Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
খানাকুল-২ পঞ্চায়েত সমিতি

পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ও সভাপতির বিরোধে স্তব্ধ উন্নয়নের কাজ

একে বর্ষার মরসুম। অন্য বার এই সময় নদীবাঁধ, সাঁকো মেরামতি বা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলে ‘অতি বন্যাপ্রবণ’ বলে চিহ্নিত খানাকুল-২ ব্লকে। কিন্তু এ বার তৃণমূল পরিচালিত ওই পঞ্চায়েত সমিতিতে সভাপতি ও পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে মাস দেড়েক ধরে উন্নয়নের কাজ স্তব্ধ বলে অভিযোগ তুলেছেন গ্রামবাসীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খানাকুল শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৪ ০২:১০
Share: Save:

একে বর্ষার মরসুম। অন্য বার এই সময় নদীবাঁধ, সাঁকো মেরামতি বা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলে ‘অতি বন্যাপ্রবণ’ বলে চিহ্নিত খানাকুল-২ ব্লকে। কিন্তু এ বার তৃণমূল পরিচালিত ওই পঞ্চায়েত সমিতিতে সভাপতি ও পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে মাস দেড়েক ধরে উন্নয়নের কাজ স্তব্ধ বলে অভিযোগ তুলেছেন গ্রামবাসীরা। সমিতিতে আসছেন না সভাপতি অসিত সিংহরায়। পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নজিবুল করিমের বিরুদ্ধে হেনস্থারর অভিযোগ তুলে তিনি বিধায়ক-সহ দলের জেলা নেতৃত্বের দ্বারস্থ হয়েছেন। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন নজিবুল।

আরামবাগের মহকুমাশাসক প্রতুলকুমার বসু অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, “এলাকার উন্নয়ন যাতে ব্যাহত না হয় সে বিষয়ে আমরা সচেতন আছি।”

কিন্তু এই আশ্বাসে গ্রামবাসীরা নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না। কেননা, পুজোর আগে অতিবৃষ্টি হলে বা ডিভিসি জল ছাড়লে প্রতিবারই বন্যার আশঙ্কায় থাকেন ওই পঞ্চায়েত সমিতির ১১টি পঞ্চায়েতের কয়েক হাজার বাসিন্দা। সমিতির পক্ষ থেকে বিপর্যয় মোকাবিলায় নদীবাঁধ, সাঁকো, রাস্তাঘাট-সহ ত্রাণশিবিরগুলির মেরামতি ও রক্ষণাবেক্ষণও চলে। পানীয় জলেরও আলাদা ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু এ বার সেই কাজ এখনও সে ভাবে শুরু না হওয়ায় চিন্তিত গ্রামবাসীরা। পলাশপাই পঞ্চায়েতের রতন মণ্ডল বা মাড়োখানা পঞ্চায়েতের বিভাস হাজরা বলেন, “বিপর্যয় মোকাবিলার কাজ তো কিছুই হচ্ছে না, বেহাল স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিরও মেরামতি হচ্ছে না।” ধলডাঙ্গা গ্রামের নিমাই পাল বলেন, “নদীনালায় ঘেরা গ্রামগুলির ছোট সাঁকোগুলি পঞ্চায়েত দেখভাল করলেও, বড়গুলি পঞ্চায়েত সমিতি মেরামত করে। সেই মেরামতির কাজও শুরু হয়নি। টানা দু’দিন বৃষ্টি হলেই গ্রামগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। বন্যা হলে তো কথাই নেই।”

কিন্তু সমিতির দুই পদাধিকারীর দ্বন্দ্বের জেরে কেন উন্নয়নের কাজ স্তব্ধ?

ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, ত্রয়োদশ অর্থ কমিশন, তৃতীয় রাজ্য অর্থ কমিশনের বরাদ্দ করা অর্থে সমিতি এলাকায় পরিষেবামূলক কাজগুলি করে। ‘অর্থ-সংস্থা-উন্নয়ন ও পরিকল্পনা’র স্থায়ী সমিতির বৈঠকগুলির আহ্বায়ক সভাপতি। সমিতির সর্বোচ্চ পদাধিকারী হিসেবে সিদ্ধান্তগুলি তিনিই অনুমোদন করেন। প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সেই বৈঠক হওয়ার নিয়ম। সভাপতির ছুটি, অসুস্থতা বা পদত্যাগের কারণে সহ-সভাপতি সব ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সভাপতি বৈধ প্রক্রিয়ায় ছুটি নেননি বা প্রশাসনকে অনুপস্থিতির কারণও জানাননি। ফলে, সভাপতির দায়িত্বভার সহ-সভাপতিকে হস্তান্তর করা যায়নি।

মহকুমাশাসক জানিয়েছেন, গরহাজিরার বিষয়টি সভাপতির কাছে জানতে চাওয়া হবে। প্রয়োজনে পদক্ষেপ করা হবে। সভাপতি বলেন, “পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নানা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছেন। দুর্নীতি ও অনিয়ম করে কাজের পরিবেশ নষ্ট করছেন। বিধায়ককে শৃঙ্খলা রক্ষা করতে কমিটি গঠন করার অনুরোধ জানিয়েছি। না হলে আমাকে সরিয়ে দেওয়ারও আর্জি জানিয়েছি। সিদ্ধান্তের পরেই সরকারি ভাবে প্রশাসনকে জানাব।”

তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, বেশ কিছু দিন ধরেই ওই এলাকায় দলের অন্দরে গোলমালের জেরে ব্যাহত হচ্ছে উন্নয়ন। গত ৯ জুলাই ১১টি পঞ্চায়েতের প্রধান এবং কিছু সদস্য নিরাপত্তার দাবিতে বিডিওর কাছে স্মারকলিপি দেন। সেই স্মারকলিপিতে নজিবুলের অনুগামীদের বিরুদ্ধে অশান্তি ও সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ তোলা হয়েছিল। এই স্মারকলিপি দেওয়াকে কেন্দ্র করে সে দিনও গোলমাল হয় ব্লক অফিস চত্বরে। সভাপতির অভিযোগ, “প্রধানদের স্মারকলিপির ব্যবস্থা আমি করেছি, এই অভিযোগ তুলে নজিবুল আমার প্রতি কটূক্তি করে, হেনস্থা করে। ওঁর জন্য কাজ করা যাচ্ছে না।” অভিযোগ উড়িয়ে নজিবুল দাবি করেন, “বিভিন্ন জায়গায় অন্যায়ের প্রতিবাদ করাতেই আমার বিরুদ্ধে ক্ষোভ। সভাপতিকে হেনস্থা বা কটূক্তি করা হয়নি।” খানাকুলের তৃণমূল বিধায়ক ইকবাল আহমেদ জানান, সমস্যা মিটিয়ে ফেলা হবে। উন্নয়নে বিঘ্ন বরদাস্ত করা হবে না। একই আশ্বাস দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্তও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

southbengal khanakul development work stopped
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE