কচুরিপানায় মুখ ঢেকেছে গুজারপুর খাল।
জেলার অন্যতম পুরনো শহর। পা বাড়িয়ে রয়েছে পুরসভা হওয়ার পথে। এক সময়ে মহকুমা ঘোষণা করারও কথা হয়েছিল। রয়েছে আদালত, মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর এবং মহকুমা গ্রন্থাগার। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শহর বেড়েছে দ্রুত লয়ে। মাঠের উপরে উঠছে বহুতল। ক্রমশ কায়েম হয়েছে প্রোমোটাররাজ। এ সবই আধুনিক শহরের অনুষঙ্গ বলে বিভিন্ন মহলে ধরে নেওয়া হলেও আমতার আধুনিকতার সেই মুখোশ খসে পড়ে বর্ষাকালে। সামান্য বৃষ্টিতে ভাসে বাড়ির উঠোন। জলে ডোবে রাস্তা। শহরের আধুনিক রূপ নিমেষে বদলে যায় এঁদো গ্রামে।
অভিযোগ, শহর প্রসারিত হলেও জমা জল কোথা থেকে বেরোবে তা নিয়ে কোনও চিন্তাভাবনা করেননি প্রশাসনের কর্তারা। আমতা শহরের চারিদিকে এক সময়ে ছিল ফাঁকা মাঠ ও পুকুর। সব জল সেই সব মাঠ ও পুকুরেই গিয়ে পড়ত। আর তার ভরসাতেই প্রশাসন নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়নি বলে জানান বাসিন্দারা।
শহরে নেই কোনও পয়ঃপ্রণালী। শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে দামোদর। হাওড়ায় দামোদরকে নিকাশির প্রয়োজনেই মূলত ব্যবহার করে ডিভিসি। অথচ এর ঢিল ছোড়া দূরের আমতা শহরের জল নিকাশির জন্য এই নদীকে ব্যবহার করা হয় না। পাশেই রয়েছে গুজারপুর খাল। খালের উত্স হুগলি নদী থেকে প্রবাহিত বনস্পতি খাল। কিন্তু গুজারপুর খালের সঙ্গেও সংযোগকারী কোনও নিকাশি নালা তৈরি করা হয়নি এতদিনে। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। বর্ষায় হাবুডুবু খায় শহর।
পয়ঃপ্রণালী না থাকলেও নিকাশি নালা যে একেবারে নেই তা নয়। মেলাইচণ্ডী মন্দিরের কাছ থেকে বিডিও অফিসের সামনে দিয়ে গ্রামীণ হাসপাতাল পর্যন্ত একটি নালা রয়েছে। বাসিন্দারা জানালেন নালাটি করা হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে। প্রায় ৫০০ মিটার দৈর্ঘের এই নালার মাধ্যমে শহরের জল বেরিয়ে এলাকার একটি মাঠে পড়ত। শহরে এ রকমই দু’একটি নালা রয়েছে মান্ধাতা আমলের।
কিন্তু শহর যত বেড়েছে ততই কংক্রিটের জঙ্গলে ভরে গিয়েছে মাঠগুলি। আর নালার মুখ খোলা থাকায় তাতে নাগাড়ে আবর্জনা পড়ে নিকাশির ক্ষমতা হারিয়েছে। ফলে বর্ষায় শহরের বিভিন্ন এলাকায় জল জমে যায়। মেলাইচণ্ডী মন্দির থেকে গ্রামীণ হাসপাতাল পর্যন্ত নিকাশি নালায় দেখা গেল জঞ্জালের স্তূপ। তবে বাজারের কাছে এই নালার বেশ কিছুটা কংক্রিটের স্ল্যাব দিয়ে ঢাকা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, জঞ্জাল যাতে না পড়ে সে জন্য তাঁরা নিজেরাই টাকা খরচ করে নালার মুখ কংক্রিটের স্ল্যাব দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন। তাতেও অবশ্য সমস্যা মেটেনি। স্থানীয় ব্যবসায়ী কেশব খান বলেন, “বর্ষার সময় এখানে হাঁটুজল জমে যায়। অনেক সময় আমরাই নালা পরিষ্কার করি। কিন্তু যেখানে খোলামুখ সেখানে জঞ্জাল অগাধ। ফল লাভ হয় না।”
আবর্জনায় বুজে গিয়েছে নিকাশি নালা।
বাসিন্দাদের বক্তব্য, মেলাইচণ্ডী মন্দির থেকে আমতা-১ বিডিও অফিসের সামনে দিয়ে যে নালা বেরিয়েছে তা আরও দীর্ঘ করতে হবে। এটিকে নিয়ে যেতে হবে মেলাইমণ্ডী মন্দির থেকে আরও পিছনে সিনেমাতলা মোড় পর্যন্ত। অন্য দিকে গ্রামীণ হাসপাতাল পর্যন্ত বিস্তৃত এই নিকাশি নালাকে আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়ে জুড়তে হবে গুজারপুর খালের সঙ্গে। গুজারপুর খালের জল পড়ে কান্দুয়া বেসিনে। শহরের জমা জলকেও এই ভাবে কান্দুয়া বেসিনে ফেলা যাবে। এ ছাড়া দামোদরের যে সব নিকাশি খালগুলি রয়েছে সেগুলিকে সংস্কার করে পয়ঃপ্রণালীর মাধ্যমে শহরের জমা জল সেইসব খালে ফেলতে হবে। তবেই এই শহরকে বর্ষাকালে জল জমার হাত থেকে বাঁচানো যাবে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, এক দিকে শহরে যেমন পর্যাপ্ত নিকাশি নালা নেই, অন্য দিকে দামোদর থেকে যে খালগুলি বেরিয়েছে সেগুলি নিয়মিত সংস্কার হয় না। সংস্কার হয় না গুজারপুর খালেরও। গুজারপুর খালে গিয়ে দেখা গেল জঞ্জাল ও পানায় তা মুখ ঢেকেছে। কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক আফতাবউদ্দিন মণ্ডল বলেন, “১৯৭২-’৭৭ পর্যন্ত আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম তখন গুজারপুর-সহ বিভিন্ন খাল সংস্কারের পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু পরে আমরা সরকার থেকে চলে যাই। তার পর থেকে সব বন্ধ।” সিপিএমের অবশ্য দাবি, বামফ্রন্ট সরকারের আমলেও গুজারপুর-সহ বিভিন্ন খাল সংস্কার করা হয়েছে। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ সেই কাজ ছিল অসম্পূর্ণ। তাতে সমস্যা বেড়েছে বই কমেনি। বর্তমানে আমতা ১ পঞ্চায়েত সমিতিতে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি প্রিয়া পাঁজা শহরের নিকাশি ব্যবস্থার বেহাল ছবির কথা স্বীকার করেও বলেন, “এ সব নিয়ে আমাদের আপাতত কোনও পরিকল্পনা নেই। তেমন কিছু হলে আপনাদের জানাব।”
তবে শহরের নিকাশি-সহ বিভিন্ন খালের সংস্কার নিয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি হচ্ছে বলে দাবি করেন এলাকাটি যে বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন সেই উলুবেড়িয়া উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাজি। তাঁর কথায়, “আমতা শহরের লাগোয়া গ্রামাঞ্চল। এখানে নিকাশি যেমন দেখতে হবে তেমনই নজর দিতে হবে চাষের কাজের উপরেও। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৯ জন বিজ্ঞানীর একটি দলকে আমরা এই এলাকায় এনেছিলাম। তাঁরা এলাকা পরিদর্শন করেছেন। শহর ও গ্রাম দুইয়েরই উপযোগী হবে এমন পরিকল্পনা কী ভাবে করা যাবে সে বিষয়ে রিপোর্ট দেবেন তাঁরা। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি হবে বিভিন্ন দফতরের সমন্বয়ে।”
(শেষ)
ছবি: সুব্রত জানা।
কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। subject-এ লিখুন ‘আমার শহর আমতা’।
ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান: www.facebook.com/anandabazar.abp
অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, হাওড়া ও হুগলি বিভাগ, জেলা দফতর,
আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy