Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে স্পেশাল অফিসার নিয়োগ সমবায় ব্যাঙ্কে

নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠতে থাকায় বৈদ্যবাটি-শেওড়াফুলি সমবায় ব্যাঙ্কের প্রতি আস্থা হারাচ্ছিলেন গ্রাহকেরা। তাঁদের আস্থা ফেরাতে অস্থায়ী ‘বোর্ড অব ডিরেক্টর্স’-এর কাজের সময়সীমা না বাড়িয়ে ওই ব্যাঙ্কে স্পেশাল অফিসার নিয়োগ করল রাজ্য সরকার। নির্বাচিত পরিচালন সমিতি গড়তে দ্রুত ভোট করানোর চেষ্টাও শুরু হয়েছে। অনিয়মের অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে সমবায় দফতর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেওড়াফুলি শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৪ ০২:২৮
Share: Save:

নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠতে থাকায় বৈদ্যবাটি-শেওড়াফুলি সমবায় ব্যাঙ্কের প্রতি আস্থা হারাচ্ছিলেন গ্রাহকেরা। তাঁদের আস্থা ফেরাতে অস্থায়ী ‘বোর্ড অব ডিরেক্টর্স’-এর কাজের সময়সীমা না বাড়িয়ে ওই ব্যাঙ্কে স্পেশাল অফিসার নিয়োগ করল রাজ্য সরকার। নির্বাচিত পরিচালন সমিতি গড়তে দ্রুত ভোট করানোর চেষ্টাও শুরু হয়েছে। অনিয়মের অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে সমবায় দফতর।

বাম আমলের শেষ দিক থেকেই ওই ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠতে শুরু করে। অনিয়মের অভিযোগে ব্যাঙ্কের তৎকালীন ম্যানেজারকে পুলিশ গ্রেফতারও করে। কিন্তু অভিযোগ ওঠা বন্ধ হয়নি। ২০১১ সালে তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরেই ব্যাঙ্কের আগের পরিচালন সমিতির সদস্যেরা পদত্যাগ করেন। ব্যাঙ্ক পরিচালনার জন্য অস্থায়ী ভাবে নয় সদস্যের ‘বোর্ড অব ডিরেক্টর্স’ গঠন করে রাজ্য সরকার। সেখানে শাসক দলের লোকজনেরই প্রাধান্য ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি সে ভাবে পাল্টায়নি। অভিযোগ ওঠাও বন্ধ হয়নি। বহু গ্রাহক ইতিমধ্যে তাঁদের গচ্ছিত অন্তত ৭-৮ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। নতুন গ্রাহকের সংখ্যাও যে সে ভাবে বাড়েনি তা মেনে নিয়েছেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।

রাজ্য সমবায় দফতর সূত্রের খবর, মনোনীত ‘বোর্ড অব ডিরেক্টর্স’কে বলা হয়েছিল, ভোট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত পরিচালন সমিতি তৈরি করতে হবে। কিন্তু এত দিনেও ভোট প্রক্রিয়ার জন্য কোনও পদক্ষেপ করেননি ‘বোর্ড অব ডিরেক্টর্সে’র সদস্যেরা। সম্প্রতি রাজ্য সমবায় দফতরের এক সচিব ‘বোর্ড অব ডিরেক্টর্সে’র পরিবর্তে স্পেশাল অফিসার নিয়োগের নির্দেশিকা পাঠান। তাতে জানানো হয়েছে, জেলা সমবায় উন্নয়ন আধিকারিক সোমনাথ বিশ্বাস স্পেশাল অফিসারের দায়িত্ব সামলাবেন। তিনি নির্বাচনের বিষয়টিও দেখবেন। বোর্ড অব ডিরেক্টর্সকে সরানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলেও নির্দেশিকায় বলা হয়। তাদের কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে দু’মাস আগে।

৯৪ বছরের প্রাচীন ওই ব্যাঙ্কটির দু’টি শাখা রয়েছে ভদ্রেশ্বর এবং নওগাঁতে। মূলধন ১০০ কোটি টাকারও বেশি। হুগলি জেলা সমবায় দফতরের আধিকারিক অমিত কুমার বলেন, “স্পেশাল অফিসার আপাতত ব্যাঙ্কের যাবতীয় বিষয় দেখভাল করছেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভোট প্রক্রিয়া শুরুর চেষ্টা হচ্ছে।” কয়েক দিনের মধ্যেই ওই ব্যাঙ্কে নির্বাচন সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি হতে পারে এবং সুষ্ঠু পরিচালনার পাশাপাশি গ্রাহকদের ভরসা ফেরানোও নির্বাচিত কমিটি তৈরির মূল উদ্দেশ্য বলে তিনি জানান। ব্যাঙ্কের চিফ ম্যানেজার সৌরভ চক্রবর্তী জানান, স্পেশাল অফিসারের তত্বাবধানে এক জন এআরও (অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার) নিয়োগ করা হয়েছে নির্বাচন প্রক্রিয়া চালানোর জন্য। এত দিনেও ভোট করতে না পারা প্রসঙ্গে ‘বোর্ড এব ডিরেক্টর্সে’র সদ্য প্রাক্তন চেয়ারম্যান অমিতাভ মজুমদারের দাবি, “বিভিন্ন মামলা-মকদ্দমা এবং জটিলতার জন্যই নির্বাচন করানো যায়নি।”

সমবায় দফতর সূত্রের খবর, বর্তমানে ওই ব্যাঙ্কের অনাদায়ী ঋণ রয়েছে অন্তত ১৬ কোটি টাকা। ‘বোর্ড এব ডিরেক্টর্সে’র পরিচালনাধীন থাকার সময়েও অনিয়মের অভিযোগ পিছু ছাড়েনি ওই ব্যাঙ্কে। অভিযোগ, ব্যাঙ্কের নিজস্ব একটি গাড়ি থাকা সত্ত্বেও অন্য একটি গাড়ি ভাড়া নেওয়া হয় সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনে। এ জন্য অনেক টাকা বেরিয়ে যায়। কাছের লোককে নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগও ওঠে। ব্যাঙ্কের বিভিন্ন শাখায় কোর-ব্যাঙ্কিংয়ের জন্য সফ্টওয়্যার কিনতে ৭৬ লক্ষ টাকার টেন্ডার হয়। কোন্নগরের একটি সংস্থা সেই বরাত পায়। সেই সফ্টওয়্যার আজও বসেনি।

বোর্ড অব ডিরেক্টর্সের সদস্যেরা অভিযোগ মানেননি। তাঁদের দাবি, টেন্ডার হওয়া সফ্টওয়্যার বসানোর প্রক্রিয়া চলছে। অমিতাভবাবুর দাবি, ‘‘আমাদের সময়কালে কোনও অনিয়ম হয়নি। স্বচ্ছতার সঙ্গে এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ম মেনে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বরং আগের অনিয়মের বিরুদ্ধে আমরাই আইনি পদক্ষেপ করি। ঋণের টাকা উদ্ধারেও সচেষ্ট হই। আগের আমলের এক শ্রেণির কর্মী আমাদের বোর্ডের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE