ছবি: মোহন দাস।
আয় বাড়াতে এ বার আমবাগান তৈরি করবে পঞ্চায়েত। হুগলির আরামবাগ ব্লকের সমস্ত পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে উদ্যানপালন দফতরের সঙ্গে যৌথভাবে এই কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আরামবাগের বিডিও প্রণব সাঙ্গুইয়ের উদ্যোগে এই কাজের জন্য ব্লকের ১৫টি পঞ্চায়েতে জমি চিহ্নিতকরণের কাজও প্রায় শেষ। ইতিমধ্যেই মায়াপুর-১ পঞ্চায়েতের হাটবসন্তপুরে এক একর জায়গায় ৪০০ আম চারা লাগানোহয়েছে।
পঞ্চয়েত সূত্রে খবর, গাছ লাগানো এবং পরিচর্যার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে। বিডিও বলেন, “নিজস্ব তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতগুলিকে মজবুত করতেই এই পন্থা বাছা হয়েছে। পাশাপাশি এর ফলে কর্মদিবসও সৃষ্টি করা হচ্ছে। একইসঙ্গে পঞ্চায়েত সমিতিও এই কাজে সামিল হওয়ায় তাদের তহবিলও পুষ্ট হবে। ব্লক প্রশাসনের তরফে সিদ্ধান্ত হয়েছে আমবাগান থেকে আয়ের ৪০ শতাংশ পাবে পঞ্চায়েত, ৩০ শতাংশ পাবে স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং ৩০ শতাংশ যাবে পঞ্চায়েত সমিতির তহবিলে। পঞ্চায়েতকে আমের চারা দিচ্ছে উদ্যানপালন দফতর। আমবাগান করার কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পঞ্চায়েতগুলির নিজস্ব তহবিল মজবুত করার এই প্রক্রিয়ায় আশার আলো দেখছে জেলা প্রশাসন।
মায়াপুর-১ পঞ্চায়েতের প্রধান তুষারকান্তি দাস বলেন, “পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিলের অভাবে অনেক দায়-দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হয়ে উঠে না। ব্লক প্রশাসনের এ হেন উদ্যোগে আগামী দিনে পঞ্চায়েতগুলির আর্থিক সমস্যার কিছুটা সুরাহা হবে।” তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যেই মায়াপুর-১ পঞ্চায়েত এলাকার হাটবসন্তপুরে এক একর জায়গায় ৪০০ আম চারা লাগানোর কাজ শেষ হয়েছে। সেইসঙ্গে মুথাডাঙায় আরও একটি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে আমবাগানের জন্য। প্রসঙ্গত, হাটবসন্তপুরের আমবাগান প্রকল্পটি ছিল প্রায় দেড় লক্ষ টাকার। ওই কর্মসূচি রূপায়ণে মোট শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে ৬৪৭টি। অদক্ষ শ্রমিকের মজুরি বাবদ খরচ হয়েছে ১ লক্ষ ৯হাজার ৩৪৩টাকা।
বাতানল পঞ্চায়েতের প্রধান স্বপন সাধুখাঁ বলেন, “পঞ্চায়েত স্বশক্তিকরণের লক্ষ্যে ব্লক প্রশাসনের এই উদ্যোগ আমাদের উৎসাহিত করেছে। যদি আমবাগানের জন্য জমি নাও পাওয়া যায়, তবু নিজস্ব তহবিল সংগ্রহের অন্যান্য উপায় খোঁজার চেষ্টা করছি আমরা।”
আমবাগানের জন্য তাঁরা জমি খোঁজ শুরু করে দিয়েছেন বলে জানালেন আরান্ডি-২ পঞ্চায়েতের প্রধান বাসুদেব মালিক, সালেপুর-২ পঞ্চায়েত প্রধান ময়না দাস, গৌরহাটি-১-এর প্রধান শেখ সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ। আরান্ডি-১ পঞ্চায়েতের প্রধান আকলিমা বেগম বলেন, “প্রাথমিক ভাবে জমি দেখার কাজ হয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু করা হবে।”
আরামবাগ ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, সরকারি মুখাপেক্ষী না হয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে বহুদিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। কিন্তু পঞ্চায়েতগুলির কাছে নিজস্ব তহবিল তৈরির মূল ক্ষেত্র বলতে ভূমি ও গৃহকর আদায়। এ ছাড়া পুকুর ইজারা দেওয়া, টোল ও লেভি আদায় বাবাদ আয়। যদিও আয়ের উৎস হিসাবে সরকারি নির্দেশিকায় বিস্তর তালিকা থাকলেও স্থানীয় সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেই ঝুঁকি নেননা প্রধানরা।
সরকারি নিয়মে পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিলের কমপক্ষে ৫০ শতাংশ অর্থ এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে খরচ করতে হবে। কিন্তু পঞ্চায়েতগুলি নিজেদের অফিস পরিচালনা খাতে ব্যয় করার পর উন্নয়ন খাতে ব্যয়ের বিশেষ কিছু অবশিষ্ট থাকে না বললেই চলে। ফলে এলাকার নলকূপ মেরামত, স্কুল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠানোর উন্নয়ন ইত্যাদি প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সরকারি তহবিলের অপেক্ষায় থাকতে হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy