেখলে ক্রীড়াপ্রেমীদের অভিযোগ যে কতটা খাঁটি তা সহজেই মালুম হয়। বর্ষার ভিজে মাটিতে যেমন চলছে গাড়ি চালানোর শিক্ষাদান, তেমনি মাঠে গর্ত করে চলছে মাটি চুরি। কোনও অজানা হামলায় গোলপোস্টগুলি হামেশাই ভেঙে যায়। এমনকী গোলপোস্টের অভাবে বাঁশ পুঁতে মহকুমা স্তরের খেলা আয়োজনের মতো ঘটনাও ঘটে প্রায়ই। যদিও পুরকর্তৃপক্ষের দাবি তাঁরা মাঠগুলি সংস্কারের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী বলেন, “ফুটবল-সহ বিভিন্ন খেলায় অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতে ইতিমধ্যেই আমার শহরের বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ হুমায়ুন খানকে প্রধান রেখে একটি কমিটি গড়েছি। পুর এলাকার ৭০টি ক্লাবকে নানা ক্রীড়া সরঞ্জাম দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে।”

তিনি আরও জানান, দৌলতপুরের মাঠ সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। একটি ইনডোর স্টেডিয়ামেরও প্রস্তাবও পাঠানো পুরমন্ত্রীর কাছে। পাশাপাশি সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রেও পুরসভার সহযোগিতার অভাব ঘটবে না বলে জানিয়েছেন স্বপনবাবু। এর পদক্ষেপ হিসাবে পুরপ্রধান জানান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য রবীন্দ্রভবনের ভাড়া শিথিল করার কথা ভাবা হচ্ছে। এ ছাড়া আরামবাগের ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে। শহরের প্রায় ৬০০ বছরের প্রাচীন বিশালক্ষী মন্দির চত্বর সংরক্ষণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

একদা আরামবাগ বলতে উচ্চারিত হত প্রফুল্লচন্দ্র সেন এবং আরামবাগ হ্যাচারি। প্রফুল্লচন্দ্র সেনকে আরামবাগের রূপকার তথা আরামবাগের গাঁধী আখ্যা দিয়েছিলেন এখানকার মানুষ। পুর উদ্যোগে রাজ্যের প্রাক্তন এই মুখ্যমন্ত্রীর ব্যবহার করা গাড়িটি সংগ্রহ করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে। তাঁর চিঠি ও ব্যবহৃত নানা সামগ্রী নিয়ে একটি সংগ্রহশালা তৈরিতেও উদ্যোগী হয়েছে পুরসভার। বন্ধ হয়ে যাওয়া বি কে রায়ের আরামবাগ হ্যাচারীকে যাতে ফের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায় সে জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে সংস্থার উত্তরাধিকারদের কাছে।

(শেষ)

ছবি: মোহন দাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE