Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জীর্ণ শ্রীরামপুর স্টেডিয়াম, অন্য মাঠে ফুটবল লিগ

মহকুমা সুপার ডিভিশন ফুটবল লিগ আরম্ভ হয়েছে। অথচ মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার স্টেডিয়ামেই খেলা হচ্ছে না। সংস্কারের অভাবে কার্যত জীর্ণ দশা শ্রীরামপুর স্টেডিয়ামের। তাই সেখানে খেলা ফেলা যাচ্ছে না। স্থানীয় ক্রীড়াপ্রেমীদের অভিযোগ, মাঠটির রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। জায়গায় জায়গায় ঘাস উঠে গিয়েছে। ওই মাঠে শেষ খেলা হয়েছিল প্রায় ন’মাস আগে। এবড়ো-খেবড়ো মাঠে কোনও মতে ফুটবল প্রশিক্ষণ শিবির চলছে বাচ্চাদের।

জায়গায় জায়গায় কাদা জমেছে। এখন পাড়ার ফুটবল খেলা চলে স্টেডিয়ামে।—নিজস্ব চিত্র।

জায়গায় জায়গায় কাদা জমেছে। এখন পাড়ার ফুটবল খেলা চলে স্টেডিয়ামে।—নিজস্ব চিত্র।

প্রকাশ পাল
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৪ ০২:২৬
Share: Save:

মহকুমা সুপার ডিভিশন ফুটবল লিগ আরম্ভ হয়েছে। অথচ মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার স্টেডিয়ামেই খেলা হচ্ছে না। সংস্কারের অভাবে কার্যত জীর্ণ দশা শ্রীরামপুর স্টেডিয়ামের। তাই সেখানে খেলা ফেলা যাচ্ছে না। স্থানীয় ক্রীড়াপ্রেমীদের অভিযোগ, মাঠটির রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। জায়গায় জায়গায় ঘাস উঠে গিয়েছে। ওই মাঠে শেষ খেলা হয়েছিল প্রায় ন’মাস আগে। এবড়ো-খেবড়ো মাঠে কোনও মতে ফুটবল প্রশিক্ষণ শিবির চলছে বাচ্চাদের।

শ্রীরামপুর পুরসভা এবং মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রের খবর, ১৯৫৯ সালে রাজ্যের প্রাক্তন শ্রমমন্ত্রী (শ্রীরামপুরের বাসিন্দা ছিলেন) গোপাল দাস নাগের উদ্যোগে ওই মাঠ নিয়ে শ্রীরামপুর পুরসভার সঙ্গে মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার একটি চুক্তি হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী, পুরসভা মাঠের মালিক হলেও মাঠের এক্তিয়ার ক্রীড়া সংস্থার হাতে থাকে। সত্তরের দশক থেকে বিভিন্ন রকম খেলা হয়ে এসেছে এই মাঠে। ময়দানের বহু নামী খেলোয়াড়ও এখানে খেলেছেন। বছর দশেক আগে এই মাঠে খেলে গিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার জুনিয়র ক্রিকেট দলও। স্টেডিয়ামের অন্যান্য পরিকাঠামোও খারাপ নয়। তা সত্ত্বেও স্টেডিয়ামটি অবহেলার শিকার বলে অভিযোগ মহকুমার ক্রীড়াপ্রেমীদের।

মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক তরুণ মিত্র বলেন, “মাঠ সারাইয়ের জন্য আমরা পুরসভার হাতে দু’লক্ষ টাকা তুলে দিয়েছি। ইতিমধ্যে দরপত্র ডাকাও হয়ে গিয়েছে। পুরসভার তত্ত্বাবধানেই ওই কাজ হবে।” শ্রীরামপুরের পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “বর্ষা কাটলেই কাজ আরম্ভ হবে।”

শ্রীরামপুর এই স্টেডিয়াম মাঠের তিন দিকে গ্যালারি রয়েছে। স্টেডিয়াম বিল্ডিংয়ে রয়েছে ড্রেসিংরুমও। ওই ভবনের দোতলায় অনায়াসে ‘প্রেস বক্স’ বা ‘ভিআইপি’দের বসার ব্যবস্থা করা যায়। শ্রীরামপুর ও রিষড়া স্টেশন থেকেও মাঠের দূরত্ব বেশি নয়। কয়েক মিনিটের ব্যবধানেই রয়েছে জিটি রোড। এক সময়ে মাঠটির চারদিকে রেলিং দিয়েছিল পুরসভা। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসনের ব্যর্থতায়, পাহারার অভাবে দুষ্কৃতীরা লোহার রেলিং কেটে নিয়ে চলে যায়। এর পরে কালেভদ্রে মাঠ সংস্কার হলেও রেলিং আর বসেনি। ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর চারেক আগে প্রায় ৭০ হাজার টাকা দিয়ে মাঠটি শেষ সংস্কার করা হয়েছিল। তার পর থেকে বিভিন্ন ফুটবল প্রতিযোগিতা এবং মহকুমা লিগের খেলা হয়েছে। কিন্তু ক্রমশই বেহাল হয়ে পড়েছে মাঠের অবস্থা। সংস্কার দূরে থাক, মাঠের ন্যূনতম পরিচর্যাও হয়নি। ইতিমধ্যে লোকসভা ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর জনসভাও হয়েছিল এই মাঠে। পরের দিনই তৃণমূল মিঠুন চক্রবর্তী এবং মুকুল রায়ের সভা করে ওই মাঠে। ক্রীড়া সংস্থার কর্তাদের একাংশ স্বীকার করছেন, ওই সময়ে বাঁশ পোঁতার জন্য মাঠে গর্ত করা এবং বহু মানুষ ঢুকে পড়ায় মাঠের ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি, রেলিং না থাকায় যখন তখন যে কেউ মাঠে ঢুকে পড়ে। নির্দ্বিধায় সাইকেল, মোটরবাইক নিয়ে যাতায়াত চলে মাঠের উপর দিয়ে। কেউ কেউ আবার মাঠেই সাইকেল বা মোটরবাইক শিখতে চলে আসেন। স্থানীয় তরুণরাও যখন তখন খালি পায়ে বল নিয়ে মাঠে নেমে পড়ে। ক্রীড়া সংস্থার নিজস্ব কোনও নিরাপত্তারক্ষীও না থাকায় এই বিষয়গুলি আটকানো যাচ্ছে না। ইতিমধ্যেই মাঠের বিভিন্ন অংশে কাদা জমে গিয়েছে। পুরপ্রধান তথা মহকুমা ক্রিড়া সংস্থার কার্যকরী সভাপতি অমিয়বাবু জানান, মাঠের ধার দিয়ে একটি রাস্তা রয়েছে। বিকল্প না থাকায় ওই রাস্তা আটকানো যাচ্ছিল না। সেই সমস্যা মিটতে চলেছে। বিকল্প রাস্তা হলে পাঁচিল দিয়ে গোটা মাঠ ঘিরে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “খালি পায়ে খেলা বন্ধ করতে স্থানীয় লোকজন উদ্যোগী হলে সুবিধা হয়। এলাকার ক্লাবগুলিকে এ ব্যাপারে সাহায্যের জন্য বলেছি।”

শুধু সংস্কার নয়, কেন অন্যান্য জেলার মতো এই স্টেডিয়ামটিকে উন্নত মানের করে গড়ে তোলা যাচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তুলছেন শহরবাসী। তাঁদের বক্তব্য, আইএফএ (ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন) কলকাতার সংলগ্ন জেলাগুলিতে বিভিন্ন খেলা ফেলতে চাইছে। পরিকাঠামো ঠিক থাকলে এই সব মাঠে কলকাতা লিগের খেলাও হতে পারত। ক্রীড়া সংস্থার এক কর্তা বলেন, “পরিকাঠামো একটু ভাল হলেই এই মাঠেও কলকাতা লিগের খেলা হতে পারে।” প্রসঙ্গত, পুরসভার উদ্যোগেই বারাসত বা কল্যাণী স্টেডিয়ামের চেহারা আমূল বদলে গিয়েছে। সেখানে কলকাতা লিগের খেলা হচ্ছে নিয়মিত। পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, স্টেডিয়ামের পরিকাঠামো ঢেলে সাজানোর ব্যাপারে তাঁরা চিন্তাভাবনা করছেন।

পুরসভার চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল উত্তম রায় বলেন, “আমরা মাঠটিকে আধুনিক মানের করে গড়ে তুলতে চাই। কল্যাণীতে গিয়ে মাঠ সংস্কারের খুঁটিনাটি জেনে আসব আমরা। তার পরেই পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা স্থির করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE