দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাননি। তাই দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে থাকা আরামবাগের তিরোল পঞ্চায়েতের অধিকাংশ তৃণমূল সদস্যই প্রায় চার মাস ধরে পঞ্চায়েতের উন্নয়নমূলক কাজকর্মে সামিল হচ্ছেন না। চার বার ডাকা সাধারণ সভাতেও যোগ দেননি তাঁরা। ফলে, উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করা যাচ্ছে না বলে পঞ্চায়েত সূত্রেই জানানো হয়েছে। আর এই অচলাবস্থার জেরে ভুগতে হচ্ছে সাধারণ গ্রামবাসীকে। তাঁরা এ জন্য তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেই দায়ী করেছেন।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মোট ২০ জন সদস্যের মধ্যে উপপ্রধান মিঠু বাগ এবং পঞ্চায়েতের দলনেতা লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল-সহ ১২ জন অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন। কিন্তু দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের নির্দেশে সে যাত্রায় অনাস্থা প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের ডাকা বিশেষ সভায় কেউ হাজির হননি বলে ওই সদস্যেরাই জানান। নিজামুদ্দিনই প্রধান রয়ে যান। কিন্তু তাঁকে মেনে নিতে পারছেন না ওই ১২ জন। তাঁরা পঞ্চায়েতে বা সাধারণ সভায় যাচ্ছেন না।
লক্ষ্মীকান্তবাবু বলেন, “মুকুলবাবু বলেছিলেন অনাস্থার বিষয়টি নিয়ে পুজো মরসুমের পরে বসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। প্রধানকে পদত্যাগ করতে বলা হবে, না তিনি পদে থাকবেন, তা সেই বৈঠকেই চূড়ান্ত হবে। কার্তিক পুজো বাকি রয়েছে। আমরা সেই বৈঠকের অপেক্ষায় রয়েছি।”
পঞ্চায়েত সূত্রেই জানা গিয়েছে, চার মাস ধরে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে সব কাজ বন্ধ। মেরামত হচ্ছে না পানীয় জলের কল। ইন্দিরা আবাস যোজনা বা যাবতীয় ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গ্রামবাসী। ত্রয়োদশ অর্থ কমিশন এবং তৃতীয় রাজ্য অর্থ কমিশনের বরাদ্দ অর্থের যাবতীয় উন্নয়নের কাজও প্রায় স্তব্ধ। প্রতি বছর এই সময়ে আগামী আর্থিক বছরের পরিকল্পনা গ্রহণের কাজ চলে। জানুয়ারির মধ্যে সেই কাজ শেষ করার কথা। সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজও বন্ধ। এই অচলাবস্থা কাটানোর জন্য প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন ওই পঞ্চায়েতের কিছু সদস্য। গ্রামবাসীরাও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে প্রধান কাজি নিজামুদ্দিন বলেন, “পঞ্চায়েতের অচলাবস্থা সংক্রান্ত সমস্ত বিষয়টা ব্লক প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে।” আরামবাগের বিডিও প্রণব সাঙ্গুই বলেন, “বিষয়টা খতিয়ে দেখে আইনানুগ পদক্ষেপ করা হবে।”
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পরপর তিন বার পঞ্চায়েতের সাধারণ সভায় সদস্যেরা হাজির না হলে তাঁদের সদস্যপদ বাতিলের মতো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সংস্থান রয়েছে। পঞ্চায়েতের নিয়ম অনুযায়ী, সাধারণ সভায় সদস্যদের এক-তৃতীয়াংশ হাজির না থাকলে সেই সভা বৈধ নয়। পঞ্চায়েত এলাকার সংসদগুলির যাবতীয় কাজ ও তার জন্য বরাদ্দ এবং ব্যয় অনুমোদনের ক্ষমতা একমাত্র প্রতি মাসে সাধারণ সভাতেই হয়।
ওই পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণ সভায় উপস্থিতির জন্য সদস্যদের আইন মোতাবেক রেজিস্ট্রি চিঠি পাঠানোর পরেও তাঁরা গত তিনবার চিঠি নিতে অস্বীকার করেন এবং হাজিরও হননি। চতুর্থবারও চিঠি নিতে অস্বীকার করায় তাঁদের বাড়ির দেওয়ালে বা দরজায় তা লটকে দেওয়া হয়। তাতেও সেই ১২ জন হাজির হননি। গত বুধবার চতুর্থবারের সাধারণ সভায় পঞ্চায়েত সমিতির তিন সদস্যের মধ্যে দু’জন হাজির হওয়ায় মোট ১০ জনকে নিয়ে হওয়া সভাটি বৈধতা পেলেও কোনও পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy