কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য ক্ষুদ্র বা মাঝারি শিল্প স্থাপনে প্রথম থেকেই জোর দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই লক্ষ্যে গ্রামগঞ্জ থেকে উদ্যোগপতি খুঁজে বের করতে এ বার নিজেরাই পথে নেমেছেন ব্লক স্তরের শিল্প-আধিকারিকেরা। হুগলিতেও শুরু হয়ে গিয়েছে সেই কাজ। অর্থাত্, যাঁরা ছোট বা মাঝারি শিল্প স্থাপনে আগ্রহী, তাঁদের আর প্রশাসনের দরজায় না গেলেও চলবে। প্রশাসনই যাচ্ছে তাঁদের কাছে। তাঁদের কারিগরি সহায়তা দেওয়ারও পরিকল্পনা করা হয়েছে। নতুন এই উদো্যাগে খুশি ছোট শিল্পোদ্যোগীরা।
গ্রামগঞ্জের ক্ষুদ্র বা মাঝারি শিল্পোদ্যোগীরা পরামর্শ বা ঋণের জন্য মূলত ব্লক শিল্প দফতরে যোগাযোগ করেন। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই ওই দফতর ঠিকমতো তাঁদের দিশা দেখাতে পারে না বা গয়ংগচ্ছ ভাব দেখায় বলে অভিযোগ বহু ছোট শিল্পোদ্যোগীর। রয়েছে ব্যাঙ্ক-ঋণ পেতে সহযোগিতা না করার অভিযোগও। ওই দফতরের পক্ষ থেকে কিছু ক্ষেত্রে পরিকাঠামোর অভাবের কথা মেনে নেওয়া হয়েছে। তাদের আবার পাল্টা অভিযোগও রয়েছে, শিল্পোদ্যোগীদেরও পরামর্শ নেওয়ার সেই মানসিকতা নেই বলে। তা ছাড়া, শিল্প না করে সরকারি অনুদান ভোগের নজিরও রয়েছে বলে দাবি ওই দফতরের।
এই সব চাপান-উতোর সরিয়ে রেখে এ বার নতুন রাস্তায় হাঁটছে ব্লক শিল্প দফতরগুলি। রাজ্য সরকারের সঙ্গে চুক্তিমতো কলকাতার ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট’ (আইআইএম) এবং ‘কাউন্সিল ফর সায়েনটিস্ট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ’ (সিএসআইআর) গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ইতিমধ্যে দু’দফায় ব্লক স্তরের শিল্প দফতরের আধিকারিকদের দক্ষতা বাড়ানোর প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
হুগলি জেলা শিল্পকেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার সুবোধ প্রামাণিক বলেন, “উদ্যোগপতি বাছাইয়ের কাজ বন্ধ নেই। সে কাজ যেমন চলছিল, চলছে। নতুন অভিযানে যাঁরা সত্যিই কিছু করতে চান, সেই রকম সঠিক উদ্যোগপতি চিহ্নিত করা হচ্ছে। পাশে থেকে তাঁদের পরিচালনা করা হবে।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ওই আধিকারিকেরা সম্ভাব্য শিল্পোদ্যোগীদের মানসিকতার আমূল পরিবর্তন ঘটানোর জন্য সচেষ্ট হবেন। অভিভাবকেরা যাতে সন্তানদের অন্য পেশা বাছার পাশাপাশি উদ্যোগপতি হতেও উত্সাহিত করেন সে ব্যাপারে স্কুল স্তর থেকেই সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হবে। নতুন অভিযানে ব্লক শিল্প উন্নয়ন আধিকারিক থাকছেন তৃণমূল স্তরে। তাঁর উপরে থাকছেন সহকারী ম্যানেজার বা ম্যানেজার। তাঁর উপরে জেনারেল ম্যানেজার বা ডেপুটি ডিরেক্টর। সব স্তরেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাঁরা নতুন শিল্প করতে চান, তাঁদের যাতে কারিগরি সহায়তা দেওয়া যায়, সে জন্য জেলা শিল্পকেন্দ্রে একটি কেন্দ্রও খোলা হবে। সেই কারিগরি সহায়তা দেবে আইআইএম এবং সিএসআইআর। আইটিআই বা ওই জাতীয় সংস্থায় যাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, নতুন শিল্পোদ্যোগী হিসেবে প্রাথমিক পর্বে তাঁদের বাছাই করার প্রক্রিয়া চলছে।
নতুন এই প্রচেষ্টায় ধারাবাহিকতা থাকলে তাঁদের উপকারই হবে বলে মনে করছেন জেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জের মানুষ। যেমন, আরামবাগের কাপসিট গ্রামের বছর পঁয়ত্রিশের বিদ্যুত্ পাল বলেন, “যে কোনও শিল্পের প্রকল্প রচনা করতে গেলে যে ন্যূনতম জ্ঞান থাকা দরকার, তা না থাকায় আমাদের মতো বেকারদের সমস্যা হয়। মনে হয় নতুন উদ্যোগে সেই সমস্যা কাটবে।”
বছর তিনেক আগে একটি পেরেক কারখানা তৈরির জন্য গোঘাট-১ ব্লকের পাতুলসরা গ্রামের নবীন পাল ব্লক শিল্প দফতরে পরামর্শ চেয়ে আবেদন জানান। দফতরের কথামতো প্রকল্প তৈরি করলেও ঋণ পেতে বা পণ্য বাজারজাত করার কোনও দিশাই ওই দফতর দেখাতে পারেনি বলে তাঁর অভিযোগ। এখন আলুর ব্যবসা করেন নবীন। সরকারের নতুন প্রচেষ্টায় তিনি খুশি। বলেন, “আধিকারিকেরা যদি নিয়মিত গ্রামে আসেন, পরামর্শ দেন ও গোটা বিষয়টিতে যদি ধারাবাহিকতা থাকে, তা হলে উপকার হবে।”
খানাকুলের পলাশপাই গ্রামের প্রৌঢ় শঙ্কর রায়ও বলেন, “পুঁজির কথা বাদ দিলে ছোট শিল্পের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা কারিগরি পরিকাঠামো এবং উত্পাদিত পণ্য বাজারজাত করা। সে বিষয়ে সরকারি সাহায্য পেলে আমরাও ছেলেকে উদ্যোগপতি হতে উত্সাহ দিতে পারব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy