Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

চুক্তিভঙ্গ, ব্যাঙ্কের অসহযোগিতায় ব্যবসায়ীকে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ

বছর ছয়েক আগে আয়লা-ঝড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল পোলবা-দাদপুর ব্লকের দেরুই গ্রামের একটি চালকল। বিমা সংস্থার কাছ থেকে মেলেনি ক্ষতিপূরণ। বন্ধ করে দেওয়া হয় চালকল। কোনও উপায় না দেখে চালকলের মালিক, চুঁচুড়ার বুনো কালীতলার বাসিন্দা সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্বামী সঞ্জীববাবু দ্বারস্থ হন হুগলি জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের।

প্রকাশ পাল
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৪৬
Share: Save:

বছর ছয়েক আগে আয়লা-ঝড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল পোলবা-দাদপুর ব্লকের দেরুই গ্রামের একটি চালকল। বিমা সংস্থার কাছ থেকে মেলেনি ক্ষতিপূরণ। বন্ধ করে দেওয়া হয় চালকল। কোনও উপায় না দেখে চালকলের মালিক, চুঁচুড়ার বুনো কালীতলার বাসিন্দা সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্বামী সঞ্জীববাবু দ্বারস্থ হন হুগলি জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের। গত সোমবার আদালতের প্রধান বিচারক নারায়ণচন্দ্র চক্রবর্তী কারখানা-মালিকের সঙ্গে চুক্তিভঙ্গের অপরাধে সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থাকে বিমার টাকা মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া ছাড়াও ওই সংস্থার এক কর্তা এবং ঋণে ছাড় না দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের এক আধিকারিককে জরিমানা করেছেন।

ব্যাঙ্ক-ঋণ নিয়ে বেশ কয়েক বছর আগে ওই চালকলটি তৈরি করেন সুজাতাদেবীরা। সেই সময়েই বেসরকারি ওই বিমা সংস্থার সঙ্গে চুক্তিতে ঠিক হয়, আগুন লাগা থেকে ঝড়, বন্যা-সহ যে কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে চালকলের সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিমার সুবিধা মিলবে। কিন্তু আয়লায় চালকলের ভবন, প্ল্যান্ট, যন্ত্রপাতি-সহ নানা জিনিস নষ্ট হয়। তিন দিনের মধ্যে তাঁরা সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থাকে বিষয়টি জানিয়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। কিন্তু বিমা সংস্থা সমীক্ষক পাঠাতে ইচ্ছাকৃত ভাবে দেরি করে বলে অভিযোগ। পরে সমীক্ষক গিয়ে চালকলের ভগ্নদশা দেখে বিমা সংস্থাকে রিপোর্টে জানান, সুজাতাদেবীদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ লক্ষ ৭১ হাজার ৩১০ টাকা দেওয়া হোক। কিন্তু তা দেওয়া হয়নি।

২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা দায়ের করে সুজাতাদেবী অভিযোগে জানান, বিমা সংস্থা ইচ্ছাকৃত ভাবে অবহেলা করে সমীক্ষা-রিপোর্টটি এড়িয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কও এ ব্যাপারে সহযোগিতা করেনি। কিন্তু ওই ব্যাঙ্কই চালকল তৈরির সময়ে ওই বিমা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিল। দু’পক্ষের অবহেলায় যথেষ্ট ভুগতে হয় তাঁদের। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি হয়রানি, মানসিক যন্ত্রণার শিকার হন তাঁরা। অর্থাভাবে মিল বন্ধ করে দিতে হয়। ব্যাঙ্কের ঋণও তাঁরা পরিশোধ করতে পারছিলেন না। সুজাতাদেবী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিমা সংস্থার চুঁচুড়ার ডিভিশনাল ম্যানেজার এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের কৃষি উন্নয়ন বিভাগের চিফ ম্যানেজারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান সুজাতাদেবী।

দু’পক্ষই অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে। আদালতে বিমা সংস্থার দাবি, ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে চালকল কর্তৃপক্ষ যে দাবি করেছিলেন, তা যথার্থ ছিল না। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা বিমা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। সংস্থার তরফে কোনও নিষ্ক্রিয়তা ছিল না। কারখানা কর্তৃপক্ষই সমীক্ষকের সঙ্গে সহযোগিতা করেননি।

শুনানির পরে বিচারক অবশ্য ওই ব্যাঙ্ক এবং বিমা সংস্থার দাবি উড়িয়ে দেয়। বিচারকের বক্তব্য, বিমা সংস্থা ক্ষতিপূরণ না দিয়ে ঠিক করেনি। আয়লায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষেত্রে ঋণের টাকা শোধ করার বিষয়টি শিথিল করতে বলেছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক সে কথা মানেনি। বিচারক রায়ে জানান, সমীক্ষকের ঠিক করা ১০ লক্ষ ৭১ হাজার ৩১০ টাকা বার্ষিক ৯% সুদ সমেত মিটিয়ে দিতে হবে বিমা সংস্থাকে। এ ছাড়া বিমা সংস্থা এবং ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে ১০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে অভিযোগকারিণীর মানসিক যন্ত্রণা এবং হয়রানির জন্য। তাঁদের মামলার খরচ বাবদ ৫ হাজার টাকা মেটাতে হবে দু’পক্ষকে। এ ছাড়াও, অবৈধ ব্যবসা চালানোর দায়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ককে ৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এক মাসের মধ্যে পুরো টাকা ফেরত না দিলে ৯% হারে সুদ দিতে হবে।

আদালতের রায়ে খুশি সঞ্জীববাবু। তিনি বলেন, “সুবিচার পেলাম। ব্যাঙ্ক এবং বিমা সংস্থার চরম অসহযোগিতায় আমরা কপর্দকশূন্য হয়ে পড়ি। মিলে ১৮ জন কাজ করতেন। মিল বন্ধ হওয়ায় তাঁদের পরিবারও সমস্যায় পড়ে। এ বার ব্যাঙ্ক এবং বিমা সংস্থা একটু সদয় হলে মিলটা আবার খুলতে পারব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE