সংস্কারের অপেক্ষায়। সিংটিতে তোলা সুব্রত জানার ছবি।
ন’বছরেও প্রয়োজনীয় জমির ব্যবস্থা হয়নি। ফলে, হুগলির খানাকুল থেকে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের রাজাপুর পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার পাকা রাস্তা তৈরির প্রকল্পটি আপাতত বিশ বাঁও জলে। অথচ, প্রস্তাবিত রাস্তাটিকে দুই জেলার অন্যতম ‘করিডর’ হিসেবে চিহ্নিত করে পূর্ত (সড়ক) দফতর। রাস্তাটি তৈরি হলে ওই দুই এলাকার বাসিন্দা তো উপকৃত হতেনই, পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের বাসিন্দারাও এর সুবিধা পেতেন। ঘাটাল থেকে হাওড়া তথা কলকাতায় আসার জন্য অন্তত ৪৫ কিলোমিটার দূরত্ব কমত। পাশাপাশি, খানাকুল থেকে হাওড়া তথা কলকাতায় আসার দৈর্ঘ্য কমত প্রায় ৮৫ কিলোমিটার।
এত দিনেও কেন জমি মিলল না?
এ ক্ষেত্রেও পূর্ত (সড়ক) দফতরের কর্তাদের একাংশ মেনে নিয়েছেন বর্তমান সরকারের জমি-নীতির জন্যই প্রকল্পটি কার্যত হিমঘরে চলে গিয়েছে। ওই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৬ সালে প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার পরে যে প্রাথমিক সমীক্ষা রিপোর্ট তৈরি করা হয়, তাতে দেখা যায় মোট ১২১ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে প্রস্তাবিত রাস্তার জন্য। এ জন্য খরচ ধরা হয় ৯১ কোটি টাকা। ওই রিপোর্ট ২০১১ সালের গোড়ায় অনুমোদনের জন্য রাজ্য পরিকল্পনা কমিটিতে পাঠানো হয়। কিন্তু ওই কমিটি পাল্টা পূর্ত (সড়ক) দফতরকে জানিয়ে দেয় জমি কী ভাবে অধিগ্রহণ করা হবে বা কতটা জমি ইতিমধ্যেই অধিগ্রহণ করা হয়েছে সে বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট জমা দিতে হবে। ওই বছরেই বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট সরকার হেরে যায়। ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। এই সরকারের আমলে আর প্রকল্পটি নিয়ে বিশেষ তৎপরতা দেখা যায়নি।
দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, বর্তমান সরকারের নীতি অনুযায়ী কোনও প্রকল্পের জন্য জোর করে জমি নেওয়া যাবে না। স্বেচ্ছায় যদি গ্রামবাসীরা জমি দিতে চান, তা হলে তা নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এত বিশাল পরিমাণ জমি স্বেচ্ছায় কে দেবেন? ফলে প্রকল্পটি রূপায়ণ থেকে পিছিয়ে আসা হয়। সংশ্লিষ্ট এলাকার নেতা বা বিধায়কেরাও সে ভাবে প্রকল্পটি নিয়ে সরকারের কাছে তদ্বির করেননি বলে অভিযোগ তুলেছেন দফতরের আধিকারিকদের একাংশ।
রাস্তাটি না হওয়ার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ যাতায়াতে সমস্যায় পড়ছেন। খানাকুল এবং উদয়নারায়ণপুর এই দু’টি এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে অনুরোধ পেয়ে ২০০৬ সালে রাজ্যের তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী ওই ‘করিডর’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। খানাকুল থেকে ধাড়াশিমুল পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার অংশ ছিল হুগলি জেলা পরিষদের হাতে। অন্য দিকে ধাড়াশিমুল থেকে উদয়নারায়ণপুরের পাঁচারুল হয়ে রাজাপুর পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার ছিল হাওড়া জেলা পরিষদের হাতে। দুই জেলা পরিষদ আলাদা আলাদা ভাবে তাদের অংশের রাস্তা সংস্কার করত। ২০০৬ সালে তৎকালীন বাম সরকার ‘করিডর’টি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে দু’টি জেলা পরিষদই জেলা পরিকল্পনা কমিটির বৈঠকে তাদের রাস্তার অংশ রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতরের হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
রাস্তা হাতে পাওয়ার পরে সমীক্ষার কাজ শুরু করে ওই দফতর। ঠিক হয়, প্রস্তাবিত রাস্তাটি তৈরি হবে হুগলির খানাকুল, লাউসর, কাবিলপুর, গৌরাঙ্গচক, ধাড়াশিমুল থেকে হাওড়ার পাঁচারুল, সিংটি হয়ে রাজাপুর পর্যন্ত। রাস্তাটি তৈরি হয়ে গেলে রাজাপুর থেকে সরাসরি উদয়নারায়ণপুর-হাওড়া সড়ক ধরে হাওড়া এবং কলকাতায় অনেক সহজে যাওয়া যেত। বর্তমানে খানাকুলের মানুষ হাওড়া ও কলকাতায় যাতায়াত করেন আরামবাগ, পুড়শুড়া, চাঁপাডাঙা, শিয়াখালা, মশাট ও চণ্ডীতলা হয়ে। এতে অনেকটা রাস্তা তাঁদের পাড়ি দিতে হয়। শুধু তাই নয়, রাস্তা তৈরি হলে ঘাটালের বাসিন্দারাও গড়েরঘাট হয়ে খানাকুলে এসে সহজে হাওড়া ও কলকাতায় যেতে পারতেন। বর্তমানে ঘাটালের বাসিন্দারা পাঁশকুড়া হয়ে কলকাতায় যাতায়াত করেন। উল্টো দিকে উদয়নারায়ণপুরের মানুষ খুব কম সময়ে খানাকুল এবং ঘাটাল হয়ে মেদিনীপুরে যাতায়াত করতে পারতেন। কিন্তু তা না হওয়ায় গোটা সড়কটিই বর্তমানে বেহাল। যাতায়াতে নাভিশ্বাস ওঠে সাধারণ মানুষের।
বাম আমলে মূলত যাঁদের উদ্যোগে ওই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিল, উদয়নারায়ণপুরের আরএসপি নেতা রবীন্দ্রনাথ সামুই কিংবা খানাকুলের আরাণ্ডি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সিপিএম প্রধান নিরঞ্জন রং গোটা পরিস্থিতিতে পুরোপুরি হতাশ। তাঁদের বক্তব্য, “এই রাস্তাটি তৈরি হওয়া খুব দরকার। এ জন্য প্রয়োজন হলে ফের আন্দোলনে নামব।”
তবে, উদয়নারায়ণপুরের তৃণমূল বিধায়ক সমীর পাঁজা অবশ্য বলেন, “জোর করে জমি না নিয়ে মানুষকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তা দেওয়ার আবেদন জানিয়ে প্রকল্পটির কাজ কী ভাবে করা যায় সে বিষয়ে চেষ্টা করছি।” রাস্তার প্রসঙ্গটি তোলামাত্র পুড়শুড়ার তৃণমূল বিধায়ক পারভেজ রহমান ফোন কেটে দেন। পরে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি আর ধরেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy