Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ডিমের পোচ থেকে সয়াবিনের বিরিয়ানি এ বার মিড-ডে মিলে

মিড-ডে মিলে এ বার কর্পোরেট ছোঁয়া! স্কুলের প্রায়ান্ধকার রান্নাঘরে অপরিষ্কার আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হওয়া ডিমের ঝোল-ভাত বা ফুলকপির তরকারি আর নয়। এ বার হুগলির বিভিন্ন স্কুলের কচিকাঁচাদের জন্য মিড-ডে মিলে আসছে ডিম ভুজিয়া, ডিমের পোচ বা সয়াবিনের বিরিয়ানির মতো নানা পদ।

পুরশুড়ার একটি স্কুলে মিড-ডে মিল খাচ্ছে পড়ুয়ারা। —নিজস্ব চিত্র।

পুরশুড়ার একটি স্কুলে মিড-ডে মিল খাচ্ছে পড়ুয়ারা। —নিজস্ব চিত্র।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
পুরশুড়া শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৫৮
Share: Save:

মিড-ডে মিলে এ বার কর্পোরেট ছোঁয়া!

স্কুলের প্রায়ান্ধকার রান্নাঘরে অপরিষ্কার আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হওয়া ডিমের ঝোল-ভাত বা ফুলকপির তরকারি আর নয়। এ বার হুগলির বিভিন্ন স্কুলের কচিকাঁচাদের জন্য মিড-ডে মিলে আসছে ডিম ভুজিয়া, ডিমের পোচ বা সয়াবিনের বিরিয়ানির মতো নানা পদ।

পাল্টাবে রান্নাঘরের চেহারাও। সে জন্য পরিকল্পনাও তৈরি করছে জেলা প্রশাসন। তার মধ্যে রয়েছে রান্নাঘরকে জীবাণুমুক্ত রাখা, যাঁরা রান্নার কাজ করবেন, তাঁদের নির্দিষ্ট পোশাক এবং রান্নার আধুনিক সরঞ্জাম বিলিও। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে প্রশিক্ষণও।

হুগলিতে মিড-ডে মিলকে যে নতুন চেহারায় নিয়ে আসার উদ্যোগ, তা জেলা প্রশাসনেরই বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক মনমীত নন্দা। প্রকল্প রূপায়ণে আর্থিক প্রতিবন্ধকতা যাতে না আসে তার জন্য জেলাশাসক জেলারই দু’টি বেসরকারি সংস্থা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কাছে সাহায্যের আবেদন করেন। ইতিমধ্যে সেই আবেদনে সাড়াও মিলেছে।

মোট দু’টি পর্যায়ে জেলায় প্রায় চার হাজার রন্ধনকর্মী, সুুপারভাইজার এবং শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। গত ২৪ তারিখ থেকে জেলার প্রশাসনিক ভবনে শুরু হয়েছে সেই কাজ। তা শেষ হয়েছে শুক্রবার। ফের ৮ ডিসেম্বর থেকে ওই প্রশিক্ষণের কাজ শুরু হবে। চলবে টানা দু’সপ্তাহ। জেলাশাসক বলেন, “প্রশিক্ষণের বিষয়ে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা প্রশিক্ষক দেওয়া থেকে শুরু করে ব্যয়ভার বহনে অনেকটাই সাহায্য করছেন।” হুগলির প্রকল্প অধিকর্তা সুমি বিশ্বাস বলেন, “যাঁরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, তাঁদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার উপরেও বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। কেন না খাবারের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা খুবই জরুরি। এ বার থেকে ওই খাতের টাকা সরাসরি আর স্কুলগুলিকে দেওয়া হবে না। জেলা প্রশাসনের কর্তারাই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর থেকে যাবতীয় জিনিসপত্র কিনে স্কুলগুলিকে বিলি করবে।”

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, একমাত্র অসমেই এ যাবত্‌ মিড-ডে মিলের রন্ধন-কর্মীদের সার্বিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কর্নাটকে বিচ্ছিন্ন ভাবে প্রশিক্ষণের কিছু কাজ হয়েছে। তা বাদে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে এ পর্যন্ত প্রশিক্ষণের ব্যাপারে কোথাও কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। এ রাজ্যে হুগলি ছাড়া অন্য কোনও জেলাই এ কাজে এখনও এগিয়ে আসেনি।

মিড-ডে মিলে কেন এই পরিবর্তন?

প্রশাসনের কর্তারা জানান, স্কুল পড়ুয়া শিশুদের অপুষ্টি একটা বড় সমস্যা। শিশু বয়সেই এই সমস্যা দূর করতে হয়। তা হলে সুস্থ শিশুরাই জাতীয় জীবনে বড় ভরসা হয়ে উঠতে পারে। বিশেষত অপুষ্টিজনিত কারণে শিশুকন্যারা ভবিষ্যতে বড় বিপদে পড়ে। তাদের অনেকেই বিবাহিত জীবনে অসুস্থ সন্তানের জন্ম দেন। ফলে, পর পর দু’টি প্রজন্মই সার্বিক ভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে। তাই মিড-ডে মিলে একই রকম খাবারে যাতে শিশুদের অনীহা তৈরি না হয়, সে জন্য প্রচলিত চিন্তাভাবনার বাইরে বেরনো হচ্ছে। তা ছাড়াও, আরও একটি কারণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন প্রকল্পের স্পেশ্যাল অফিসার সুদিন মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “শিশুদের মুখরোচক খাবার দিয়ে আরও স্কুলমুখী করাও আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। এর ফলে স্কুলছুটের সংখ্যাও কমবে।”

নতুন উদ্যোগটির গুরুত্ব বোঝানোর জন্য প্রশিক্ষণে শিক্ষিকাদেরও ডাকা হচ্ছে। যাতে তাঁরা মিড-ডে-মিলের কাজকর্ম সঠিক ভাবে হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেন। প্রশিক্ষণের জন্য মুম্বই-সহ দেশের বিভিন্ন পাঁচতারা হোটেলে কাজের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রসেনজিত্‌ তরফদার এবং মনোজ দাসকে নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁদের অভিমত, দামি খাবার ছাড়া যথাযথ পুষ্টি মেলে না বলে অনেকের ধারণা। কিন্তু সেই ধারণার বাইরে এমন অনেক সব্জি (সয়াবিন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, পেঁপে) রয়েছে, যার দাম বেশি নয়, অথচ, খাদ্যগুণ প্রচুর। সে সব বিষয়েও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

স্কুলে রান্নার পদে আসছে বৈচিত্র্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE