Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ দিল্লি রোড

ডাম্পারে পিষ্ট হয়ে নাবালিকার মৃত্যু

বাবার জন্যে দোকানে টিফিন নিয়ে যাওয়ার পথে ডাম্পারের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক নাবালিকার মৃত্যুতে প্রায় চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ হয়ে রইল দিল্লি রোড। মঙ্গলবার সকালে পোলবার সুগন্ধায় দিল্লি রোডে ওই দুর্ঘটনার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মৃত দীপা কোলের (১৩) দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশের একটি টহলদার গাড়ি। কিন্তু সেই গাড়ি ডাম্পারটিকে ধরার কোনও চেষ্টা করেনি, এই অভিযোগ তুলেই কয়েকশো গ্রামবাসী গাছের গুঁড়ি ফেলে প্রায় চার ঘণ্টা ওই সড়ক অবরোধ করেন।

মেয়ের শোকে রাস্তাতেই বিলাপ মায়ের। ইনসেটে দীপা। ছবি: তাপস ঘোষ।

মেয়ের শোকে রাস্তাতেই বিলাপ মায়ের। ইনসেটে দীপা। ছবি: তাপস ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পোলবা শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৪ ০১:২৩
Share: Save:

বাবার জন্যে দোকানে টিফিন নিয়ে যাওয়ার পথে ডাম্পারের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক নাবালিকার মৃত্যুতে প্রায় চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ হয়ে রইল দিল্লি রোড।

মঙ্গলবার সকালে পোলবার সুগন্ধায় দিল্লি রোডে ওই দুর্ঘটনার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মৃত দীপা কোলের (১৩) দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশের একটি টহলদার গাড়ি। কিন্তু সেই গাড়ি ডাম্পারটিকে ধরার কোনও চেষ্টা করেনি, এই অভিযোগ তুলেই কয়েকশো গ্রামবাসী গাছের গুঁড়ি ফেলে প্রায় চার ঘণ্টা ওই সড়ক অবরোধ করেন। ওই এলাকায় গত তিন মাসে চার-পাঁচটি দুর্ঘটনা হলেও যান নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ তোলেন গ্রামবাসীরা।

হুগলির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) তথাগত বসু বলেন, “ওই এলাকায় যাতে যথাযথ ভাবে যান নিয়ন্ত্রণ হয়, তা দেখা হবে। ডাম্পারটির খোঁজে তল্লাশি চলছে।” ডিএসপি ট্র্যাফিক কাজি খালিদ রফিক জানান, সকাল ও বিকেলে ওই এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন থাকে। তা ছাড়া, থানার টহলদার গাড়ি সব সময়েই টহল দেয়। তার মধ্যে যে সব দুর্ঘটনা ঘটছে, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই মামলা করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীপাদের বাড়ি সুগন্দার পূর্বপাড়ায়। তার বাবা জয়দেব কোলের একটি চায়ের দোকান রয়েছে কিচুটা দূরে দিল্লি রোডের ধারে। দীপা সুগন্ধার সারদামণি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। জয়দেববাবুর অসুস্থতার কারণে দীপা তাঁকে দোকানের কাজে সাহায্য করত।

এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ বাড়ি থেকে বাবার জন্য টিফিন নিয়ে সাইকেলে চেপে দোকানের দিকে যাচ্ছিল দীপা। দিল্লি রোডে বাঁ দিক ধরে দোকানের দিকে কিছুটা এগোতেই মগরার দিক থেকে ধেয়ে আসা একটি ডাম্পার পিছন থেকে দীপাকে ধাক্কা মারে। দীপা পড়ে গেলে ডাম্পারের চাকা তাকে পিষে দিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে আসেন।

অবরুদ্ধ দিল্লি রোড। ছবি: তাপস ঘোষ।

ঘটনাস্থলের একটু দূরে পোলবা থানার একটি টহলদার পুলিশের গাড়ি তখন সেখানে পৌঁছে চটজলদি মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে থানায় চলে যায়। বাড়ির লোকজন এবং কিছু গ্রামবাসী ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেহ দেখতে না পেয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তাঁদের অভিযোগ, টহলরত পুলিশের গাড়ি ডাম্পারটিকে ধরার চেষ্টা না করে মৃতদেহটি তুলে নিয়ে চলে যায় কেন? এর পর গ্রামের মানুষ জড়ো হয়ে সকাল ৮টা থেকে দিল্লি রোড অবরোধ শুরু করেন। ওই রাস্তার দু’দিকে বিশাল যানজটের সৃষ্টি হয়। পোলবা থানার ওসি অতীশ দাস বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পেঁৗঁছে অবরোধ তোলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। গ্রামের মহিলারা রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখান। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত তিন মাসে এই একই জায়গায় চার-পাঁচটি দুর্ঘটনা ঘটে গেল। পুলিশ তার পরেও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। গুরুত্বপূর্ণ ওই রাস্তায় সকালের দিকে যান নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু ক্ষণ ট্রাফিক পুলিশের দেখা মিললেও পরে তাঁদের আর দেখা যায় না। ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে যাওয়ার সময়ে জীবন হাতে নিয়ে রাস্তা পার হয়। বেলা সওয়া ১২টা নাগাদ বাড়তি পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। মৃতের পরিবারের জন্য পুলিশ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে।

দীপার বাবা জয়দেববাবু বলেন, ‘‘আমার দুই মেয়ের মধ্যে দীপা ছিল ছোট। আমায় অনেক সাহায্য করত। দুর্ঘটনায় আমার মেয়ের মতো এখানে পর পর কয়েক জনের প্রাণ গেল। কিন্তু পুলিশের কোনও হেলদোল নেই।’’ একই রকম আক্ষেপ শোনা গিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা অজিত দাস-সহ আরও অনেকের গলাতেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE