Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ছেলেকে গঙ্গায় ছুড়ে ফেলে গ্রেফতার মা

তিন বছরের অসুস্থ ছেলে সুস্থ হয়ে উঠবে, এই ‘স্বপ্নাদেশ’ পেয়ে তাকে সেতু থেকে গঙ্গায় ছুড়ে ফেলে দিলেন মা। তার পর থেকে আর খোঁজ মিলছে না শিশুটির। বুধবার রাতে মগরার শঙ্খনগর এলাকার বাসিন্দা সুনীতা সাউ নামে ওই মহিলা বাঁশবেড়িয়ার ঈশ্বরগুপ্ত সেতু থেকে ছেলে শঙ্করকে গঙ্গায় ছুড়ে ফেলে দেন বলে অভিযোগ।

নিখোঁজ শঙ্কর।—নিজস্ব চিত্র।

নিখোঁজ শঙ্কর।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মগরা শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:০১
Share: Save:

তিন বছরের অসুস্থ ছেলে সুস্থ হয়ে উঠবে, এই ‘স্বপ্নাদেশ’ পেয়ে তাকে সেতু থেকে গঙ্গায় ছুড়ে ফেলে দিলেন মা। তার পর থেকে আর খোঁজ মিলছে না শিশুটির।

বুধবার রাতে মগরার শঙ্খনগর এলাকার বাসিন্দা সুনীতা সাউ নামে ওই মহিলা বাঁশবেড়িয়ার ঈশ্বরগুপ্ত সেতু থেকে ছেলে শঙ্করকে গঙ্গায় ছুড়ে ফেলে দেন বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পুলিশ এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের ডুবুরিরা গঙ্গায় তল্লাশি চালায়। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত শিশুটির খোঁজ মেলেনি। গ্রেফতার করা হয় সুনীতাকে। তিনি ছেলেকে ফেলে দেওয়ার কথা কবুল করেছেন বলে পুলিশের দাবি।

পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী জানান, দশ বছরের নীচে কোনও শিশুকে ওই ভাবে ছুড়ে ফেলা হলে তার বাঁচার সম্ভাবনা সাধারণত থাকে না। তাকে মৃত বলেই ধরা হয়। সেই কারণে সুনীতার বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। তাঁর স্বামী উমেশ এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সুনীলবাবু বলেন, “গঙ্গায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে। কী কারণে ওই মহিলা ছেলেকে গঙ্গায় ফেলে দিলেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

এ দিন থানায় সুনীতা অবশ্য দাবি করেছেন, “দিন কয়েক আগে স্বপ্নে মা গঙ্গা আমাকে বলেছিলেন, ছেলেকে ফেলে দিলে সুস্থ করে ফিরিয়ে দেবেন। তাই সেই স্বপ্নাদেশ মতো ফেলে দিই।” পরক্ষণেই নিজের কৃতকর্মের জন্য আক্ষেপ করে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “মাথায় তখন কী হয়েছিল জানি না, ছেলেকে গঙ্গায় ফেলে দিয়ে ভাবলাম কী ভুল কাজই করলাম!”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুনীতার স্বামী উমেশ বাঁশবেড়িয়ার গ্যাঞ্জেস জুটমিলের ঠিকা শ্রমিক। তাঁদের তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে শঙ্কর দ্বিতীয়। তিন মাস বয়সে শঙ্কর খাট থেকে মেঝেতে পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর চোট পায়। তার পর থেকেই সে অসংলগ্ন আচরণ করতে থাকে। চিকিৎসার পাশাপাশি ছেলেকে সুস্থ করার জন্য নানা মন্দিরে পুজো এবং মানতও করছিলেন দম্পতি। সপ্তাহখানেক আগে শঙ্করকে তার মামারবাড়ি মগরার পূর্বপাড়ায় রেখে আসেন তাঁরা। ইদানীং সেখানেই সে থাকত। উমেশ ও সুনীতা সময়মতো গিয়ে ছেলেকে দেখে আসতেন। বুধবার সন্ধ্যায় সুনীতা ছেলেকে নিজের কাছে রাখবেন বলে বাপেরবাড়ি থেকে নিয়ে যান। তার পরে ওই সেতুতে উঠে ছেলেকে ফেলে দেন বলে অভিযোগ।

রাতে কাজ সেরে উমেশ শ্বশুরবাড়িতে ছেলেকে দেখতে যান। সেখানে গিয়ে শোনেন স্ত্রী ছেলেকে নিয়ে গিয়েছেন। বাড়ি ফিরে তিনি ছেলেকে দেখতে পাননি। এ নিয়ে স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেন। তখনই তাঁর স্ত্রী স্বপ্নাদেশের কথা জানিয়ে ছেলেকে গঙ্গায় ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন বলে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন উমেশ। ওই রাতেই উমেশ এবং বাপেরবাড়ির লোকজনকে নিয়ে সেতুর যেখান থেকে ছেলেকে তিনি ফেলে দেন, সেই জায়গাও দেখিয়ে দেন সুনীতা।

উমেশ বলেন, “স্ত্রীর আশঙ্কা ছিল বড় হলে ছেলে পাগল হয়ে যাবে। তাই অনেক সময়েই ছেলেকে কাউকে দিয়ে দেওয়ার কথা বলত। ছেলের জন্য স্ত্রীর মানসিক অবস্থাও খারাপ হচ্ছিল। কিন্তু ও যে ছেলেকে গঙ্গায় ফেলে দেবে, ভাবতে পারিনি।” মেয়ের কৃতকর্মে চমকে গিয়েছেন সুনীতার মা প্রমীলাদেবীও। তিনিও বলেন, “বুধবার রাতে মেয়ে যে ওই কাজ করবে, কিছুই বুঝতে পারিনি।”

শিশুটি স্থানীয় একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পড়ত। সেই কেন্দ্রের কর্মী মিতালি দে বলেন, ‘‘সুনীতা প্রায়ই বলত বড় হলে ছেলেটার মাথা খারাপ হয়ে যাবে। কেউ ওকে নিতে চাইলে দিয়ে দেব। আমরা ওই কথায় গুরুত্ব দিতাম না। কিন্তু নিজের ছেলেকে কেউ গঙ্গায় ফেলে দেবে, এ কথা এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না।”

একই ভাবে বিস্ময়ের ঘোর কাটেনি শঙ্খনগর এলাকার বাসিন্দাদেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

southbengal sunita sau
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE